ঝালদা নিয়ে রিপোর্ট গেল রাজ্যে

এমইডি-র এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুবীর নাগ বলেন, ‘‘সে দিন ঝালদায় গিয়ে আমাদের দুই ইঞ্জিনিয়ারকে স্থানীয় মানুষজনের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝালদা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:২৫
Share:

ঝালদা পুরসভা।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এই মুহূর্তে ঝালদায় সকলের জন্য বাড়ি প্রকল্পের কাজ দেখতে যাওয়া সম্ভব নয় বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিল পুরুলিয়ার মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেট (এমইডি)। মঙ্গলবার ঝালদা পুরভবনে ওই প্রকল্পের বকেয়া কিস্তির টাকা চেয়ে উপভোক্তাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় এমইডি-র দুই ইঞ্জিনিয়ারকে। তার পরেই পুরুলিয়ার এমইডি-র পক্ষ থেকে গোটা ঘটনার রিপোর্ট কলকাতায় পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

এমইডি-র এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুবীর নাগ বলেন, ‘‘সে দিন ঝালদায় গিয়ে আমাদের দুই ইঞ্জিনিয়ারকে স্থানীয় মানুষজনের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। সকলের জন্য বাড়ি প্রকল্পে কিস্তির টাকা ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে ঝালদায় এই মুহূর্তে যথেষ্ট উত্তেজনা রয়েছে। সেই বিষয়টিই আমরা কলকাতায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ঝালদার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সেখানে গিয়ে সুষ্ঠ ভাবে কাজ করা সম্ভব নয়।’’ তিনি জানান, উপভোক্তারা বুঝতে পারছেন না যে এই প্রকল্পে বাড়ি নির্মাণের কিস্তির টাকা ছাড়ার ক্ষেত্রে এমইডি-র কোনও ভূমিকাই নেই। টাকা ছাড়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে পুরসভার এক্তিয়ারে।

সে দিন কী হয়েছিল?

Advertisement

ঝালদা পুরএলাকায় ওই প্রকল্পে প্রথম দফায় ৫৩৫টি বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে। মাসখানেক আগে এমইডি পরিদর্শন করে জানায়, তার মধ্যে কয়েকটি বাড়ির নির্মাণে গণ্ডগোল রয়েছে। এরপরেই ওই প্রকল্পের বাড়ি তৈরির বাকি কিস্তির টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয় পুরসভা। এ দিকে, অধিকাংশ উপভোক্তা নিজেদের পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরি করছেন। ফলে তাঁদের অনেকে প্রথম কিস্তির টাকায় খানিকটা দেওয়াল তুলে ত্রিপল টাঙিয়ে কোনওরকমে বাস করছেন। অনেকে আবার বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। তাই কিস্তির বকেয়া টাকা আটকে যাওয়ায় ক্ষোভ চড়েছে।

এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার পুরভবনে এমইডি-র দুই ইঞ্জিনিয়ারকে সামনে পেয়ে ক্ষোভ উগড়ে দেন উপভোক্তারা।তাঁদের কাছে জানতে চান, বাড়ি নির্মাণের বকেয়া কিস্তির টাকা কেন আটকে দেওয়া হয়েছে? কবে টাকা ছাড়া হবে? ইঞ্জিনিয়ারেরা বলার চেষ্টা করেন, টাকা ছাড়ার ব্যাপারে তাঁদের কোনও হাত নেই। এটা সম্পূর্ণ ভাবে পুরসভার বিষয়। কিন্তু ক্ষুব্ধ উপভোক্তারা সে কথা শুনতেই চাননি। উল্টে তাঁদের চাপে কয়েকটি ওয়ার্ডে কিছু নির্মীয়মাণ বাড়ি পরিদর্শনে যেতে হয় ইঞ্জিনিয়ারদের। অভিযোগ, সে দিন ভিড় থেকে কেউ কেউ হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন— টাকা ছাড়া না হলে পরের বার পরিদর্শনে এলে আটকে রাখা হবে। ঝালদার পুরপ্রধান সুরেশ অগ্রবাল বলেন, ‘‘ইঞ্জিনিয়ারদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো সমীচিন নয়। ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ করতে দিতে হবে।’’

উপভোক্তাদের এই ক্ষোভকে হাতিয়ার করে আসরে নেমে পড়েছেন বিরোধীরা। ঝালদা নাগরিক মঞ্চ তৈরি করে আজ শনিবার পুরপ্রধানের কাছে তাঁদের স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার কথা। সঙ্গে থাকার কথা শাসকদলের অধিকাংশ কাউন্সিলরেরও।

তার আগেই অবশ্য শুক্রবার পুরপ্রধান সুরেশ অগ্রবাল আশ্বাস দিয়েছেন, কিছু বাড়ির দ্বিতীয় কিস্তির টাকা ছাড়া হবে। তাঁর কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে ১০১টি বাড়ির জন্য দ্বিতীয় কিস্তির টাকা ছাড়া যাবে। এই বাড়িগুলি নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। ২১৭টি বাড়ির কিছুটা মেরামত করলে এমইডি-র ইঞ্জিনিয়ারদের ছাড়পত্র পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রায় ১০০টি বাড়ি ছাড়পত্র পাচ্ছে না। বাকি কিছু বাড়ির উপভোক্তাদের নথি নিয়ে সমস্যা রয়েছে।’’ এ দিন কলকাতায় তিনি এমইডি-র চিফ ইঞ্জিনিয়রের সঙ্গে দেখাও করেন বলে জানিয়েছেন। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘চিফ ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, জেলা থেকে আসা রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই তাঁরা সব করছেন। যে বাড়িগুলি ছাড়পত্র পায়নি, সে সম্পর্কে তিনি কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি।’’

তাহলে এই বাড়িগুলির ভবিষ্যৎ কী? কোনও মহল থেকেই তার কোনও সদুত্তর মেলেনি। যদিও বিরোধীদের দাবি, ওই বাড়িগুলির জন্যও টাকা ছাড়তে হবে। না হলে গরিব মানুষ থাকবেন কোথায়?’’ বিরোধী কাউন্সিলর মহেন্দ্রকুমার রুংটা ও তৃণমূল কাউন্সিলর প্রদীপ কর্মকার বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি নিয়ে পুরপ্রধান আমাদের অন্ধকারে রেখেছেন। অথচ বাসিন্দাদের প্রশ্নের মুখে আমাদের পড়তে হচ্ছে। সে জন্যই পুরপ্রধানের সঙ্গে আলোচনায় বসা দরকার। কিন্তু তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন।’’ যদিও পুরপ্রধান বলেছেন, ‘‘আমি পুরসভার কাজেই বাইরে রয়েছি। ঝালদায় ফিরেই বৈঠকে বসব। কিন্তু তাঁরা যদি দাবি করেন যে শনিবারই বসতে হবে, তা কী ভাবে সম্ভব হবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন