পুরুলিয়া হাসপাতাল

মারধরে অভিযুক্ত গ্রেফতার

পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের সিকিওরিটি ইনচার্জকে মারধরের ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম গণেশ চক্রবর্তী, বাড়ি পুরুলিয়া শহরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৮
Share:

ধৃত: গণেশ চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র

পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের সিকিওরিটি ইনচার্জকে মারধরের ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম গণেশ চক্রবর্তী, বাড়ি পুরুলিয়া শহরে। তাঁর বিরুদ্ধে ওয়েস্টবেঙ্গল মেডিকেয়ার সার্ভিস পার্সন অ্যান্ড মেডিকেয়ার সার্ভিস ইন্সস্টিটিউশন (প্রিভেনশন অব ভায়োলেন্স এন্ড ড্যামেজ টু প্রপার্টি) অ্যাক্ট ২০০৯ মোতাবেক মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার ধৃতকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

Advertisement

পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে দালালদের দাপটের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবারের ঘটনার পরে হাসপাতালের সিকিওরিটি ইনচার্জ প্রশান্ত সিংহ মহাপাত্রের বিরুদ্ধেও এক মহিলা শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই অভিযোগেরও তদন্ত শুরু হয়েছে।

সদর হাসপাতালের চিকিৎসা করাতে গ্রাম থেকে আসা রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা প্রায়ই দালালদের শিকার হন। হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে দেওয়া, ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত জোগাড় করে দেওয়ার নামে রোগীর পরিজনদের পাকড়াও করে দালালরা। তার সঙ্গে রয়েছে পরিচিত ল্যাবরেটরি এবং ওষুধের দোকানে নিয়ে গিয়ে কমিশন আদায়। দালালদের অবাধ গতিবিধি ঠেকাতে ২০১১ সালে তৎকালীন জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কর্মীদের নিয়ে গড়া নিরাপত্তারক্ষী সংস্থাকে হাসপাতালে নিয়োগ করেন।

Advertisement

কিন্তু নিরাপত্তার কড়াকড়ি সত্বেও দালালরা এককাট্টা হয়ে চক্র চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। বছর দেড়েক আগে ওই হাসপাতালে শিশুচুরির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্তে নেমে সেই শিশুর কোনও হদিশ পায়নি। সম্প্রতি হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে আসা বলরামপুরের এক মহিলার কাগজপত্র নিয়ে চম্পট দেয় এক বহিরাগত।

শুক্রবার হাসপাতালের লোক পরিচয় দিয়ে ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের ভিতরে ঢুকে পড়েছিলেন এক বহিরাগত। তাঁকে বাইরে বের করে দেওয়ায় হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত নিরাপত্তা আধিকারিক প্রশান্ত সিংহ মহাপাত্রকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। হাসপাতালের কর্মীদের একাংশের দাবি, কড়াকড়ি থাকলেও অভিযুক্ত গণেশ চক্রবর্তীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে অবাধ যাতায়াত। শুক্রবার প্রশান্তবাবু পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়ায় বহিরাগত ওই ব্যক্তি নিজেকে ‘গণেশদার লোক’ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।

গণেশ নিজেকে জাহির করতে প্রায়ই বিভিন্ন নেতা মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ঘণিষ্ঠতা রয়েছে বলে দাবি করতেন। হাসপাতালের কর্মীদের একাংশের দাবি, তিনি কখনও নিজেকে মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, কখনও বিধায়ক নেপাল মাহাতোর লোক বলে দাবি করতেন। শুক্রবারও গণেশ নিজেকে তৃণমূলের জয়হিন্দ বাহিনীর পুরুলিয়া শহর কমিটির সভাপতি ও রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন।

সূত্রের খবর, ঘটনার পরে গণেশ জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ পুষ্প বাউড়িকে ফোনও করেন। তাঁর কাছে বিষয়টি শুনে পুষ্পদেবী স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তাকে ফোন করে বিষয়টি দেখতে বলেন। পুষ্পদেবী এ দিন বলেন, ‘‘গণেশ আমাকে ফোন করে শুধু বলেছিলেন হাসপাতালে ঝামেলা হচ্ছে।’’ তবে ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক নবেন্দু মাহালি হাসপাতালে পৌঁছন। তিনি জানান, গণেশের সঙ্গে দলের কোনও যোগই নেই। শনিবার তৃণমূলের পুরুলিয়া শহর কমিটির সভাপতি বৈদ্যনাথ মণ্ডলও বলেন, ‘‘গণেশের সঙ্গে বর্তমানে দলের কোন সম্পর্ক নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন