ডুব ডুব ডুব। সারেঙ্গার নারায়ণপুরে মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
ঠান্ডা বাতাসের সঙ্গী হয়ে এসেছিল বৃষ্টি। এক ঝটকায় পারদ কিছুটা নামিয়ে সোমবার বাঁকুড়ায় মিলেছিল স্বস্তি। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল হতেই সে সব উধাও। সকাল থেকেই চড়া রোদ। বেলা যত বেড়েছে উত্তাপ ছড়িয়ে ততই। বাতাসেও আগুনের হলকা। ফলে বৃষ্টিতে কাটল না বাঁকুড়ার হাঁসফাঁস অবস্থা।
গরমের জন্য সরকারি স্কুল, কলেজে ছাত্রছাত্রীদের ছুটি থাকলেও জেলার অধিকাংশ বেসরকারি নার্সারি স্কুল, পাবলিক স্কুল খোলা ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার অধিকাংশ নার্সারি স্কুলগুলিতে এখন ক্লাসের পরীক্ষা চলছে। স্কুল সকালে চললেও, ফেরার পথে গরমে কাহিল খুদে পড়ুয়ারা। পাত্রসায়রের একটি বেসরকারি স্কুলের এক শিক্ষক জানিয়েছেন, বার্ষিক সেমিস্টারের পরীক্ষা পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী নেওয়া হচ্ছে। এপ্রিল মাসের প্রথমেই এই পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু এ বার ভোটের জন্য পরীক্ষা কিছুটা পিছিয়ে দিতে হয়েছে। এখন পরীক্ষা না নিলে পরে অসুবিধা হবে ভেবেই পরীক্ষা আর পিছিয়ে দেওয়া যায়নি। ওই শিক্ষক জানান, গরমের জন্য খুদে পড়ুয়াদের যে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে এটা সত্যি। কিন্তু উপায় নেই। এক অভিভাবকের কথায়, “গরমের জন্য বাচ্চারা ঠিকমতো পরীক্ষা দিতে পারছে না। কিন্তু পরীক্ষা না দিলে অসুবিধা হবে ভেবেই সাত সকালেই স্কুলে নিয়ে আসতে হচ্ছে। গরমে আমাদেরই এত কষ্ট হচ্ছে। বাচ্চাদের কষ্ট আরও বেশি। অনেকে কান্নাকাটিও করছে।”
এ দিকে, বেলার দিকে ১০টার পর থেকেই রাস্তাঘাটের ভিড় পাতলা হতে শুরু করেছে। অফিস টাইমের ব্যস্ত সময়টুকু ছাড়া বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, খাতড়া শহরের অধিকাংশ ব্যস্ত রাস্তাই সুনসান ছিল। যাঁরা নিতান্ত প্রয়োজনে রাস্তায় বেরিয়েছেন গাড়ি ধরার জন্য বা অন্য কোন কাজে, তাঁরাও মুখে রুমাল, মাথায় তোয়ালে ঢাকা দিয়ে যাতায়াত করেছেন। আর দোকানদারেরা কার্যত শুকনো মুখে হাপিত্যেশ করে চেয়ারে বা গদিতে হেলান দিয়ে নিছক সময় কাটিয়েছেন।
বাঁকুড়া শহরের মাচানতলা মোড়, গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, নতুনচটি, নতুনগঞ্জ, কেরানিবাঁধ, তামলিবাঁধ, সতীঘাট, কাটজুড়িডাঙা-সহ শহরের অধিকাংশ এলাকায় এ দিনের ছবিটা ছিল এ রকমই। একই ছবি দেখা গিয়েছে বিষ্ণুপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, চকবাজার, বাইপাস মোড়, খাতড়ার করালীমোড়, পাম্পমোড়, দাসেরমোড়, কংসাবতী রোড, পুরাতন বাজার থেকে রাজাপাড়া মোড়— সর্বত্র।
বাস-ট্রেনেও গরমের জন্য ক’দিন ধরেই যাত্রী কম হচ্ছে। দুপুরের দিকে অনেক বাসের সিট ছিল ফাঁকা। হাতেগোনা ১০-১২ জন যাত্রী নিয়ে বাস চলেছে। যাত্রী না থাকায় হতাশ বাসকর্মীরাও। রিকশা, অটো বা টোটো নিয়ে পথে নামা লোকজনও হতাশ। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘গরমে বাইরে থাকতে আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ভাড়ার আশায় ঠায় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কিন্তু লোকজনের দেখাই তো মিলছে না।’’
গরম থেকে বাঁচতে জেলার মানুষ চাইছেন এ বার আসুক কালবৈশাখী। হোক ভারী বৃষ্টি। চাতক পাখির মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে তাই রাজ্যের উষ্ণতম জেলা বাঁকুড়া। আবহাওয়া দফতর অবশ্য আশার বাণী কিছু শোনাতে পারেনি।