শ্রান্তি: প্রচারের ফাঁকে। রানিবাঁধে তৃণমূল প্রার্থী। নিজস্ব চিত্র
দক্ষিণ বাঁকুড়ার গ্রামীণ উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল। বেশির ভাগ কেন্দ্রে স্থায়ী চিকিৎসক না থাকায় ঠিকমতো পরিষেবা মেলে না। এমন অভিযোগ বহু দিনের। ভোটের মুখে এ নিয়ে কিছুটা চাপে দলও, মত জেলার তৃণমূলের কর্মীদের একাংশের। ভোটের প্রচারে এসে বেহাল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল ফেরানোরই আশ্বাস দিলেন বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর এই আশ্বাস ঘিরে অবশ্য উড়ে এসেছে বিরোধীদের কটাক্ষও।
মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ রানিবাঁধের অম্বিকানগর বাজারে হুডখোলা গাড়িতে ‘রোড শো’ করেন সুব্রতবাবু। সঙ্গে ছিলেন জেলা সভাধিপতি মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু, রানিবাঁধের বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডি, খাতড়া মহকুমা এলাকার পর্যবেক্ষক জয়ন্ত মিত্র, জেলা যুব সভাপতি রাজীব ঘোষাল, জেলা যুব সম্পাদক বিদ্যুৎ দাস, রানিবাঁধের ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুনীল মণ্ডল-সহ অন্যেরা। পরে অম্বিকানগর রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখেন সুব্রতবাবু। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল ফেরানোর আশ্বাস দেন। যদিও তার জন্য নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, জানান তিনি।
এলাকার স্বাস্থ্য-পরিষেবা নিয়ে কী বলছেন এলাকাবাসী? স্থানীয় বাসিন্দা মধুসূদন মোদক, শুভেন্দুশেখর পাল, সোমনাথ দে-র অভিযোগ, ‘‘এলাকার মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে ১৪ কিলোমিটার দূরে রানিবাঁধ ব্লকের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা ১২ কিলোমিটার দূরে খাতড়া মহকুমা হাসপাতালে ছুটতে হয়।’’এমন অবস্থায় অম্বিকানগরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামোর উন্নয়ন করে স্থায়ী চিকিৎসকের ব্যবস্থা করলে পঞ্চায়েতের ১৩টি গ্রাম সংসদের কয়েক হাজার মানুষ উপকৃত হবেন বলে জানান তাঁরা।
তবে শুধু অম্বিকানগর নয়। রানিবাঁধ ব্লকের কোনও গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই স্থায়ী চিকিৎসক না থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কোথাও কাগজেকলমে চিকিৎসক থাকলেও খোদ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই চিকিৎসক না থাকায় গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি থেকে চিকিৎসক তুলে নিয়ে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালাতে হচ্ছে বলে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও ব্লক মেডিক্যাল অফিসার (রানিবাঁধ) অরূপকুমার পণ্ডার দাবি,‘‘অম্বিকানগরে কোনও গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে। সরকারি নিয়মেই উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসক থাকেন না। সেগুলি চালান ‘এএনএম’ বা ‘অক্সিলারি নার্স মিডওয়াইফ’-এর স্টাফেরা।’’ ব্লকে ২৬টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ও চারটি গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। তার মধ্যে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ছোটখাটো কিছু সমস্যা রয়েছে বলে দাবি তাঁর ।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
যদিও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল প্রসঙ্গে বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী অমিয় পাত্র বলেন, ‘‘ওঁরাই তো রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছেন। এত দিন তা দেখেননি কেন? আসলে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এখন ভোট চাইছেন।’’ বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারেরও অভিযোগ, ‘‘শুধু রানিবাঁধ নয়, সমস্ত জায়গাতেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি বেহাল। এখন জঙ্গলমহলের মানুষের কাছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির উন্নয়নের কথা বলে ভোট চাইছেন উনি।’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ-র অবশ্য দাবি, ‘‘রাজ্যে যা উন্নয়ন হয়েছে সারা দেশে তা হয়নি। বিরোধীরাও তা জানেন।’’ রাজনৈতিক কারণেই অনুন্নয়নের কথা বলছেন বিরোধীরা, দাবি তাঁর।