Mamata Banerjee

বক্তৃতা থামাল পেশাগত দাবি

বক্তৃতার মধ্যে হইচই শুনে দৃশ্যতই বিরক্ত হন মমতা। পরে অবশ্য দাবিদাওয়া লেখা কাগজ চেয়ে নিয়ে কিছু বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৩২
Share:

নভেম্বরের শেষে বাঁকুড়ার খাতড়ার প্রশাসনিক জনসভা থেকে মাসোহারা বেতনের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান, প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ভাতা দেড় হাজার থেকে বাড়িয়ে তিন হাজার টাকা করা হয়েছে। এর পরে, গত ১১ জানুয়ারি নদিয়ার রানাঘাটে মমতার জনসভা চলাকালীন পেশাগত দাবিদাওয়া জানানোর চেষ্টা করেন ওই কর্মীদের একাংশ। ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল সোমবার, পুরুলিয়া ২ ব্লকের হুটমুড়ার জনসভাতেও।

Advertisement

বক্তৃতার মধ্যে হইচই শুনে দৃশ্যতই বিরক্ত হন মমতা। পরে অবশ্য দাবিদাওয়া লেখা কাগজ চেয়ে নিয়ে কিছু বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।

এ দিন সভা শুরুর মিনিট কুড়ি পরে মঞ্চের নীচে হইচই শুনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রত্যেকটা মিটিংয়ে আমি দেখছি এটা একটা নেশা হয়ে গেছে।’’ কারা কী দাবি জানাচ্ছে, তিনি জানতে চাইলেও মঞ্চ পর্যন্ত আওয়াজ এসে পৌঁছয় না। মমতা বলেন, ‘‘কিছু বলার থাকলে আমায় চিঠি লিখে জানাতে হবে। আমি দেখে বলে দেব। প্রতিদিন আমার মিটিংয়ে বিজেপি শিখিয়ে দিচ্ছে আর এ সব করছে।’’

Advertisement

কিছুক্ষণ পরে, অন্য প্রসঙ্গের মধ্যেই মমতা বলেন, ‘‘তোমাদের একটু বকেছি, কিছু মনে কোরো না। আমার নিজেরই মনটা খারাপ লাগছে।’’

দাবিদাওয়া লেখা কাগজ মঞ্চে আনিয়ে, পড়ে বলেন, ‘‘মাসমাইনে তো হবে না। আপনাদের মনে রাখতে হবে, প্রাণিবন্ধু, প্রাণিমিত্রা হচ্ছে ইন্সেন্টিভের চাকরি।’’ ষাট বছর পর্যন্ত কাজ ও অবসরকালীন সুবিধার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন মমতা বলেন, ‘‘প্রাণিবন্ধু ও প্রাণিমিত্রারা কাজ করুন। ভবিষ্যতে একটু একটু করে ঠিক জায়গায় নিয়ে আসব। চিন্তা করবেন না।’’

পশ্চিমবঙ্গ প্রাণিসম্পদ বিকাশ কর্মী ইউনিয়নের পুরুলিয়ার সভাপতি উমাকান্ত মাহাতো জানান, প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের অধীনে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন প্রাণিমিত্রা, প্রাণিবন্ধু, প্রাণিসেবী ও এআই ওয়ার্কাররা। সবারই কাজ মূলত গ্রামে গ্রামে ঘুরে গবাদি পশুর টিকারকণ আর প্রাণী প্রতিপালনে সাহায্য করা। মাসিক বেতনের দাবিতে তাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। উমাকান্তবাবুর অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েও কথা রাখেননি।’’

গত ২৩ নভেম্বর খাতড়ার প্রশাসনিক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রীকে জানানোয় তিনি আমলাদের বলেছিলেন, ‘‘ওদের ইন্সেনটিভ না দিয়ে মাসিক যা হয় একটা করে দাও। হাতে টাকা নেই। বেশি কিছু এখন দিতে পারব না।’’ এ দিনের জনসভায় তিনি বলেন, ‘‘আমার মিটিংয়ে গিয়ে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না। আমি করতে পারব না। কিছু ঘোষণা করার আগে অর্থ মন্ত্রকের থেকে অনুমতি নিতে হয় আমাকেও।’’

এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো প্রাণিমিত্রা শ্যামলী মিশ্র ও সাধনা ঘোষাল বলেন, ‘‘যে টাকা পাই, তাতে সংসার চলে না। মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে চেয়েছি, মাসে পনেরো হাজার টাকা বেতন দরকার।’’ ষাট বছর পর্যন্ত কাজের নিশ্চয়তা এবং অবসরকালীন সুবিধার আশ্বাস প্রসঙ্গে উমাকান্তবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্তু মাসিক বেতনের ব্যাপারে কোনও আশ্বাস না পেয়ে জেলার সাড়ে সাতশো কর্মী হতাশ।”

সভায় গোলমাল পাকানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্যের সর্বত্রই বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী তাই সভাস্থলেও
বিজেপিই দেখছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন