ব্যাঙ্ক থেকে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ যায় সুমন মণ্ডলের। —প্রতীকী চিত্র।
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে রক্তারক্তি কাণ্ড বাঁকুড়়ার কোতুলপুর থানার মিল মোড় এলাকায়। স্ত্রীর প্রেমিককে তাড়া করে খুন করার অভিযোগ উঠল স্বামীর বিরুদ্ধে। গ্রেফতার মোট চার জন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মৃতের নাম সুমন মণ্ডল। কোতুলপুর থানার পাহাড়পুর গ্রামের বাসিন্দা ওই যুবক একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী। বছর খানেক আগে পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক বধূর সঙ্গে প্রণয়ঘটিত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ওই বধূর স্বামী কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। মুম্বইয়ে একটি গয়না তৈরির কারখানার শ্রমিক রামপ্রসাদ রায় সম্প্রতি বাড়ি ফিরে স্ত্রীর পরকীয়ার কথা জানতে পারেন। ওই নিয়ে দাম্পত্য কলহ শুরু হয় তাঁদের। এর পর স্ত্রীর প্রেমিককে হুমকি দেন রামপ্রসাদ।
বাধা, অশান্তি সত্ত্বেও সুমন পরস্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা করছিলেন। তার পরেই শুক্রবার রাতে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। পুলিশ সূত্রে খবর, মাস খানেক ধরে স্ত্রীর প্রেমিককে খুনের ছক কষেন স্বামী। সুমনের পরিবারের দাবি, শুক্রবার সকালেও খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তাতে আমল দেননি যুবক। তিনি আর পাঁচটা দিনের মতো শুক্রবার সকালে বাইক নিয়ে কর্মস্থলে বেরিয়ে যান। রাতে ব্যাঙ্ক থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তখনই হামলা হয় তাঁর উপরে।
অভিযোগ, কোতুলপুর মিল মোড় এলাকায় কয়েক জন সুমনের চোখে টর্চের আলো ফেলেন। চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ায় বাইকের গতি কমিয়ে দেন যুবক। ঠিক তখনই তাঁকে কয়েক জন ছুরি নিয়ে আঘাত করেন। বিপদ বুঝতে পেরে বাইক ফেলে দৌড়োতে শুরু করেন ব্যাঙ্ককর্মী। রাস্তার পাশে আলুর খেতের উপর দিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাঁকে তাড়া করা হয়। এলোপাথাড়ি ছুরির কোপ এসে পড়ে যুবকের শরীরের নানা জায়গায়। রক্তক্ষরণ হয়ে ওই স্থানেই মৃত্যু হয় তাঁর। সুমনের মৃত্যু নিশ্চিত হতেই তাঁর দেহ ফেলে পালিয়ে যান অভিযুক্তেরা। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা সুমনের দেহ পড়ে থাকতে দেখে কোতুলপুর থানায় খবর দেন।
ঘটনাক্রমে যুবকের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শনিবার ময়নাতদন্তের জন্য দেহ পাঠানো হয়েছে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে। মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে মূল অভিযুক্ত রামপ্রসাদ-সহ তাঁর তিন বন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার সকলকে বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন রামপ্রসাদ। আদালতে যাওয়ার পথে তিনি বলেন, ‘‘সুমন আমার সংসারটা কুচি কুচি করে দিয়েছিল। কিচ্ছু বাকি রাখেনি...।’’
বিষ্ণুপুরের এসডিপিও সুপ্রকাশ দাস বলেন, ‘‘খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত একটি ধারালো অস্ত্র এবং হাতুড়ি জাতীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার পর পরেই মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এ ব্যাপারে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হবে।’’