পেট না কেটে অস্ত্রোপচার সিউড়িতে

শুধু সিউড়ি জেলা হাসপাতালেই বছরে ১৫০টি গলব্লাডারের অস্ত্রোপচার হয়। রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালের চাপও কমবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০৯
Share:

পরিষেবা: তখনও চলছে ল্যাপারোস্কপি। শুক্রবার সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র

পেট না কেটে ল্যাপারোস্কোপি পদ্ধতিতে গলব্লাডারে অস্ত্রোপচার হল সিউড়ি জেলা হাসপাতালে। হাসপাতালের সুপার শোভন দে-এর দাবি, বীরভূমে এমন অস্ত্রোপচার প্রথম। সিউড়ির ছাপতলার বাসিন্দা বছর বত্রিশের বধূ মবিনা বিবি এখন সুস্থ আছেন। তবে রোগীর রক্তাল্পতা থাকায় পর্যবেক্ষণের জন্য সিসিইউতে (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট) রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বেসরকারি ভাবে এই অস্ত্রোপচারে ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে। এ দিন সম্পূর্ণ নিখরচায় তা হয়েছে।

Advertisement

জেলায় যেহেতু প্রথম এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার, তাই যথাসম্ভব প্রস্তুতি নিয়েছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দু’জন শল্য চিকিৎসক, দু’জন অ্যানাস্থেটিস্ট, বেশ কয়েক জন সিস্টার-নার্সের পাশাপাশি ছিলেন হাসপাতালের সুপারও। হাসপাতালের পুরনো ভবনেই এ দিন অস্ত্রোপচার হয়। মবিনার তত্ত্বাবধানে ছিলেন চিকিৎসক দীপককুমার মুখোপাধ্যায়। দীপকবাবু জানান, গত তিন মাস ধরে পেটের যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিলেন ওই বধূ। মাসখানেক আগে হাসপাতালের আউটডোরে দেখান। পরীক্ষার পরে জানা যায় গলব্লাডারে স্টোন রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘অস্ত্রোপচার করতেই হত। ইতিমধ্যে ল্যাপারোস্কোপি সার্জারির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি চলে আসায় প্রযুক্তি নির্ভর এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।’’

দীপকবাবুর সঙ্গে ছিলেন শল্য চিকিৎসক সৌমেন্দ্র দত্ত। তিনি বলছেন, ‘‘মাত্র চারটে ছোট্ট ফুটো করে ক্যামেরা এবং আনুসঙ্গিক যন্ত্রপাতি পেটের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে এই অস্ত্রোপচার করা হয়। অপারেশন কক্ষে থাকা মনিটরে বহু গুণ বড় করে যে অংশের অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে, তা দেখার সুযোগ থাকে। অনেক ভ্রান্তি এড়ানো যায়।’’ হাসাপাতাল সূত্রের খবর, সঙ্গে থাকা অ্যানাস্থেটিস্টের নাম মৃণ্ময় দাস এবং সঞ্জীববাবু।

Advertisement

ল্যাপারোস্কোপির সুবিধা কী? চিকিৎসকেরা জানালেন, পেট কেটে অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হয় না। সে জন্য রোগী দ্রুত সেরে উঠে কাজে ফিরতে পারেন। অস্ত্রোপচারের দাগও দ্রুত মিলিয়ে যায়। রক্তপাত কম হয়। সে জন্য শরীরে ধকলও কম যায়। এমনিতেই জেলা হাসপাতালের উপরে বীরভূমের একটা বড় অংশ এবং লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের একটা অংশের মানুষ নির্ভরশীল। ফলে রোগীর চাপ লেগেই থাকে। তথ্য বলছে, শুধু সিউড়ি জেলা হাসপাতালেই বছরে ১৫০টি গলব্লাডারের অস্ত্রোপচার হয়। রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালের চাপও কমবে। সুপার বলেন, ‘‘আগামী দিনেও ল্যাপারোস্কোপি অস্ত্রোপচার করা হবে।’’

সিউড়িতে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরির পরে নতুন অস্ত্রোপচার কক্ষ তৈরি করা হয় দশ তলায়। সেখানে মেশিন লাগানোয় সমস্যা থাকায় এবং কাছাকাছি সিসিইউ (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট) না থাকায় পুরনো ভবনেই এই অপারেশন হয়। এ দিন মবিনার স্বামী শেখ ফিরোজ বলেন, ‘‘দ্রুত সুস্থ হোক এটাই চাওয়া। অপারেশনে পেট কাটতে হয়নি, যন্ত্রণা কম হয়েছে এটা খুব ভাল ব্যাপার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন