চলছে পুরপ্রধানের শপথগ্রহণ।
ফের ঝালদায় পুরবোর্ড গঠন করল কংগ্রেস। তবে এ বার ১০ বছর পরে নিরঙ্কুশ ভাবে। বৃহস্পতিবার শপথ নিয়ে পুরপ্রধানের কুর্সিতে বসলেন মধুসূদন কয়াল। অতীতে কংগ্রেসের হয়ে মধুসূদনবাবু তিন বার ঝালদার পুরপ্রধানের কুর্সিতে বসেছেন।
কে হতে চলেছেন পুরপ্রধান? এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই ঝালদায় জল্পনা তুঙ্গে উঠেছিল। মধুসূদন কয়াল নাকি প্রদীপ কর্মকার, এই ছিল চর্চার বিষয়। তবে জল্পনার অবসান ঘটিয়ে এ দিন পুরপ্রধানে শপথ নেন মধুসূদনবাবু। অতীতে কংগ্রেস ছেড়ে এই দুই নেতাই দল বদলে তৃণমূলে গিয়েছিলেন। পুরনির্বাচনের আগে ফের দু’জনেই দলে ফেরেন। ফের কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দু’জনে জয়ীও হন। দু’জনের মধ্যে টানাপড়েনে শেষ পর্যন্ত প্রদীপবাবু লড়াই থেকে সরে যান। তিনি পুরপ্রধান হিসেবে মধুসূদনবাবুকে মেনে নেন বলেই কংগ্রেস সূত্রের খবর।
মোট ১২টি আসেনের ঝালদা পুরসভায় কংগ্রেস এ বার একক ভাবে ৭টি আসন পেয়ে সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। ফরওয়ার্ড ব্লক ২টি, সিপিএম ১টি ও নির্দল প্রার্থীরা ২টি আসন পান। বৃহস্পতিবার ঝালদা পুরসভা চত্বরে নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠান হয়। সবাইকে শপথবাক্য পাঠ করান পুরুলিয়ার মহকুমাশাসক (পশ্চিম) নিমাইচাঁদ হালদার। শপথের আগে সভাপতি পদে কংগ্রেসের পিন্টু চন্দ্র প্রদীপ কর্মকারের নাম প্রস্তাব করেন। বামফ্রন্টের তপন কান্দু কাঞ্চন চট্টোপাধ্যায়ের নাম প্রস্তাব করেন সভাপতি পদে। দু’টি নাম আসায় ভোটাভুটি হয়। ভোটে ৭-৫ ফলে প্রদীপবাবুই সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।
এর পরে সভা পরিচালনা করেন প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রদীপবাবুই। কংগ্রেসের পক্ষে মধুসূদন কয়ালের নাম পুরপ্রধান হিসেবে প্রস্তাব করা হয়। বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে পাল্টা তপন কান্দুর নাম প্রস্তাব করা হয়। ঝালদার দুই প্রাক্তন পুরপ্রধানের মধ্যে গোপন ব্যালটে ভোটাভুটি হলে মধুসূদনবাবু একই ভাবে ৭-৫ ফলে জয়ী হয়ে পুরপ্রধানের কুর্সিতে বসেন। উপপুরপ্রধান হলেন মহেন্দ্রকুমার রুংটা।
আগে দু’বার অল্প সময়ের জন্য মধুসূদনবাবু ঝালদার পুরপ্রধান হয়েছিলেন। তবে পূর্ণসময়ের জন্য পুরপ্রধানের দায়িত্ব সামলেছেন ১৯৯০-’৯৪ সালে। এ নিয়ে তিনি চারবার পুরপ্রধান হলেন। গত পাঁচ বছরে এই পুরসভায় বারবার অনাস্থায় পুরপ্রধান সরেছে। তিনজনকে পুরপ্রধান হিসেবে পেয়েও ঝালদার মানুষের ক্ষোভ, গত পাঁচ বছরে রাজনীতির খেলাই শুধু দেখেছেন তাঁরা। ছিঁটেফোঁটা উন্নয়ন হয়নি। এ বার তাঁরা চেয়েছিলেন, একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ কোনও দল পুরসভার দায়িত্বে আসুক, যাতে আগামী পাঁচ বছর নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে উন্নয়নের কাজ হতে পারে।
কংগ্রেস কর্মীদের উল্লাস।
পুরপ্রধান হয়েই মধুসূদনবাবু বলেছেন, ‘‘আমার প্রথম লক্ষ্য ঝালদার মানুষের পানীয় জলের সংস্থান করা। রাস্তা, নিকাশিতেও আমাদের নজর থাকবে।’’ আর প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রদীপবাবু বলছেন, ‘‘অনেকদিন পরে ঝালদা আমাদের হাতে এসেছে। ফলে আমাদেরও দায়িত্ব বেড়েছে। মানুষের চাহিদা মোতাবেক ঝালদার রাস্তাঘাট পরিষ্কার, নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর সঙ্গে পানীয় জলের উন্নয়ন করতে চাই।’’ আর বামফ্রন্টের তপন কান্দু বলেছেন, ‘‘ঝালদার উন্নয়নের প্রশ্নে গঠনমূলক বিরোধিতা জারি থাকবে। তবে উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা পুরসভাকে সহায়তা করব।’’
পুরভবনের সামনে দিয়ে চলে গিয়েছে পুরুলিয়া-রাঁচি রাস্তা। এ দিন শপথ উপলক্ষ্যে চড়া রোদ মাথায় নিয়েই সেই রাস্তায় সকাল থেকে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা ভিড় করেছিলেন। মাইকের গানে নাচের সঙ্গেই চলে মিষ্টিমুখ।
ছবি: প্রদীপ মাহাতো।