গণপিটুনি ঠেকিয়ে চোরকে চা সীমার

কী করতে ঢুকেছিস বাড়িতে? সমস্বরে সেই প্রশ্নে মিনমিনিয়ে উত্তর দেয়— ‘‘দু’দিন খাইনি গো। তাই এসেছিলাম!’’ শুনেই গলে জল গৃহকর্ত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৮ ০২:৩৭
Share:

চুরি করতে এসে গেরস্থের কাছে চা-বিস্কুট খেল চোর। সীমা মণ্ডল শোনালেন সে গল্পই। পাশে শ্বশুর নিমাইচন্দ্র মণ্ডল। সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র

শিকল টানা ঘরের দরজা। বাইরে ভিড়। খাটের নীচে বসে থরথরিয়ে কাঁপছে চোর— এই বুঝি শুরু হয় গণপিটুনি!

Advertisement

কী করতে ঢুকেছিস বাড়িতে? সমস্বরে সেই প্রশ্নে মিনমিনিয়ে উত্তর দেয়— ‘‘দু’দিন খাইনি গো। তাই এসেছিলাম!’’ শুনেই গলে জল গৃহকর্ত্রী। উত্তেজিত পড়শিদের ঠান্ডা করে খাটের তলা থেকে বছর বাইশের শেখ জুয়েলকে বের করেন সিউড়ি শহরের ব্যবসায়ী নিমাইচন্দ্র মণ্ডলের পুত্রবধূ সীমাদেবী। চেয়ারে বসিয়ে চা, বিস্কুটও খাওয়ান। তার পরে পুলিশ ডাকেন।

সোমবার কলেজপাড়ায় মণ্ডল বাড়ির এই কাণ্ড দিনভর রসদ জোগাল শহরের আড্ডায়।

Advertisement

ঘড়িতে সকাল ৭টা। রান্নাঘরে চা করছিলেন সীমাদেবী। তখনও ঘুম ভাঙেনি তাঁর স্বামীর। শ্বশুরমশাই স্নানঘরে। খোলা ছিল মূল ফটক। সেই সুযোগে দোতলায় ওঠে জুয়েল ঢোকে নিমাইবাবুর ঘরে। খুটখাট আওয়াজ পান সীমাদেবী। উঁকি দিয়ে বোঝেন, চোর ঢুকেছে ঘরে। দরজায় শিকল তুলে দেন। চেঁচিয়ে ডাকেন পড়শিদের। চোর সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা সম্প্রতি বারবার দেখেছে সিউড়ি। পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার আইন হাতে না তুলে নেওয়ার আবেজন জানানো হয়েছে। এ দিনও আস্তিন গুটিয়ে ছিলেন বেশ কয়েক জন। কিন্তু, মারধরে সায় ছিল না সীমাদেবী, তাঁর স্বামী প্রজ্ঞাব্রত, ভাসুর ভীমের। আইন হাতে নিতে রাজি ছিলেন না নিমাইবাবুও। সাড়ে আটটা নাগাদ পুলিশ এসে অভিযুক্তকে থানায় নিয়ে যায়।

প্রজ্ঞাব্রত বলছেন, ‘‘ছেলেটার সঙ্গে দু’টো চাবির গোছা ছিল। তাতে কম করে শ’খানেক চাবি। তবুও আমরা চাইনি, কেউ ওকে মারুক। পুলিশ যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।’’ পুলিশকর্তাদের পাশাপাশি শহরবাসীর একাংশের বক্তব্য— সাধারণ মানুষ আইন হাতে তুলবেন না, এটাই হওয়া উচিত। অন্য পক্ষের যুক্তি, একের পর এক চুরি-ছিনতাই হচ্ছে। অধিকাংশের কিনারা পুলিশ করতে পারছে না। সীমাদেবীদের মতো ধৈর্য রাখা কঠিন। পুলিশের দাবি, জুয়েল হাতসাফাইয়ে পটু। হাতেনাতে ধরা পড়েছে।

সীমাদেবী অবশ্য বলছেন, ‘‘সকালে গৃহস্থ বাড়িতে এসেছে। কিছু খায়নি বলেছিল। তাই চা দিলাম। স্বভাব খারাপ হলেও মানুষ তো!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন