সাফল্য নলহাটির স্বনির্ভর গোষ্ঠীর

ছানা বেচে ঝর্ণাদের লক্ষ্মীলাভ

সংসারের ফুটো পাত্রে জল ঢালতে মহিলারা স্বনির্ভরতার লক্ষ্য নিয়ে আজ থেকে ৯ বছর আগে ছানা বিক্রি করতে শুরু করেছিলেন। সেই সমস্ত মহিলারা আজ স্বনির্ভর হয়ে অন্যদের পথ দেখাচ্ছেন। এ ছবি নলহাটি থানার সঙ্কেতপুর গ্রামে।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

নলহাটি শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:২০
Share:

প্রতীকী ছবি।

কারও স্বামী মারা গিয়েছেন। কারওবা স্বামী পাথর শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক। কেউ ভাগচাষি, দিনমজুর পরিবারের বধূ।

Advertisement

সংসারের ফুটো পাত্রে জল ঢালতে মহিলারা স্বনির্ভরতার লক্ষ্য নিয়ে আজ থেকে ৯ বছর আগে ছানা বিক্রি করতে শুরু করেছিলেন। সেই সমস্ত মহিলারা আজ স্বনির্ভর হয়ে অন্যদের পথ দেখাচ্ছেন। এ ছবি নলহাটি থানার সঙ্কেতপুর গ্রামে। ওই মহিলারা এখনও ন’বছর ধরে একই ব্যবসাতেই রয়েছেন। বরং আগের মোটর চালিত ভ্যানের পরিবর্তে এখন তাঁরা টোটোতে ঘর থেকে ছানা নিয়ে নলহাটি বাজারে বিক্রি করতে যান। বাড়ি ফেরেন।

সঙ্কেতপুর গ্রামের মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর আর্থিক উন্নতির শুরু গ্রামে থাকা সুলতানপুর কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতি থেকে। সমবায় সমিতির ম্যানেজার অসীম কুমার সেন বলেন, ‘‘গ্রামের মহিলা পরিচালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মধ্যে ২০০৮ সালে মা কালী সয়ম্বর গোষ্ঠীর দশ জন মহিলা বাড়িতে দুধ থেকে ছানা উৎপন্ন শুরু করে। বাজারে বিক্রি করার উদ্দেশ্য তাঁরা প্রতি মাসে জন পিছু ১০০ টাকা করে স্থানীয় সমবায় সমিতিতে জমা রাখতে শুরু করে। এক বছর জমা রাখার পরে সমবায় সমিতি থেকে গোষ্ঠীর প্রতিটি মহিলা সদস্যকে এক বছরের মধ্যে পরিশোধের শর্তে ৩৬ হাজার টাকা ঋণ দেয়।’’

Advertisement

ব্যাঙ্কের সহকারি ম্যানেজার অভিজিৎ সেন বলেন, ‘‘মহিলারা ৩৬ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ছানার ব্যবসা শুরু করার জন্য একটি করে মোষ কেনে। তার পর থেকেই ওই সমস্ত মোষের দুধ থেকে উৎপন্ন ছানা নলহাটি বাজারে বিক্রি করতে শুরু করে। ছানা বিক্রি করে এক বছরের মধ্যে মহিলারা সমিতি থেকে নেওয়া ঋণ শোধ করেন। এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে সমিতি থেকে আবার ঋণ পায় ওই গোষ্ঠীর মহিলা সদস্যরা।’’

সমিতির ম্যানেজার অসীমকুমার জানান, ওই গোষ্ঠীর সদস্যরা ছানার ব্যবসাতে লাভ করেছে দেখে গ্রামের আরও মহিলারা সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করে গ্রামে আরও পাঁচটি স্বনির্ভর দল ছানার ব্যবসা করতে উদ্যোগী হয়। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সমিতি থেকে ছানার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত গ্রামের ৬টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ৬০ জন মহিলাকে ১৩ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে।

৯ বছর আগে সঙ্কেতপুর গ্রামে ছানা ব্যবসার জন্য প্রথম মা কালী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দলনেত্রী কল্পনা ঘোষ বলেন, ‘‘প্রথমে
সমবায় সমিতি থেকে ঋণ নেওয়ার পরে উন্নত প্রজাতির মোষ কিনি। সেই মোষ প্রতিদিন ১০ কেজি করে দুধ দেয়। যা থেকে ৫ কেজি ছানা হয়। নলহাটি বাজারে প্রতিদিন সকালে বিক্রি করে বাড়ি ফিরি।’’ নলহাটি বাজারে ছানা নিয়ে যান ‘মা লক্ষ্মী’ গোষ্ঠীর দলনেত্রী কৃপারানী ঘোষ, ‘মা সরস্বতী’ গোষ্ঠীর দলনেত্রী প্রণবী ঘোষরা। সকলেই বলছেন, ছানার এই ব্যবসাই এখন আমাদের
সংসারে লক্ষ্মী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন