‘স্বপ্নাদেশ’, কবর থেকে মৃতদেহ তোলার চেষ্টা

শনিবার কাহিনগর গিয়ে জানা গেল, মৃত রোশমি খাতুনের দেহ বাড়ি সংলগ্ন কবরস্থান থেকে তোলার চেষ্টা হয়েছিল। মা মহুবা বিবি জানান, ৪৪ দিন আগে মেয়ে খেলতে খেলতে বাড়ির দরজায় পড়ে যায়। মুরারই হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে জানায়।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

কাহিনগর (মুরারই): শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৮ ০২:৩০
Share:

এই সেই জায়গা। মুরারইয়ের কাহিনগরে।ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।

বাড়ির সাত বছরের মেয়ের মৃত্যু হয়েছে ৪৪ দিন আগে। সেই মেয়ে বেঁচে আছে এমন ‘স্বপ্নাদেশ’ পেয়ে, গুনিনের প্ররোচনায় মৃতদেহ কবর থেকে তোলার চেষ্টার অভিযোগ উঠল। বীরভূমের মুরারইয়ের কাহিনগর গ্রামের শুক্রবার রাতের ঘটনা। গ্রামের কেউ টের পেয়ে সে সব পুলিশকে জানায়। রাতেই মুরারই পুলিশ এলাকায় গিয়ে মুর্শিদাবাদের সুতির যুবক, গুনিন কাবিরুল শেখকে আটক করে। সে আদতে ট্রাকের খালাসি। বুধবারই গুনীনের প্ররোচনায় বাঁকুড়ার সারেঙ্গায় দু’বছর আগে মারা যাওয়া ছেলেকে বাঁচানোর জন্য কবর খুঁড়তে গিয়েছিলেন বাবা।

Advertisement

শনিবার কাহিনগর গিয়ে জানা গেল, মৃত রোশমি খাতুনের দেহ বাড়ি সংলগ্ন কবরস্থান থেকে তোলার চেষ্টা হয়েছিল। মা মহুবা বিবি জানান, ৪৪ দিন আগে মেয়ে খেলতে খেলতে বাড়ির দরজায় পড়ে যায়। মুরারই হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে জানায়। তার পরে ময়না-তদন্ত না করেই মাটি দেওয়া হয়। রোশমির দিদা মোসলেমা বিবির কথায়, ‘‘আমার ছোট মেয়ে ফেন্সি ওকে খুব স্নেহ করত। রোশমী মারা যাওয়ার পরে নবম শ্রেণিতে পড়া ফেন্সি স্কুল যাওয়া ছেড়ে দেয়। ওই প্রথম স্বপ্নাদেশের কথা জানতে পারে।’’ পরে পরিবারের একাধিক সদস্য একই স্বপ্নাদেশ পেয়েছেন বলে পরিবারের বিশ্বাস। সে কথা জেনে রোশমির বাবা সারিফুল শেখ কাবিরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সারিফুলও পেশায় ট্রাকের খালাসি।

এলাকায় পৌঁছে জানা গেল, বছর তিনেক আগেও এমনই এক ঘটনায় এক তান্ত্রিককে মারধর করা হয়। গ্রামের বাসিন্দা আজারুল ইসলামের কথায়, ‘‘তখন এলাকায় একাধিক বার সচেতনতা প্রচার হয়েছিল। কোনটা বুজরুকি, কোনটা কুসংস্কার বোঝানো হয়েছিল। তার পরেও ফের এমন ঘটনা আমরা মানতে পারিনি। তাই পুলিশে খবর দিওয়া হয়েছিল।’’ মুরারই থানা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ঝাড়খণ্ড সীমানা-ঘেঁষা এই জনপদ। পলসা অঞ্চলের মধ্যে কাহিনগর গ্রামেই সব থেকে শিক্ষিত লোকের বাস। গ্রামে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এবং উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। কমবেশি ৪০ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত। কৃষি প্রধান এলাকা হলেও চাকুরীজীবী বা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন এমন অনেক পরিবারও আছে।

Advertisement

ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে সচেতনতা বাড়ানোর রাস্তাতেই হাঁটতে চান বিডিও (মুরারই ১) তপন হালদার। কাহিনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকহাফিজউদ্দিন শেখ জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করবেন। বিজ্ঞান মঞ্চের মুরারই শাখার সহ সভাপতি সুনীলসাগর দত্ত জানান, দু’দিনের মধ্যেই এলাকায় শিবির করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন