বাঁকুড়ার জয়পুরে। নিজস্ব চিত্র
সময় বেশি নেই। তার আগেই পরিচর্যা করে ওদের সুস্থ-সতেজ করে তুলতে হবে। যাতে খুব দ্রুত মাটির ভিতরে শিকড় ছড়িয়ে সবুজ পাতা আকাশে মেলে ধরতে পারে। বন মহোৎসবে বিলি করার জন্য চারাগাছের পরিচর্যায় তাই এখন জোর ব্যস্ততা বাঁকুড়া জেলায় বন দফতরের বিভিন্ন নার্সারিতে।
জয়পুর রেঞ্জ অফিসের পিছনে ঘন শাল জঙ্গল ঘেরা প্রায় এক হেক্টর জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা জয়পুর কেন্দ্রীয় নার্সারির কর্মীদের এখন দম ফেলারও যেন ফুরসৎ নেই।
কাজের ফাঁকেই তারাপদ লোহার, দীপক লোহার, ছায়া লোহার, দুর্গা লোহার বলেন, ‘‘চারাগাছ গুলোকে আমরা সন্তান স্নেহে দেখাশোনা করি। ক’দিন পরেই বন মহোৎসবের সময় চারাগুলো নিয়ে যাওয়ার পরে গোটা চত্বর খাঁ খা করবে। তখন সবারই ওই ছোট্ট গাছগুলোর জন্য মন খারাপ হয়।’’
আশেপাশের গড়, ধরমপুর, কলজডাঙা, কাটু্ল,বৃন্দাবনপুর গ্রাম থেকে কাক ভোরে ওঁরা নার্সারিতে চলে আসেন। তারপর থেকে শুরু হয় গাছের যত্ন। কেউ চারাগাছের গোড়া থেকে আগাছা পরিষ্কার করেন, কেউ জল দেন, কেউ আবার পাতা তুলে দেখেন পোকামাকড় লেগেছে কি না। আগাছার পাতা কেটে পচিয়ে, পরিমাণ মতো গোবর সার মিশিয়ে জৈব সার তৈরি করছিলেন ষষ্ঠী লোহার। সেই সার দেওয়া হবে গাছের গোড়ায়। ষষ্ঠীর কথায়, ‘‘ওই সার পাওয়ার পরেই চারাগুলো আরও চাঙ্গা হয়ে উঠবে।’’
বিষ্ণুপুর পাঞ্চেতের ডিএফও নীলরতন পাণ্ডা বলেন, ‘‘১৪ জুলাই বন মহোৎসব দিবস পালন হবে। ২০ জুলাই পর্যন্ত সপ্তাহভর অনুষ্ঠান চলবে। প্রত্যেকে পাঁচটি করে গাছের চারা বিনামূল্যে দেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানগুলি ১০০টি করে এবং বিধায়কদের এক হাজার গাছের চারা দেওয়া হবে।’’
জয়পুরের নার্সারিও গাছের চারা দেওয়ার জন্য পুরোমাত্রায় প্রস্তুত। কী কী চারা গাছ বিলি করা হবে? বনকর্মী রোহিনী কুণ্ডু আর নিরঞ্জন পাত্রের নজরদারিতে বেড়ে উঠছে শিশু, পিয়াশাল, শাল, সেগুন, পিয়াল, বহেড়া, মহুল, শিরিষ, লালচন্দন, কাঠ বাদাম, জাম, সোনাঝুড়ির মতো চার লক্ষ চারা।
জয়পুরের রেঞ্জ অফিসার শম্ভুনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই রেঞ্জের ৫২টি বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যেরা দিন মজুরির ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে চারা গাছ তৈরি করছেন। এ ছাড়া বাইরের চারটি নার্সারিকেও ১০ হাজার করে চারা গাছ তৈরি করতে বলা হয়েছে।’’
শুধু সাধারণ মানুষ, প্রতিষ্ঠান বা জনপ্রতিনিধিকে বিলি করাই নয়, বন দফতর নিজেও জঙ্গলের ভিতরে এই সময়ে চারা রোপণ করবে। শম্ভুবাবু জানাচ্ছেন, জয়পুর রেঞ্জের চারটি বিটে প্রায় ১৪২ হেক্টর জমিতে চারা গাছ লাগানো হবে। সে জন্য ইতিমধ্যে তাঁরা মাটি কেটে গর্তও তৈরি করে ফেলেছেন। ডিএফও জানান, গাছ লাগানোর পরে তা কেমন বেড়ে উঠছে, তা দেখাশোনার জন্য বন দফতর একটি পর্যবেক্ষক দল তৈরির ভাবনা তাঁদের রয়েছে।
আর যাঁরা এখন রাত-দিন চারাগাছগুলোর সেবা করে যাচ্ছেন, তাঁদের একটাই আবেদন— ‘‘যাঁরা চারা নেবেন, অযত্ন যেন করবেন না। নিয়ম মতো পরিচর্যা করলে, এই গাছই অনেক কিছু ফিরিয়ে দেবে।’’