দুপুর একটা থেকে পার্কের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পা ব্যথা হয়ে গিয়েছে আট বছরের সূরযের। ছোট্ট সূরয মাকে বলছে, ‘‘ইস আর একটু আগে ঢুকলে এত সময় দাঁড়াতে হতো না।’’ শুধু সূরয একা নয়, গেটের সামনে মুরারই থানার চাতরা থেকে রেহান শেখ, মল্লারপুর থানার খরাশিনপুরের জেমিমা, মল্লারপুরের খুশবুদের আরও একঝাঁক কচিকাচা। পার্কের ভিতরে গিয়ে বোটিং আর টয় ট্রেনে চাপতে অধীর হয়ে উঠেছে ওরা সবাই।
শনিবার ইদের দিন এমনই দৃশ্য দেখা গেল রামপুরহাটের গাঁধী পার্কে। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক বাসিন্দা জানালেন, ইদের নমাজের পরেই সকাল সাড়ে ন’টা থেকে রামপুরহাট শহর-সহ মাড়গ্রাম, দাদপুর, নারায়ণপুর, পাখুরিয়া, বগটুই, জয়কৃষ্ণপুর এবং অন্য এলাকার আট থেকে আঠারো বছর বয়সী বালক বালিকা, কিশোর কিশোরী, যুবক যুবতীরা ভিড় করেছিল গাঁধী পার্কের সামনে। তাঁরা জানান, শুধু ইদ নয় পয়লা বৈশাখ, ইংরেজি নববর্ষের মতো অনুষ্ঠানেও পার্কটিতে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষজন।
দুপুর একটার সময় রামপুরহাট পুরসভা ভবন লাগোয়া গাঁধী পার্ক এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, পার্কের ভিতর পুরসভার কর্মীরা মাইকে ঘোষণা করছেন, দুপুরে কিছু সময়ের জন্যে পার্ক বন্ধ রাখা হবে। পার্কে মধ্যাহ্ণকালীন বিরতি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পুরসভার পক্ষ থেকে পার্কে আগত দর্শনার্থীদের ইদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন কর্মীরা। সঙ্গে চলছে পার্কে ঘোরার নিয়মাবলির প্রচারও। পার্কে ঘুরতে এসে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সঙ্গী বা আত্মীয় পরিজনদের সম্পর্কেও ঘোষণা করা হচ্ছে অনুসন্ধান কেন্দ্র থেকে।
দুপুর একটা নাগাদ পার্ক মধ্যাহ্ণকালীন বিরতি শুরু হওয়ার পরেই কর্তব্যরত এক পুরসভার কর্মী জানালেন, সকাল সাড়ে ন’টায় টিকিট কাউন্টার খোলবার পর থেকে থেকে বেলা একটার বিরতির মধ্যে কাউন্টারের গেটে ১৮ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। পার্কের ভিতর ট্রয় ট্রেন, বোটিং ইত্যাদি মনোরঞ্জনের সামগ্রী থেকে কয়েক হাজার টাকা আয় হয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ বছর আগে সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরুর হতেই ধাপে ধাপে টয় ট্রেনের মতো জনপ্রিয় বিষয় পার্কটিতে আনা হয়। এ বছর থেকে চালু হয়েছে বোটিং পরিষেবা। সেই আয় পুর এলাকার উন্নয়ন খাতে খরচ করা হয় বলে পুরসভার কর্মীরা জানান।
মাড়গ্রামের রাখাতপাড়ার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী পিয়াসা খাতুন বলল, ‘‘বন্ধুদের কাছে পার্কের গল্প শুনেছিলাম। আগে কোনও দিন আসা হয়নি। এখানে এসে খুব ভাল লাগল।’’ মুরারই থানার চাতরা গ্রামের দশম শ্রেণির ছাত্র রেহান শেখ পার্কে এসেছে সাত আট জন বন্ধুর সঙ্গে। সে বলে, ‘‘ট্রেন দেরি করে আসায় করার জন্য দুপুর একটার আগে পার্কের ভিতর ঢুকতে পারিনি।’’ তাই বলে, মনে তাদের আক্ষেপ নেই। রেহানরা জানাল, অনেক দিন থেকেই আসব আসব করে আসা হয়নি। যখন এসেই পড়েছে, তখন ট্রয় ট্রেনে ঘোরা, বোটিং, এই সমস্ত কিছুর আনন্দ নিয়েই বাড়ি ফিরবে।
ইদের খুশি দিনে সুরজ, রেহানদের জন্য আনন্দে ঘোরাঘুরির জন্য খাবারের পসরা নিয়েও পার্কের যাওয়ার রাস্তার দু’ধারে অনেক দোকানিও হাজির। গরমের দিনে, কুলফি, মালাই আইসক্রিম ইত্যাদির পসরা নিয়ে হাজির আজিমগঞ্জের আইস বিক্রেতারাও। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, শুধু ইদ নয়, বিভিন্ন ছুটির দিনে স্থানীয়রা ছাড়াও দূর থেকেও দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন রামপুরহাটের গাঁধী পার্কে।