প্রাথমিকের পড়ুয়ারাও খাবে আয়রন ট্যাবলেট

এ বার সেই ঘাটতি মেটাতে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খাওয়ানো হবে। সপ্তাহে এক দিন করে। আনুষ্ঠানিক ভাবে, চলতি মাস থেকে এই প্রকল্প চালু হয়েছে রাজ্যজুড়ে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৩
Share:

রক্তাল্পতায় ভুগলে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। দেশে এই সমস্যা প্রবল। সমস্যা মেটাতে শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং গর্ভবতী মহিলাদের আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড সিরাপ বা ট্যাবলেট দেওয়া হয় সরকারি ভাবে। কিন্তু, তা থেকে এত দিন বাদ পড়েছিল প্রাথমিকের পড়ুয়ারা। এ বার সেই ঘাটতি মেটাতে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খাওয়ানো হবে। সপ্তাহে এক দিন করে। আনুষ্ঠানিক ভাবে, চলতি মাস থেকে এই প্রকল্প চালু হয়েছে রাজ্যজুড়ে। বীরভূমও ব্যাতিক্রম নয়। স্কুলগুলিতে মিড ডে মিলের পরে সপ্তাহে এক দিন পড়ুয়াদের ট্যাবলেট খাওয়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জুনিয়র উইকলি আয়রন-ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টেশন’। বীরভূমে হাইস্কুলগুলির পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে এই ট্যাবলেট পাঠানো শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ ব্রজেশ্বর মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই বেশ কিছু স্কুলের শিক্ষকদের এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শিশুদের অভিভাবকদের সঙ্গেও কথা বলা হবে।’’ বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি অবশ্য বলছেন, ‘‘জুনিয়র উইকলি আয়রন-ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টেশন নিয়ে রাজ্যস্তরে প্রশিক্ষণ ও বৈঠক হয়েছে। জেলাস্তরেও সে কাজ হয়েছে। ব্লকে ব্লকে ওষুধও পৌঁছেছে। কিন্তু, স্কুলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও
অভিভাবকদের বুঝিয়েই জানুয়ারিতেই সব স্কুলে চালু হবে ওই প্রকল্প। কেননা, প্রকল্প সফল করতে হলে তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়।’’

সমস্যা ঠিক কোথায়?

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রক্তাল্পতার জেরে শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ কম হয়। তা ছাড়া স্কুলে এসে নেতিয়ে পড়া, স্কুলে মনোযোগ দেওয়া নিয়েও সমস্যা হয়। সেটা দূর করতেই প্রাথমিকের পড়ুয়াদেরও আয়রন-ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, এই ফুড সাপ্লিমেন্ট কেউ খালি পেটে খেলে বমি বমি ভাব হতে পারে। তাই ভাল করে সব দিক বেঁধে না এগোলে অহেতুক ভীতির সঞ্চার হতে পারে বলে মনে করছেন বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি।

চিকিৎসকদের অনেকেরই অভিজ্ঞতা, মাতৃত্বকালীন জটিলতার অন্যতম প্রধান কারণ রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকা। এ দেশের পরিপূরক ও সুষম খাদ্যাভ্যাস না থাকা এবং অপুষ্টি এর জন্য দায়ী। তাই গর্ভে সন্তান এলেই রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে মহিলাদের আয়রন-ফলিক অ্যাসিড দেওয়া হয়। যা রক্তে লোহিত কণিকার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। একই ভাবে ছেলেদের অ্যানিমিয়া বা রক্তাপ্লতা হলেও নানা সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু, রক্তাপ্লতার সমস্যা তো হঠাৎ করে হয় না। তাই সমস্যা মেটাতে হবে ছোটবেলা থেকেই। এত দিন শিশুদের এবং বয়ঃসন্ধির সময়ে এই ফুড সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হচ্ছিল। বাদ থেকে গিয়েছিল ৫ থেকে ১০ বছরের শিশুরা। সেই ফাঁকটাই এ বার পূরণ করতেই উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। উচ্চবিদ্যালয়েও পঞ্চম শ্রেণির শিশুরা এই ট্যাবলেট খাবে।

রামপুরহাট মহকুমা এলাকার কিছু প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকেরা বলছেন, ‘‘ব্লক স্বাস্থ্য দফতর থেকে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ানোর বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তবে এখনও স্কুলে এই সব বড়ি এসে পৌঁছয়নি।’’ অন্য দিকে, বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার অন্তর্গত বেশ কিছু স্কুলের শিক্ষকেরা বলছেন, ‘‘ট্যাবলেট এলে পড়ুয়াদের তা খাওয়াতে শুরু করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন