বানভাসি বাঙালির স্বজন ওঁরা

অচেনা সেই শহরে তাঁদের এতটা আপন করে নেবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি বানভাসী এ রাজ্যের ওই যুবকেরা।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৮ ০১:১৬
Share:

—ফাইল চিত্র।

বিরামহীন বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল কেরলের এর্ণাকুলাম জেলার আথানি শহরও। বাড়িতে এক বুক জল। এই পরিস্থিতিতে কাজের উদ্দেশে ওই শহরে যাওয়া বাঁকুড়া ও বর্ধমান জেলার সাত যুবক তখন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মেস থেকে বের হন। তাঁদের দাবি, মাথায় ব্যাগ তুলে জলে ডোবা রাজপথ ধরে আট কিলোমিটার হেঁটে আলুওয়া শহরে গিয়ে ওঠেন তাঁরা। কিন্তু অচেনা সেই শহরে তাঁদের এতটা আপন করে নেবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি বানভাসী এ রাজ্যের ওই যুবকেরা।

Advertisement

মঙ্গলবার ফোনে সেই ঘটনার কথাই বলে যাচ্ছিলেন বড়জোড়ার চাঁদাইয়ের বাসিন্দা সোহেল মণ্ডল, গুড়ুরবাঁধের জাহিরুল সেখ, সোনামুখীর উজ্বল সেখ, সইফুদ্দিন সেখ, আমিরচাঁদ সেখ, সোমনাথ গড়াই ও বুদবুদের বেলেডাঙার সেখ মুজফফর হোসেনরা। তাঁরা বলেন, “আজ আমরা বেঁচে আছি কেবল এখানকার স্থানীয় মানুষদের জন্যই।”

সইফুদ্দিনরা জানান, গত সাত দিন ধরে আলুওয়াতে রয়েছেন তাঁরা। বন্যায় আশ্রয়হারাদের এলাকায় ঘুরে বেরাতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারাই এক ব্যক্তির বাড়ির ছাদে তাঁদের সকলের থাকার ব্যবস্থা করে দেন। সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা জলে ভিজে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছিল সইফুদ্দিনদের। স্থানীয়েরাই সংগ্রহ করে নগদ দেড় হাজার টাকা তুলে দেন তাঁদের হাতে। এখানেই শেষ নয়।

Advertisement

তাঁরা জানাচ্ছেন, রান্না করার জন্য স্টোভ, চাল, ডালের মতো খাদ্য সামগ্রীও তাঁদের জোগাড় করে দেন এলাকাবাসীরাই। ঘটনা হল সইফউদ্দিনরা আলুওয়াতে ওঠার পরে সেখানে সরকারি ত্রাণ শিবিরও চালু হয়। অথচ তারপরেও তাঁদের নিজেদের কাছেই রেখে দিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। সইফুদ্দিনরা যাঁর বাড়ির ছাদে ত্রিপল খাটিয়ে রয়েছেন সেই এস আইয়ার বলেন, “ওরা কেরলের ভাষা বোঝে না। তাই শিবিরে গেলে সমস্যায় পড়বে। এটা ভেবেই ওদের আমার বাড়িতে রেখে দিয়েছি। কোনও ধরনের সমস্যা ওরা জানালে আমরা পাশে দাঁড়াচ্ছি।”

স্থানীয়দের সাহায্যে নিরাপদ ঠাঁই খুঁজে পেলেও এখন যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি ফিরে আসতে চায় সাত জনই। চাঁদাইয়ের যুবক সোহেলের মা ফিরোজা বিবি বলেন, “বাড়িতে অভাবের জন্য ছেলেকে দূর দেশে কাজে পাঠাতে হয়েছে। ছেলে ফোন করে বাড়ি ফিরবে বলে জানিয়েছে। আমরা চাই, যে ভাবেই হোক প্রশাসন তাদের এখানে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুক।’’ সোহেলের বাড়িতে গিয়েছিলেন বড়জোড়া ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের ব্লক সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা প্রশাসনের কাছে ওঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা করতে বলেছি।’’ সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরী বলেন, “আমাদের দলের তরফে কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পি রাজীবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আলুওয়াতে জেলার শ্রমিকদের আটকে থাকার কথা তাঁকে জানানো হয়েছে। তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।”

আগেই ছাতনা, ইঁদপুর ও বড়জোড়া থেকে অনেকেই কেরলে কাজে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির জন্য আটকে পড়েছেন বলে জানাজানি হয়। জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, “কেরলে আটকে থাকা শ্রমিকদের পরিবার স্থানীয় ব্লক বা জেলা প্রশাসনিক অফিসে যোগাযোগ করলে সেখানকার হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে খবর নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কেরলে আটকে থাকা জেলার বাসিন্দাদের তথ্য রাজ্য সরকারকে আমরা জানাচ্ছি।” হেল্পলাইন নম্বর হল: ০৪৭১ ২৩৩০৮৩৩।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement