শান্তি ফিরুক, চাইছে কল্যাণপুর

কল্যাণপুরে অশান্তির সূত্রপাত দীর্ঘদিন আগে। গ্রাম দখল এবং নকল স্বর্ণমুদ্রার কারবারই তার কারণ। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মূলত ওই গ্রাম থেকেই ভ্রমরকোল পঞ্চায়েতের রাজনীতি তথা সরকারি কাজ নিয়ন্ত্রিত হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৪১
Share:

হিউমপাইপে লুকোন ড্রাম-বোঝাই তাজা বোমা। বুধবার সাঁইথিয়ার কল্যাণপুরে। ছবি: কল্যাণ আচার্য।

‘‘যার যাওয়ার সে তো চলেই গেল। পুলিশ আসল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে গ্রামে শান্তি ফেরাক, তা হলেই হবে’’— এমনই বলছেন গুলিতে নিহত শেখ ইনসানের বাবা শেখ সাজেদ ওরফে ধলু শেখ। শুধু তিনি-ই নন, বুধবার দুপুরে সাঁইথিয়ার কল্যাণপুর গ্রামে অনেকের কাছে শোনা গেল এমনই কথা।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে ওই গ্রামে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শেখ ইনসান নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। তার পর পরই এ দিন সকালে ওই গ্রামে ড্রামভর্তি তাজা বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। তাতে ফের আতঙ্ক ছড়ায় গ্রামে। একের পরে এক অশান্তির জেরে এর আগেও কল্যাণপুর গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছে বহু পরিবার। যাঁদের উপায় নেই, তাঁরা আশঙ্কা আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের এক স্কুলশিক্ষক এবং এক আইসিডিএস কর্মীর কথায়, ‘‘অশান্তির ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকি। এলাকা দখলের লড়াইয়ে মাঝেমধ্যেই তেতে ওঠে গ্রাম। নকল সোনার কারবার নিয়েও অশান্তি হচ্ছে। যাঁদের ক্ষমতা রয়েছে, তাঁরা গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন। অধিকাংশ পরিবার বাধ্য হয়ে থেকে গিয়েছে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কল্যাণপুরে অশান্তির সূত্রপাত দীর্ঘদিন আগে। গ্রাম দখল এবং নকল স্বর্ণমুদ্রার কারবারই তার কারণ। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মূলত ওই গ্রাম থেকেই ভ্রমরকোল পঞ্চায়েতের রাজনীতি তথা সরকারি কাজ নিয়ন্ত্রিত হয়। এক সময় ওই গ্রামে তৃণমূলের অস্তিত্ব ছিল না বললেই চলে। সেই সময় সিপিএমের সঙ্গে ফরওয়ার্ড ব্লকের টক্কর লেগেই থাকত। অনেক বার গোলাগুলি, বাড়িতে আগুন লাগানো থেকে শুরু করে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে তৎকালীন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা শেখ মর্তুজার নেতৃত্বে দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা তৃণমূলে যোগ দেন। নিহত ইনসান মর্তুজার সম্পর্কিত নাতি। এ বছর লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত মর্তুজাই ছিলেন তৃণমূলের ভ্রমরকোল অঞ্চল কমিটির সভাপতি। পরে তৃণমূলে যোগ দেন তাহিরুল শেখ, তাঁর মামাতো ভাই শেখ ডালিম, ভাইপো শেখ সাগর-সহ বেশ কিছু সিপিএম কর্মী-সমর্থক। অভিযোগ, তার পরেই এলাকা দখল ঘিরে শাসকদলের দুই শিবিরের সংঘাত বাধে। গ্রামবাসীর একাংশ জানিয়েছেন, লোকসভা ভোটের পরেই মর্তুজাকে সরিয়ে তাহিরুলকে অঞ্চল সভাপতি করা হয়। এক সময় ডালিমকে গ্রাম কমিটির সভাপতিও করা হয়। তার পর থেকে সংঘাত আরও তীব্র হয়। মর্তুজা এবং তাহিরুল এখন অবশ্য ওই গ্রামে থাকেন না। কিন্তু তাঁদের অনুগামীদের মধ্যে গ্রাম দখলের লড়াই থামেনি বলেই অভিযোগ। মর্তুজা শেখ বলছেন, ‘‘কী ভাবে শেখ ইনসানের মৃত্যু হল, বলতে পারব না। ও নকল সোনার কারবারে জড়িত ছিল কিনা, তা-ও জানি না। তবে তৃণমূলের কর্মী ছিল।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘নকল সোনার কারবার এবং পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কাজের টাকা লোপাটের বিরোধিতা করেছিলাম বলেই আমাকে সরিয়ে তাহিরুলকে অঞ্চল সভাপতির পদে বসানো হয়। তাহিরুলের অনুগামী ডালিম ও সাগরকে পুলিশ নকল সোনার কারবারের অভিযোগে আগে গ্রেফতারও করেছিল।’’

Advertisement

ডালিম ও সাগরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাহিরুল দাবি করেন, ‘‘ওই দু’জন যখন নকল সোনার কারবারে জড়িত থাকা অভিযোগে ধরা পরে, তখন মর্তুজাও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। মর্তুজা টাকা নিয়ে কারবারে মদত জোগাতেন। এখন আর ওরা ওই সব কাজে জড়িত নয়।’’ তাঁর পাল্টা দাবি, মর্তুজার লোকেরাই ওই কারবার আর পঞ্চায়েতের টাকা লোপাট করছেন। এলাকায় অশান্তিও পাকাচ্ছেন। তৃণমূলের ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাঁইথিয়া ব্লক সভাপতি প্রশান্ত সাধু অবশ্য বলেন, ‘‘গ্রাম দখল বা সোনার কারবারে দলের কোনও নেতা জড়িত নন। ওই গ্রামের সবাই আমাদের কর্মী-সমর্থক। কিন্তু গুলিচালনার ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। দু’পক্ষের ব্যবসায়িক বিরোধের জেরেই ঘটনাটি ঘটেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন