মাশরুম

দিন বদলের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন করুণা

তাঁরা আঁধারে আলো। করোনা-কালে দুর্গা আবাহনের পর্বে স্বপ্রভায় দীপ্ত মৃন্ময়ীদের সঙ্গে পরিচয় করাচ্ছে আনন্দবাজার।ভোর ৩টে নাগাদ ঘুম থেকে উঠে মাশরুমের পরিচর্যা করেন। সকাল হলে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর তোড়জোড় ও সাংসারিক কাজ করেন। সন্ধ্যায় ফের মাশরুমের পরিচর্যা করতে করতেই ছেলেমেয়েকে পড়ান তিনি। 

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

গঙ্গাজলঘাটি শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২০ ০১:২৫
Share:

করুণা মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

দিনমজুর স্বামীর আয়ে পেট ভরলেও ছেলেমেয়েদের ভাল করে মানুষ করা হয়তো সম্ভব হত না। তাই হেঁশেল সামলানোর পাশাপাশি, উপার্জনের পথ খুলে নিয়েছেন বাঁকুড়া জেলার গঙ্গাজলঘাটির থানার বড়বাইদ গ্রামের বছর ত্রিশের করুণা মণ্ডল। বছর পাঁচেকের চেষ্টায় তিনি মাশরুম চাষ করে তিনি শুধু নিজের সংসারের হাল ফেরাননি, বাপের বাড়ির দায়িত্বও তুলে নিয়েছেন কাঁধে। তাঁর এই লড়াই দেখে উৎসাহী হয়ে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা শুরু করেছেন এলাকার অনেক বধূ।

Advertisement

করুণাদেবীর কথায়, ‘‘জমিজমা বিশেষ নেই। মূলত স্বামীর দিনমজুরির রোজগারে কোনও ভাবে দু’বেলা খাওয়া-পরা জুটলেও সন্তানদের মানুষ করা বা সংসার সুন্দর ভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই বিয়ের পরেই ঠিক করেছিলাম, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অভাব জয় করতে বাড়িতে বসে থাকব না।” বাঁকুড়া জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক মলয় মাজি বলেন, “লড়াই করে অভাবকে কী ভাবে জয় করতে হয় করুণাদেবী দেখিয়েছেন।’’

স্ত্রীর গর্বে গর্বিত স্বামী তাপস মণ্ডল বলেন, “আজ করুণার রোজগারের টাকা আমাদের সংসারের বড় ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দুই সন্তান তন্ময় সপ্তম শ্রেণিতে ও তুহিনা প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি, তন্ময়কে ছবি আঁকা ও মেয়েকে নাচের স্কুলে ভর্তি করিয়েছে করুণা।’’ তিনি জানান, বড়বাইদ গ্রামেই করুণাদেবীর বাপেরবাড়ি। সেই পরিবারে তিনিই একমাত্র সন্তান। তাই বাবার অবর্তমানে এখন নিজের মা ও ঠাকুমার দেখভালের দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন করুণাদেবী। গোড়ায় তিনি বিরি কলাইয়ের বড়ি, পাপড় তৈরি করতে শুরু করেন। পরে, এক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নের পরামর্শে তিনি নিজের ঘরের ভিতরে মাশরুম চাষ শুরু করেন। ধীরে ধীরে মাশরুমের বিক্রি বাড়ে। তখনই তাঁর এই উদ্যোগ জেলা উদ্যানপালন দফতরের নজরে আসে।

Advertisement

উদ্যানপালন দফতরের ফিল্ড অফিসার সঞ্জয় সেনগুপ্ত বলেন, “করুণাদেবী বাড়িতে মাশরুম চাষ করে বাইরে বিক্রি করছেন বলে খবর পেয়ে আমরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে বাজার ধরতে সাহায্য করি।” করুণা জানান, দুর্গাপুর, বর্ধমান-সহ বাঁকুড়া জেলার নানা জায়গায় তাঁর চাষ করা মাশরুম বিক্রি হচ্ছে।

করুণাদেবী জানান, রোজগারের টাকায় বর্তমানে তিনি নিজের বাড়ির চত্বরেই মাশরুম চাষের জন্য আলাদা ঘর তৈরি করেছেন। ভোর ৩টে নাগাদ ঘুম থেকে উঠে মাশরুমের পরিচর্যা করেন। সকাল হলে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর তোড়জোড় ও সাংসারিক কাজ করেন। সন্ধ্যায় ফের মাশরুমের পরিচর্যা করতে করতেই ছেলেমেয়েকে পড়ান তিনি।

করুণা বলেন, “মাশরুম চাষ করে মাসে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা রোজগার হয়েই যায়। চাষের আনুষঙ্গিক প্রাকৃতিক পরিবেশ সহায় থাকলে আরও ভাল ফলন হয়। তাতে কোনও কোনও বার রোজগারও কিছুটা বাড়ে।” করুণাদেবীর পড়শি বীণারানি মণ্ডল, লতিকা মণ্ডল, কল্যাণী মণ্ডলেরা বলেন, “ওঁকে দেখে এখন আমরাও মাশরুম চাষ শুরু করেছি। উনি হাতে ধরে এই চাষ শিখিয়েছেন। ওঁর দৌলতে অভাবকে জয় করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন