জেনারেটর ঘরে ওষুধ, বন্ধ দোকান

রাতে দোকান খুলে রাখার হ্যাপা এড়াতে জেনারেটর অপারেটরের সঙ্গে যোগসাজশ করে সেখানে ওই ওষুধ রেখেছিলেন তিনটি দোকানের মালিকেরা। দরকার মতো সেগুলি পৌঁছে যেত রোগীদের কাছে।

Advertisement

সমীর দত্ত

মানবাজার শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৩৫
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

হাসপাতালের জেনারেটর ঘর থেকে উদ্ধার হল ওষুধ। রাতে দোকান খুলে রাখার হ্যাপা এড়াতে জেনারেটর অপারেটরের সঙ্গে যোগসাজশ করে সেখানে ওই ওষুধ রেখেছিলেন তিনটি দোকানের মালিকেরা। দরকার মতো সেগুলি পৌঁছে যেত রোগীদের কাছে। বৃহস্পতিবার রাতে মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতালের এই ঘটনায় জেনারেটর অপারেটরকে প্রশাসনের আধিকারিকেরা পুলিশের হাতে তুলে দেন। আর সতর্ক করে ওষুধগুলি তুলে দেওয়া হয় দোকান মালিকদের হাতে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দীপাবলি উপলক্ষে গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়েছিলেন মহকুমাশাসক (মানবাজার) সঞ্জয় পাল, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মৃদুল শ্রীমানি এবং বিডিও (মানবাজার ১) নিলাদ্রী সরকার। সম্প্রতি আচমকা পরিদর্শনে এসে ওই হাসপাতালের অব্যবস্থা দেখে ক্ষুব্ধ মহকুমাশাসক ঠিক ভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন সবাইকে। এ দিন হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে তাঁরা যখন কথা বলছিলেন, সেই সময়ে জেনারেটর অপারেটরকে সেখানে ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ হয়। প্রশাসনের আধিকারিকেরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জেনারেটর ঘরে যান। দেখা যায়, তিনটি পেটি রাখা। খুলে উদ্ধা হয় অনেক ওষুধ এবং ইঞ্জেকশন।

কী ভাবে এল ওই ওষুধপত্র?

Advertisement

এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, যে সমস্ত হাসপাতালে ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান নেই সেখানে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এলাকার কোনও ওষুধের দোকান রাতভর খোলা রাখতে হয়। ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংগঠন মানবাজারের হাসপাতাল সংলগ্ন তিনটি ওষুধের দোকানকে পালা করে রাতে খোলা রাখার দায়িত্ব দিয়েছিল। প্রশাসন সূত্রের খবর, চেপে ধরতেই ওই জেনারেটর অপারেটর জানান, তিনটি দোকান তাঁকে ওষুধের তিনটি পেটি দিয়েছে। ওই দোকানগুলি রাতে খোলা থাকে না। তিনিই দরকার মতো পেটি থেকে রোগীদের ওষুধ বিক্রি করে দেন। এর জন্য দোকানগুলি তাঁকে মাসে কিছু টাকাও দেয়।

এই ঘটনা শুনে তাজ্জব বনে যান প্রশাসনের আধিকারিকেরা। তাঁরা বলেন, ‘‘ওই ঘরের গরম আর নোংরা পরিবেশে ওষুধ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অনেক ওষুধ রেফ্রিজারেটরে রাখতে হয়। সেগুলি যদি ঠিক ভাবে সংরক্ষণ না করা হয় তাহলে কোনও কাজেই আসে না।’’ ওই জেনারেটর অপারেটরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে তাঁকে ব্যক্তিগত বন্ডে ছেড়ে দেয় পুলিশ। মহকুমাশাসক (মানবাজার) সঞ্জয় পাল বলেন, ‘‘ওই তিন দোকানদারকে বৃহস্পতিবার রাতে ডেকে তাঁদের হাতে ওষুধ তুলে দিয়েছি। ভবিষ্যতে এই ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ এই ব্যাপারে ওই তিন দোকানদারের কেউই মুখ খুলতে চাননি।

তবে প্রশাসনের কর্তাদের একাংশেরই আশঙ্কা, এই কারবারের ফলে গুণমান নষ্ট হয়ে যাওয়া ওষুধ ওই হাসপাতালের রোগীদের দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। ঘটনা জেনে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘জীবনদায়ী ওষুধ এই ভাবে জেনারেটর ঘরে রাখা অত্যন্ত অনৈতিক এবং বিপজ্জনক। বিষয়টি বিশদে খোঁজ নিচ্ছি।’’ খোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন পুরুলিয়া জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়ও। তিনি বলেন, ‘‘ওই ব্যবসায়ীদের রাতে দোকান খুলে রাখার দায়িত্ব ছিল। এই ব্যাপারে সিএমওএইচ-এর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’’ ওষুধ ব্যবসায়ী সংগঠনের রাজ্য কমিটির সদস্য মানবাজারের বাসিন্দা সমীর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওষুধের সঙ্গে মানুষের জীবন মরণ জড়িয়ে থাকে। আমরা এই ধরনের অনৈতিক কাজকে সমর্থন করি না। সংগঠন এর দায় নেবে না।’’

বিএমওএইচ (মানবাজার) রামকৃষ্ণ হেমব্রম বলেন, ‘‘আমি সদ্য দায়িত্ব পেয়েছি। আগে কী হয়েছে জানতাম না। এমনটা যাতে ভবিষ্যতে না হয় সেটা দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন