মায়ের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিকে অষ্টম গৌরব। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
মেধা ও পরিশ্রম যোগ হলে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও যে সাফল্য মেলে তা আরও এক বার প্রমাণ করলেন উচ্চ মাধ্যমিকে সম্ভাব্য অষ্টম স্থান পাওয়া গৌরব সিংহ। ৪৮৮ নম্বর পাওয়া বাঁকুড়া শহরের বঙ্গ বিদ্যালয়ের এই কৃতীর দারিদ্রের সঙ্গে লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন অনেকে।
গৌরবের বাড়ি বাঁকুড়া জেলার গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের কাপিষ্টায়। মাত্র দু’বছর বয়সে তিনি বাবাকে হারান। জমিজমা তেমন নেই। দুই ছেলে-মেয়েকে বড় করতে কী না করছেন গৌরবের মা অপরাজিতা সিংহ। কখনও মিড-ডে মিলের রান্নার কাজ করেন, কখনও আবার মুড়ি ভেজে সংসার চালান।
কাপিষ্টা হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন গৌরব। তবে, প্রবল আর্থিক সঙ্কটে গৌরবের উচ্চ মাধ্যমিক পড়া যখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল, সেই সময় এগিয়ে আসেন আত্মীয়েরা। বাঁকুড়া শহরের একটি বেসরকারি আবাসিক কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। গৌরবের অনটনের কথা শুনে তাঁরা ন্যূনতম অর্থের বিনিময়ে তাঁকে সেখানে রেখে কোচিং দেওয়ার আশ্বাস দেন। সেই ভরসায় বিজ্ঞান নিয়ে গৌরব ভর্তি হন বাঁকুড়া বঙ্গ বিদ্যালয়ে।
সোমবার মেধা তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে শুনে চমকে ওঠেন গৌরব। তিনি বলেন, “ফল ভাল হবে এ বিশ্বাস ছিল। কিন্তু রাজ্যের সেরা দশের তালিকায় নাম উঠে আসবে ভাবিনি।” তাঁকে সংবর্ধনা জানাবেন বলে ঠিক করে ফেলেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিমেষ চৌধুরী বলেন, “গৌরব অত্যন্ত অভাবী হলেও ওর মেধার তুলনা হয় না। স্কুলেরও মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমরা নিশ্চিত আগামী দিনেও সে সফল হবে।” এক সময়ে গৌরবকে সাহায্য করে ছিলেন শহরের চিকিৎসক বাণীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর আশ্বাস, ‘‘আগামী দিনেও ওঁর পাশে থাকব।’’
এ দিন ছেলের সঙ্গে স্কুলে এসেছিলেন অপরাজিতাদেবীও। ছেলের সাফল্যে গর্বিত হলেও তাঁর মনে চোরা স্রোত— গৌরব যে ডাক্তারি পড়তে চান। কী ভাবে স্বপ্নপূরণ করবেন ছেলের? অপরাজিতাদেবী বলেন, “একটি ছোট্ট টালির ছাউনির ঘরই আমাদের ভরসা। অনেকে এগিয়ে এসেছিলেন বলে ছেলেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াতে পারলাম। কিন্তু এ বার ওকে ডাক্তারি পড়াব কী করে? কোথা থেকে আসবে এত টাকা?’’