অবরোধেই থমকে, ধরা হল না উড়ান

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, অবরোধের ফলে ডাউন লাইনে বাঁশলৈ স্টেশনে আটকে যায় হাওড়াগামী শতাব্দী এক্সপ্রেস। রাজগ্রাম স্টেশনে দাঁড়িয়ে পড়ে একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। অন্য দিকে চাতরা স্টেশনে আটকে পরে ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস। দুপুর পৌনে দুটো নাগাদ অবরোধ উঠে গেল ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হল।

Advertisement

তন্ময় দত্ত  

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:১৯
Share:

থমকে: মুরারই স্টেশনে দাঁড়িেয় আছে ট্রেন। নিজস্ব চিত্র

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) প্রত্যাহারের প্রতিবাদে ফের রেল অবরোধ হল মুরারইয়ে। তার জেরে বিভিন্ন স্টেশনে দূরপাল্লা ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন আটকে পড়ল। ভোগান্তিতে পড়লেন অসংখ্য যাত্রী।
শনিবার সকালে মুরারই নতুন বাজার থেকে মিছিল বের হয়। ১০টা ২০ মিনিটে মিছিল রেলগেটে পৌঁছলে জনতা অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করে। ওই রেলগেটটি বোলপুর-রাজগ্রাম সড়কের উপরে। ফলে, এক দিকে মুরারই স্টেশন এবং অন্য দিকে, ওই সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, অবরোধের ফলে ডাউন লাইনে বাঁশলৈ স্টেশনে আটকে যায় হাওড়াগামী শতাব্দী এক্সপ্রেস। রাজগ্রাম স্টেশনে দাঁড়িয়ে পড়ে একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। অন্য দিকে চাতরা স্টেশনে আটকে পরে ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস। দুপুর পৌনে দুটো নাগাদ অবরোধ উঠে গেল ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হল।
বাঁশলৈ স্টেশনে দু’ঘণ্টারও বেশি সময় আটকে ছিল শতাব্দী এক্সপ্রেস। ওই ট্রেনের যাত্রীরা জানান, বাঁশলৈ স্টেশনে জল ও কোনও খাওয়ার স্টল না থাকায় তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয়। একটা সময় এসি মেশিন কাজ করছিল না বলেও যাত্রীদের অভিযোগ। ফলে যাত্রীদের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। তাঁদের অনেকেই প্ল্যাটফর্মে নেমে দাঁড়িয়েছিলেন। এক যাত্রী গৌতম ঘোষ বললেন, ‘‘হঠাৎ অবরোধের ফলে আমাদের চূড়ান্ত ভোগান্তি হল। অনেক যাত্রী আছেন, যাঁরা চিকিৎসা ও বিভিন্ন দরকারি কাজে কলকাতা যাচ্ছেন। দু’ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এই স্টেশনে আটকে আছি। পাঁচ টাকার জিনিস দশ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এসি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিলাম সকলে।’’ শতাব্দী এক্সপ্রেসের যাত্রী সানি খান যাচ্ছিলেন হায়দরাবাদ। তিনি বলেন, ‘‘বিকেল ৬টায় বিমানের টিকিট ছিল। অবরোধে ফেঁসে আর বিমান ধরতে পারব না। কলকাতা থেকে আবার শিলিগুড়ি বাড়ি ফিরতে হবে। অবরোধকারীরা সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তির কথা একটু চিন্তা করলে ভাল হয়।’’
স্টেশনে অবরোধের জের পড়ে মুরারই-রাজগ্রাম সড়কেও। তিন ঘণ্টার অবরোধে গুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। মুরারই-রামপুরহাট রুটের বাস-সহ শযে শয়ে যানবাহন আটকে যায়। অনেকে সকালে গন্তব্যে বেরোলেও সঠিক সময়ে পৌঁছতে পারেননি। রামপুরহাট ও জঙ্গিপুরগামী সব বাস আটকে যায়। ফলে অনেক যাত্রীকে বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়ে টোটো, অটো কিংবা ছোট গাড়ি করে ঘুরপথে যেতে হয়েছে। শনিবার নলহাটি কলেজের ছাত্রদের মুরারই কলেজে পরীক্ষার সেন্টার পরেছিল। তাঁদেরও ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়।
নলহাটি কলেজের ছাত্র আকাশ মণ্ডল বলছিলেন, ‘‘কোনও বাস না পাওয়ায় বেশি টাকা দিয়ে টোটো ভাড়া করে কোনও মতে পৌঁছেছি মুরারই কলেজে। হয়। এখন আবারও বাড়ি ফেরার জন্য বেশি টাকা দিয়ে টোটোয় যাব না। ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি। অবরোধ উঠে গেল ট্রেনে যেতে হবে।’’ রাজগ্রামের বাসিন্দা ধনঞ্জয় কোনাই পাগলের মতো ছোটাছুটি করছিলেন। বললেন, ‘‘আমার বোন রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি আছে। আজ অপারেশন হওয়ার কথা। রাজগ্রাম থেকে বাসে চেপেছিলাম। অবরোধের ফলে মুরারইয়ে আটকে পড়েছি। আমি না পৌঁছলে ওষুধ ও অপারেশন কী করে হবে?’’ নিরুপায় হয়ে শেষে দেড় হাজার টাকা দিয়ে ছোট গাড়ি ভাড়া করতে হয়েছে।’’
অবরোধকারীদের বক্তব্য, ‘‘এ দিন শুধু মুরারই ১ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে থেকে এই ‘জনবিরোধী’ আইনের প্রতিবাদে মিছিল হয়েছে। পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ মিছিলে পা মেলান। আমাদের এই আন্দলনে সব ধর্মের মানুষ ছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকার এই বিল প্রত্যাহার না করলে আন্দোলন চলবে।’’ বিকেলের দিকে মুরারই রাজগ্রাম সড়কে বাঁশলৈ বাজারে রাস্তার মধ্যে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement