জখম কর্মী।
শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ফের তেতে উঠল নানুরের বালিগুণী গ্রাম।
গ্রাম দখলকে ঘিরে সোমবার রাতভর বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের প্রাক্তন যুব নেতা কাজল শেখের অনুগামীদের বাড়িতে ভাঙচুর, লুঠপাট এবং মারধরের অভিযোগ উঠেছে বর্তমান জেলা যুব সভাপতি গদাধর হাজরার অনুগামীদের বিরুদ্ধে। গদাধর অনুগামীরা অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের পাল্টা দাবি, সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতেই হামলা চালিয়েছে। যদিও সিপিএম নেতৃত্ব ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, কোনও পক্ষই কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে, বোমাবাজির খবর পেয়ে রাতে এলাকায় গিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গ্রাম দখল ঘিরে বোমাবাজির ঘটনা অবশ্য ওই গ্রামে নতুন নয়। একসময় সেখানে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ ছিল নিত্য দিনের ঘটনা। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের পরে এলাকায় সিপিএমের অস্তিত্ব কার্যত ধুয়ে মুছে যায়। তখন গ্রাম তথা ক্ষমতা দখলের লড়াই শুরু হয় তৃণমূলেরই দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে। প্রথম দিকে কাজলের সঙ্গে গদাধরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে দু’পক্ষের গোষ্ঠী বিবাদ চরমে ওঠে। অধিকাংশ গ্রামেই দুই গোষ্ঠীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। বালিগুণী গ্রামেও এর আগে একাধিক বার দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে কাজল অনুগামী হিসাবে পরিচিত পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্মাধ্যক্ষকে মারধর করে গ্রামছাড়া করার অভিযোগ ওঠে গদাধর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। নির্বাচনের আগে কমিশনের নির্দেশে ওই কর্মাধ্যক্ষকে ফেরানো হলেও বর্তমানে ফের তিনি গ্রাম ছাড়াই রয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার রাত ১২টা থেকে ওই গ্রামে ব্যাপক বোমাবাজি শুরু হয়। এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ এলাকায় গিয়ে দেখা গেল বুদু শেখের বাড়ির উঠোনে তখনও দু’টি তাজা বোমা পড়ে রয়েছে। দরজায় বোমাবাজির চিহ্ন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে বাক্স, কাগজপত্র, চাল, বাসন-হাঁড়ি। বুদুর অভিযোগ, ‘‘আমরা কাজল ভাইয়ের অনুগামী। সেই আক্রোশে গদাধরের লোকেরা রাত ১২টা নাগাদ বহিরাগতদের নিয়ে আমাদের বাড়িতে চড়াও হয়। প্রথমে ধাক্কাধাক্কি করে দরজা খুলতে বলে। দরজা না খোলায় ওরা বোমাবাজি করে। তারপর প্রাচীর টপকে ঢুকে আমাদের একটি ঘরে আটকে রেখে লুঠপাট চালায়।’’ মেরে সুজন মোল্লা নামে এক জনের মাথাও ফাটিয়ে দেওয়া হয় বলে তাঁর অভিযোগ। ‘‘ফের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় আমরা পুলিশের কাছে অভিযোগ পর্যন্ত দায়ের করতে যেতে পারিনি,’’—দাবি বুদুর।
বালিগুণীতে দরজায় বোমাবাজি।
ওই অভিযোগ অবশ্য মানেননি নিজেদের গদাধর অনুগামী হিসাবে দাবি করা মর্তুজা শেখ, টিপু শেখ, মনি শেখরা। মর্তুজার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল তার বাড়ির দরজার একটি কড়া ভাঙা, বারন্দার গ্রিল ওপড়ানো, ভেঙে পড়ে রয়েছে একটি মোবাইল। তাদের অভিযোগ, ‘‘গ্রাম দখল করে তোলাবাজির জন্য সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই রাতে হামলা চালিয়েছে। তারপর বোমাবাজি করতে গিয়ে পুলিশের তাড়া খেয়ে পালানোর সময় পড়ে গিয়ে মাথা ফাটিয়ে মারধরের নাটক করছে।’’
স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আনন্দ ভট্টাচার্য অবশ্য দাবি করেছেন, ওই ঘটনা তৃণমূলেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ। কাজলের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, তাঁর এক ঘনিষ্ঠ অনুগামীর দাবি, ‘‘এলাকায় একছত্র আধিপত্য কায়েম করতে শুধু বালিগুণীই নয়, অন্যান্য গ্রামেও সন্ত্রাস চালাচ্ছে গদাধর হাজরার অনুগামীরা।’’ অন্য দিকে, মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় গদাধরের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘রাতে বোমাবাজির শব্দ শুনেছি। তবে, কারা কী কারণে বোমাবাজি করেছে জানি না। তাই কোনও মন্তব্য করব না।’’
—নিজস্ব চিত্র