মাম্মি বহত ডাঁটেঙ্গি, ফির ভি মিলনা চাহতি হুঁ

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১৫
Share:

কুমারী বেবি। নিজস্ব চিত্র।

শুধু কতগুলো নাম। সেই তথ্যে ভর করেই খুঁজে বের করতে হবে একটি পরিবারকে! বছর দশেক আগে হারিয়ে যাওয়া এক কিশোরীকে পরিবারের হতে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে তবেই। গত কয়েক মাসে বিস্তর চেষ্টা করেও সে কাজে সাফল্য পায়নি বীরভূম জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি এবং চাইল্ড লাইন। তবু হাল না ছেড়েই এখনও চলছে খোঁজ।

Advertisement

গত বছরের অগস্টে বীরভূম শিশু কল্যাণ দফতরের হেফাজতে কুমারী বেবি নামে বছর পনেরোর এক কিশোরীকে রেখে গিয়েছিলেন হরিয়ানার একটি সরকারি হোম এবং যমুনা নগরের শিশু কল্যাণ দফতরের কর্মীরা। খোঁজ শুরু তারপর থেকেই।

হারিয়ানা থেকে পাওয়া তথ্য এবং মেয়েটি যা বলেছে তা হল, রামপুরহাটের কোথাও বাড়ি ওই কিশোরীর। খুব ছোট বেলায় বাবা মুজিবর খান মারা যান। তারপরে মা আশিতা বিবি আবার বিয়ে করেন। কুমারী বেবির যখন বছর পাঁচেক বয়স, তার উপর অকথ্য অত্যাচার করতেন সৎ বাবা। সেই জন্য বাড়ি ছেড়ে রামপুরহাট থেকে ট্রেন ধরে পালিয়ে ছিল সে!

Advertisement

তার কত দিন পরে জানা নেই। এক সময় হরিয়ানার যমুনানগর বাসস্ট্যান্ড থেকে কুমারীকে উদ্ধার করে যমুনা নগর পুলিশ। দিনটা ছিল ২০০৫ সালের ২ জুলাই। সেখান থেকেই ওই শিশুকন্যার ঠিকানা হয় ছাছরাউলি-র বালকুঞ্জ। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত একটি সরকারি গার্লস স্কুলে পড়াশোনা করে। এ দিকে, একই সঙ্গে যমুনানগরের চাইল্ড ওয়েল ফেয়ার কমিটি মেয়েটির কাউন্সেলিং চালাচ্ছিল। ক্রমশ তাঁরা জানতে পারেন, কুমারীর বাড়ি রামপুরহাটে। তারপরই জেলা শিশু কল্যাণ কমিটির সঙ্গে যোগযোগ। ও কিশোরীকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যে পদক্ষেপ করতে অনুরোধ করে।

ক্রমশ কুমারী তার তিন ভাইয়ের নামও জানিয়েছে। সেই তিন ভাই হল আসিদুল, সাফিউল ও রবিউল। তারপর থেকেই খোঁজ চলছে মাঝারি উচ্চতার শ্যামলা রঙের ওই কিশোরীর মা, ভাইদের।

চাইল্ড লাইনের জেলা সমন্বায়ক দেবাশিস ঘোষ, বীরভূম চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান নিত্যানন্দ রায়েরা বলছেন, ‘‘ইতিমধ্যেই খবর দেওয়া হয়েছে রামপুরহাট ১ ও ২ ব্লকের বিডিও, সংশ্লিষ্ট থানা, বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকা জেলা ও ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সর্বত্র। তারপরেও ছ’সাত মাস বিস্তর চেষ্টা করেও কোনও খোঁজ মেলেনি।’’

সেই সূত্রের উঠে আসছে আরও একটি মত। একাংশ বলছেন, কিশোরী যখন হারিয়ে গিয়েছিলেন তখন ওর বয়স মাত্র পাঁচ। ওই বয়সে কোনও কিছুই খুব স্পষ্ট করে মনে থাকে না। আবছা একটা ইতিহাস, টুকরো কিছু নাম মনে থাকে মাত্র। সেই কথা মনে রেখে অনেকের মত, কিশোরী যে নামগুলি বলেছে ওই নামের না হলেও বাস্তবে হয়তো কাছাকাছি নামের কেউ রয়েছেন। সেই বিষয় মাথায় রেখে বিস্তারিত খোঁজে কিশোরীকে পরিবারের কাছে ফেরানো হয়তো সম্ভব।

বীরভূম জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান নিত্যানন্দ রায় বলছেন, ‘‘প্রথমে সিউড়িতে একটি হোমে রাখা হয়েছিল কিশোরীকে। কিন্তু এখান থেকে সন্ধান চালাতে অসুবিধা হওয়ায় রামপুরহাটের হোমে পাঠানো হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে।’’.

হোমের দায়িত্ব থাকা তাপসী সালুই বলছেন, ‘‘এত দূর থেকে ওকে হোমে আনা হল। চাইব মাকে ফিরে পাক।’’ যাকে নিয়ে এত ভাবনা, সেই কিশোরীর মত জানতে চাওয়া হলে সে হিন্দিতে বলে, ‘‘পাতা নেহি ক্যায়া হোগা! সায়দ মাম্মি মুঝে বহত ডাঁটেঙ্গি। লেকিন মিলনা চাহতি হুঁ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement