মারা গেলেই ভাল হত, আক্ষেপ নির্যাতিতের

গলায় জুতোর মালা পরিয়ে ঘোরানোর সময় কেউ লাঠিপেটা করছিল, কেউ পাথর ছুড়ছিল। নির্যাতনের ২৪ ঘণ্টা পরেও সেই মানসিক ধাক্কা কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছেন না মেজিয়ার পায়রাশোলের যুবক সমীরণ ওরফে কেশব মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০১:২৫
Share:

ফাইল চিত্র।

গলায় জুতোর মালা পরিয়ে ঘোরানোর সময় কেউ লাঠিপেটা করছিল, কেউ পাথর ছুড়ছিল। নির্যাতনের ২৪ ঘণ্টা পরেও সেই মানসিক ধাক্কা কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছেন না মেজিয়ার পায়রাশোলের যুবক সমীরণ ওরফে কেশব মুখোপাধ্যায়। গুরুতর চোট থাকায় বৃহস্পতিবার রাতেই তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। গ্রেফতারও হয়েছে এক অভিযুক্ত। কিন্তু, ছেলেকে কী ভাবে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন, ভেবে আকুল চণ্ডী মুখোপাধ্যায়। তিনি শুধু বলে চলেছেন, ‘‘বাঁচার ইচ্ছেটাই হারিয়ে ফেলেছে ছেলে! কী করে ওকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যাব জানি না।’’

Advertisement

প্রেম করার ‘সাজা’ দিতে বৃহস্পতিবার মেজিয়ার সরকাডিহি গ্রামে আটক করে ট্রেকার চালক সমীরণকে গ্রামের ভিতরে এক তরুণীর পরিজনেরা টেনে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ। সমীরণের অভিযোগ, মাথার চুল কেটে দিয়ে জুতোর মালা পরিয়ে তাঁকে গ্রামে ঘোরানো হয়। সেই সময় অনেকে মধ্যযুগীয় বর্বরতা চালায় তাঁর সঙ্গে। পুলিশ গিয়ে উদ্ধার না করলে হয়তো খুন হয়ে যেতেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ওই যুবক।

সমীরণের বাবা শুক্রবার আক্ষেপ করছিলেন, “এমন ঘটনা কখনও ঘটতে পারে বলে কল্পনা করিনি। একটা নির্দোষ ছেলেকে গ্রামের লোকজন কোনও কারণ ছাড়াই অত্যাচার করল!” তিনি জানাচ্ছেন, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রাতভর ঘুমোতে পারেননি সমীরণ। মাঝে মধ্যেই ডুকরে কেঁদে উঠেছেন তিনি। চণ্ডীবাবু বলেন, “গ্রামে চুল কেটে জুতোর মালা পরিয়ে ঘোরানোর মানসিক ধাক্কা কিছুতেই ছেলে কাটিয়ে উঠতে পারছে না। শুধু বলছে, এ ভাবে বেঁচে থাকার থেকে মরে গেলেই ভাল হত। কিন্তু তার কিছু হয়ে গেলে আমরা বাঁচব কী করে?’’

Advertisement

ভেঙে পড়েছেন সমীরণের মা কল্যাণীদেবীও। তিনি বলেন, “স্বামী অল্প জমিতে চাষ করে। ছেলের রোজগারেই আমরা মাথা তুলে বাঁচছিলাম। এখন কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।” সমীরণের দাবি, সরকাডিহি গ্রামের এক কলেজ ছাত্রীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগেই সেই সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু, তাঁরা রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেছেন এমন একটা রটনা থেকেই তরুণীর পরিজন ও কিছু গ্রামবাসী তাঁর উপরে নির্যাতন করেন বলে তাঁর অভিযোগ। কল্যাণীদেবী বলেন, “আমার নির্দোষ ছেলের উপরে যারা এমন পাশবিক অত্যাচার চালাল, তাদের কড়া শাস্তি দিতেই হবে। এক জনও যেন ছাড়া না পায়।”

অভিযুক্তদের মধ্যে তরুণীর এক আত্মীয় আনন্দ মণ্ডলকে বৃহস্পতিবারই গ্রেফতার করে পুলিশ। এ দিন তাকে বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়। আদালত চত্বরে অবশ্য ধৃত ঘটনাটি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। পুলিশ জানিয়েছে, সরকাডিহি গ্রামে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘটনায় বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ দিনও চেষ্টা করে ওই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন