নানুরের সুচপুরে শহিদ দিবসের সমাবেশ

চাকরির আর্তি আলি হোসেনের মায়ের

সুচপুর গণহত্যায় নিহত ১১ জন তৃণমূল সমর্থক খেতমজুরের মধ্যে আলি হোসেন

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নানুর শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৮ ০৭:০০
Share:

শহিদ-স্মরণ: সুচপুরের সমাবেশে তৃণমূলের নেতারা। (ইনসেটে) জাকেরা বিবি। নিজস্ব চিত্র

এ বারেও একই আক্ষেপ জানালেন আলি হোসেনের মা জাকেরা বিবি।

Advertisement

সুচপুর গণহত্যায় নিহত ১১ জন তৃণমূল সমর্থক খেতমজুরের মধ্যে আলি হোসেন ছিলেন বয়সে সব থেকে ছোট। নানুরের বাসাপাড়া বাসস্ট্যান্ডে তৃণমূলের শহিদ বেদীতে অন্যদের সঙ্গে রয়েছে আলি হোসেনের নামও। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই হত্যাকাণ্ডে নিহতদের পরিবারের এক জন করে সদস্যকে রেলে চাকরি দেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী আহতরাও রেলে চাকরি পান।

আলি হোসেনের মায়ের আক্ষেপ সেখানেই। তাঁর কথায়, ‘‘আজও আমার পরিবারের কেউ চাকরি পাননি।’’ সেই দাবির কথা জানাতেই প্রতি বার নানুরের শহীদ সমাবেশে আসেন জাকেরা বিবি। নেতাদের সামনে নিজের দুর্দশার কথা বলেন। আশ্বাস শুনে বাড়ি ফেরেন। এলাকাবাসী কয়েক জনের বক্তব্য, আশ্বাস শুনতে শুনতেই পেরিয়ে গিয়েছে ১৮ বছর। কিন্তু কাজ হয়নি কিছুই। চরম সঙ্কটে দিন কাটছে তাঁদের। আলি হোসেনই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। আলির মৃত্যুর পরেই শোকে মারা যান তাঁর বাবাও। এক প্রতিবন্ধী আর দুই স্বামী পরিত্যক্তা মেয়েকে নিয়ে অন্যের দয়ায় দিন কাটছে জাকেরা বিবিদের।

Advertisement

এ দিন শহীদ সমাবেশের মঞ্চে বসে তিনি বলেন, ‘‘কেন আমার পরিবারের কারও চাকরি হল না জানি না। প্রতি বার অনেক আশা নিয়ে নেতাদের কাছে কোনও একটা চাকরির ব্যবস্থা করার কথা বলতে আসি। সবাই দেখব বলেন, কিন্তু কেউ পরে আর মনে রাখেন না।’’

২০০০ সালে সুচপুরে ১১ জন তৃণমূল সমর্থক খুন হন। খুনের দায়ে ৪৪ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর যাবজ্জীবন সাজা হয়। তাঁদের কয়েক জন পরে বেকসুর খালাস পেলেও বাকিরা এখনও সাজা খাটছেন।

রাজ্য-রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দেওয়া ওই হত্যাকাণ্ড নানুর তো বটেই, গোটা রাজ্যে তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি আরও শক্ত করেছিল। বাম আমলে সহানূভুতির হাওয়া পালে লাগিয়ে ২০০৩ সালে নানুরের দু’টি পঞ্চায়েতে ক্ষমতা দখল করে তৃণমূলের জোট।

নিহত ১১ জনের মধ্যে ১০ জনের পরিবারের এক জন করে সদস্য এবং দু’জন আহতকে রেলের বিভিন্ন পদে চাকরি দেন মমতা। অভিযোগ, অজানা কোনও কারণে আলি হোসেনের পরিবারের কেউ এখনও চাকরি পাননি।

ওই হত্যাকাণ্ডের পরে বাসাপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শহিদ বেদী নির্মাণ করে ২০০১ সাল থেকে ‘শহিদ দিবস’ পালনের উদ্যোগ নেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে শহিদ পরিবারের সদস্যদের সম্মান জানানো হয়। প্রতি বছর এই দিনে বাসপাড়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় পালিত হয় শহিদ দিবস। বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, লাগোয়া মুর্শিদাবাদ এবং বর্ধমান থেকে কাতারে কাতারে দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা ওই সমাবেশে যোগ দেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে দলনেত্রী ওই সমাবেশে আসতে না পারলেও তার নির্দেশে বিভিন্ন সময় সমাবেশে যোগ দিয়েছেন মদন মিত্র, তাপস পাল, শতাব্দী রায়, সুব্রত বক্সি সহ রাজ্য স্তরের অন্য নেতারা।

এ বারেও ব্যতিক্রম হয়নি। সমাবেশে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের ভিড় জমে। হাজির ছিলেন ফিরহাদ হাকিম, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলা পরিষদ সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ফিরহাদ তাঁর বক্তব্যে রাজ্য সরকারের সাফল্যের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতার নানা দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘মোদী এক ব্যর্থ পাহারাদার। তাই একের পর এক অনেকে ভারতের টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাইছেন।’’ অনুব্রত বলেন, ‘‘আমি বা ফিরহাদ হাকিম নন, রাহুল গাঁধীও বলেছেন, দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মমতাকে দেখতে চান।’’

সভার পরে অন্যান্য বারের মতো নেতাদের নিজের দুর্দশার কথা জানান জাকেরা বিবি। তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেদের একাংশের কথায়, ‘‘আগামী বছরেও তাঁকে ফের একই আর্তি জানাতে হবে কি না, তা সময়ই বলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন