এভারেস্ট জয়ী সুভাষ, স্বীকৃতি নেপালের

মৃত্যুর ক্ষতে যেন প্রলেপ দিল নেপাল সরকারের একটি চিঠি! সরকারি ভাবে সে দেশ থেকে জানানো হল, বাঁকুড়ার পর্বতারোহী সুভাষ পাল মাউন্ট এভারেস্টে উঠেছিলেন। অর্থাৎ, তিনি ‘সামিট’ পুরো করেছিলেন। যদিও এভারেস্ট বিজয় সেরে বাড়ি আর ফেরা হয়নি ওই সাহসী যুবকের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৬ ০৮:২৭
Share:

কলকাতার দূতাবাসে নেপাল পর্যটন দফতরের পাঠানো চূড়ায় পৌঁছনো পর্বতারোহীদের নামের তালিকা। বাঁকুড়াবাসী কিন্তু অনেক আগেই তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।—নিজস্ব চিত্র

মৃত্যুর ক্ষতে যেন প্রলেপ দিল নেপাল সরকারের একটি চিঠি!

Advertisement

সরকারি ভাবে সে দেশ থেকে জানানো হল, বাঁকুড়ার পর্বতারোহী সুভাষ পাল মাউন্ট এভারেস্টে উঠেছিলেন। অর্থাৎ, তিনি ‘সামিট’ পুরো করেছিলেন। যদিও এভারেস্ট বিজয় সেরে বাড়ি আর ফেরা হয়নি ওই সাহসী যুবকের। সর্বোচ্চ শিখর ছুঁয়ে ফেরার পথেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান সুভাষ।

অথচ মাউন্ট এভারেস্টে পা রাখাই ছিল বাঁকুড়া শহরের সারদাপল্লির বাসিন্দা সুভাষের জীবনের সব থেকে বড় স্বপ্ন। তবে, তিনি সত্যিই এভারেস্টের চুড়োয় উঠেছিলেন কিনা, তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে এত দিন। রাজ্য সরকারের তরফে অবশ্য অনেক আগেই তাঁকে জঙ্গলমহলের প্রথম সর্বোচ্চ শৃঙ্গজয়ী হিসেবে ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। বাকি ছিল নেপাল সরকারের চূড়ান্ত স্বীকৃতির। যাবতীয় বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে সুভাষকে সেই শংসাপত্র দিল নেপাল সরকারও। সুভাষের দাদা, যিনি নিজেও পর্বতারোহণ প্রশিক্ষক, সেই প্রণব পাল বলেন, “শনিবার রাতেই রাজ্য সরকারের যুবকল্যাণ দফতরের তরফে ফোন করে নেপাল সরকারের দেওয়া ওই সার্টিফিকেটের কথা আমাদের জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, শীঘ্রই সেটা আমাদের পাঠানো হবে।’’

Advertisement

গত ৭ এপ্রিল সুভাষ এভারেস্ট জয়ে উদ্দেশে বাঁকুড়ার বাড়ি থেকে রওনা দেন। ২১ মে সুভাষ এভারেস্ট জয় করেছেন খবর ছড়িয়ে পড়তেই বাঁকুড়া শহরে আলোড়ন পড়ে যায়। জেলার প্রথম এভারেস্ট জয়ীর বাড়িতে শুভেচ্ছা জানাতে মানুষের ঢল নামে। তবে সেই আনন্দ অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দু’দিন পরে, ২৩ মে সুভাষের মৃত্যুর খবর আসার পরই পরিবারের সঙ্গে সঙ্গে শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা শহরে। শহরের অলি-গলি থেকে বিভিন্ন পাড়ার মোড়ে পোস্টার টাঙিয়ে সুভাষকে কুর্নিশ জানানো হয়। সুভাষের দেহ বাঁকুড়ায় আনা হলে জেলা প্রশাসনের আধিকারিক থেকে শহরবাসী সকলেই তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় জমান সারদাপল্লির মাঠে। মরদেহ নিয়ে শহরে মিছিল হয়। বাঁকুড়া এক্সপ্লোরেশন নেচার সংস্থার ফিজিক্যাল ট্রেনার ও সুভাষের দীর্ঘদিনের বন্ধু অপূর্ব ভকতের কথায়, “অসম্ভব জেদি ছেলেটা যে তার লক্ষ্য থেকে নড়বে না, সেটা আমরা জানতাম। সুভাষ আর নেই ঠিকই। তবে নেপাল সরকারের স্বীকৃতি এটা প্রমাণ করল, জীবনের একমাত্র স্বপ্নটা সুভাষ পূরণ করে তবেই দম ছেড়েছে!’’

রবিবার বাঁকুড়ার একটি সংগঠন ‘আমরা সবাই একসাথে’-র তরফে সুভাষের পরিবারকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওই পরিবার এখনও বাড়ির ছোট ছেলেকে হারানোর শোক থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। বাবা ভক্তদাস পাল, মা সাবিত্রীদেবীর চোখের জল এখনও শুকোয়নি। সুভাষের স্ত্রী বিশাখাদেবী এখনও স্বামী হারানোর শোক কাটিয়ে স্বাভাবিক হতে পারেননি। আর বছর এগারোর সুভাষের মেয়ে সুশ্রীতাও বাবাকে হারানোর ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি। বাড়িতে প্রায়ই ‘বাবার কাছে যাব’ বলে বায়না ধরছে। প্রণববাবু বলছেন, “সুশ্রীতার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। ওর একটাই বায়না, তাকে বাবার কাছে নিয়ে যেতে হবে। ও মনে হয় এখনও ভাবছে, বাবা হয়তো কোথাও গিয়েছে। ফিরবে। সুভাষ যে আর কখনওই ফিরবে না, এই সত্যিটা কী ভাবে ওই ছোট্ট মেয়েটাকে বোঝাবো, জানি না!’’ ভক্তদাসবাবু বলছিলেন, “নেপাল সরকারও এভারেস্ট জয়ীর স্বীকৃতি দিল সুভাষকে। এক দিন সে ওই খেতাব পাবে বলে স্বপ্ন দেখেছিল। খেতাব পেল, শৃঙ্গও জয় করল। কিন্তু এই সাফল্য উপভোগ করে যেতে পারল না ছেলেটা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন