বিষ্ণুপুরে সোমবার। নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুজোর মাঝেও দফায় দফায় তাল কেটেছে বৃষ্টিতে। পুজোর পরেও রেহাই নেই। সোমবার থেকেই পুজোর ছুটি কাটিয়ে পুরোদমে সচল হল জনজীবন। আর এ দিন সকাল থেকেই জেলার আকাশ জুড়ে নিম্নচাপের ঘন কালো মেঘ। বিক্ষপ্ত ভাবে জেলা জুড়েই কখনও ভারী, কখনও ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে নাজেহাল হলেন সাধারণ মানুষ।
জ্বরের দাপাদাপি
কখনও ঠান্ডা, কখনও গরম। আবহাওয়ার এই খামখেয়ালিপনায় জেলাবাসী কাবু ভাইরাল জ্বরে। সরকারি হাসপাতাল আর স্বাস্থ্যকেন্দ্র তো বটেই, চিকিৎসকদের চেম্বারেও রোগীদের লম্বা লাইন পড়ছে। বাঁকুড়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূণকুমার দাস বলেন, “ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ভাইরাল জ্বর নিয়ে আসা রোগীদের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।” বাঁকুড়া মেডিক্যালের আউটডোরেও জ্বর নিয়ে অনেকেই আসছেন বলে জানিয়েছেন সুপার শুভেন্দুবিকাশ সাহা। বড়জোড়ার বাসিন্দা বিকাশ মান বলেন, “পুজোর সময় থেকেই বৃষ্টি লেগে রয়েছে। ঠান্ডা গরমে পড়ে আমার স্ত্রী ও ছেলে দু’জনেই ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। বাড়ির অন্যরাও কমবেশি ভুগছে।”
জমল না ব্যবসা
বাঁকুড়া শহরে এ দিন সকালে এক দফা বৃষ্টি হয়ে থেমে গেলেও দিনভর আকাশে ছিল মেঘের ঘনঘটনা। অন্যদিকে, জেলার আরেক পুরশহর বিষ্ণুপুরে দিনভর বৃষ্টি লেগেই ছিল। দুই পুরশহরেই রাস্তায় লোকজন তেমন একটা ছিল না। বাঁকুড়ার সুভাষরোড এলাকার রকমারি জিনিসপত্রের ব্যবসায়ী কাশীনাথ কুণ্ডুর আক্ষেপ, “এই আবহাওয়ায় সকাল থেকেই বাজার ফাঁকা। সরকারি ছুটি কাটিয়ে আজ থেকেই সব অফিস কাছারি খুলল। এই সব দিনে রাস্তাঘাটে ভিড় থাকে। এ দিন সেই ছন্দটাই ছিল না।” বিষ্ণুপুরের স্টেশন মোড় এলাকার ইলেক্ট্রনিক জিনিসপত্রের ব্যবসায়ী দেবদাস লায়েক বলেন, “সপ্তাহের কাজের দিনগুলিতে ক্রেতার ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু এ দিন বৃষ্টির জন্য ব্যবসা একেবারেই জমেনি। বিশেষ দরকার ছাড়া কেউ বাড়ি থেকেই বেরোননি।” বাঁকুড়ার স্কুলডাঙা এলাকার বধূ চন্দ্রানী মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কে বলবে শরত? মনে হচ্ছে যেন পুরোদস্তুর বর্ষাকাল চলছে।”
চাষের লাভক্ষতি
জেলায় অল্প অল্প করে উঠেতে শুরু করেছে আউশ ধান। ইতিমধ্যেই অনেকে ধান কেটে মাঠে ফেলে রাখা শুরু করেছেন। টানা বৃষ্টির জেরে মাঠে কেটে ফেলে রাখা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির জেরে শীতকালীন আনাজে রোগ পোকার আক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানাচ্ছে জেলা কৃষি দফতর। তবে এখনও বৃষ্টিতে ধান বা আনাজের ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট দফতরে আসেনি বলেই জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, সেচ এলাকায় আমনধানের ক্ষেত্রে এই বৃষ্টি লাভদায়ক বলে দাবি করেছেন কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা। বাঁকুড়ার উপ-কৃষিঅধিকর্তা (প্রশাসন) আশিসকুমার বেরা বলেন, “এই নিম্নচাপের মিশ্র প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে জেলার চাষআবাদে। এখনও পর্যন্ত কোনও খারাপ রিপোর্ট আমরা পাইনি। তবে যত দ্রুত নিম্নচাপ কাটে ততই ভালো।”
চিন্তায় মৃৎশিল্পীরা
হাতে গোনা ক’টা দিন পরেই কালীপুজো। কাজ শেষ করার তাড়ায় মৃৎশিল্পীদের এখন নিশ্বাস ফেলার সময় নেই। এরই মাঝে বৃষ্টি চিন্তায় ফেলেছে তাঁদের। বাঁকুড়ার যুগীপাড়ার মৃৎশিল্পী স্বরূপ কুণ্ডু এবার ১৬টি কালী মুর্তি গড়ার বরাত পেয়েছেন। বৃষ্টির জন্য তাঁর কাজ চলছে ঢিমে তালে। স্বরূপবাবু বলেন, “খুবই চিন্তায় পড়েছি। প্রতিমা শোকাতে চাই চড়া রোদ। এ দিকে পুজোর পরে প্রতিদিনই বৃষ্টি লেগে রয়েছে। এখন তো আবার নিম্নচাপ শুরু হয়ে গেল। সময় মতো কাজ শেষ করতে পারা নিয়েই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।”
কত দিনে কাটে এই নিম্নচাপ, এই প্রশ্নই এখন সবার।