বাঁকুড়ায় থিমের জোয়ার

ছোটদের মন পেতে আসছে ডোরেমন

রাস্তার পাশেই আস্ত একটি পাহাড়! স্কুল ভ্যানে সেই পাহাড়ের পাশ দিয়ে যেতে যেতে ষষ্ঠ শ্রেণির সৌরভ বন্ধুদের তা দেখিয়ে বলেছিল, ‘‘তোরা কি জানিস, ‘চিচিং ফাঁক’ বললেই খুলে যাবে ওই পাহাড়ের ভিতরে গুহায় যাওয়ার দরজা? বন্ধও হবে নিজে থেকেই!’’

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১৭
Share:

বাঁকুড়া শহরের কমরার মাঠ এলাকার একটি পুজো মণ্ডপে ভিড় করছে ‘মোটু পাতলু’-র চরিত্রেরা। —নিজস্ব চিত্র

রাস্তার পাশেই আস্ত একটি পাহাড়! স্কুল ভ্যানে সেই পাহাড়ের পাশ দিয়ে যেতে যেতে ষষ্ঠ শ্রেণির সৌরভ বন্ধুদের তা দেখিয়ে বলেছিল, ‘‘তোরা কি জানিস, ‘চিচিং ফাঁক’ বললেই খুলে যাবে ওই পাহাড়ের ভিতরে গুহায় যাওয়ার দরজা? বন্ধও হবে নিজে থেকেই!’’ সৌরভের কথা শুনেই বন্ধুরা ভ্যানের ভিতর থেকেই উঁকিঝুঁকি মেরে দেখতে থাকে পাহাড়টি। চলন্ত গাড়িতে যেতে যেতে দৃষ্টির বাইরে চলে গেলেও দাঁড়ি পড়েনি আলোচনায়। পুজোর ক’দিন কে কতবার মণ্ডপ দেখতে আসবে, কর গুণে গুণে চলছিল হিসেব!

Advertisement

বাঁকুড়ার নতুনচটি সর্বজনীনের এ বারের পুজোর থিম ‘আলিবাবার গুহা’ শিশুদের বেশ মনে ধরেছে। প্রতিবারই পুজোর থিমে বিশেষত্ব আনে নতুনচটি সর্বজনীন। তবে এ বার শিশুদের কথা ভেবেই থিম ঠিক করেছেন পুজো কমিটির কর্তারা। পাহাড়ের আদলে গড়া হচ্ছে প্যান্ডেল। পাহাড়ি সৌন্দর্যকে আকর্ষণীয় করতে থাকছে ঝর্ণাও। তবে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় হল মণ্ডপে ঢোকার, থুড়ি পাহাড়ের গুহার ভিতরে ঢোকার দরজা। পুজো কমিটির সহকারি সম্পাদক অনুপম চৌধুরী জানান, ‘চিচিং ফাঁক’ মন্ত্র উচ্চারণ করা হবে মাইকে। আর তারপরই দু’পাল্লার দরজা খুলে যাবে। দর্শকেরা ভিতরে ঢুকে পড়ার পরে ফের বন্ধ হয়ে যাবে দরজা। ভিতরে থাকবেন আলিবাবা, মর্জিনা ও অফুরন্ত খাজানার সম্ভার।

থিমের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে দেবী প্রতিমাও হচ্ছে সোনালি রঙের। দেখে অনেকেই ভাবতে পারনে খাজানার সোনা দিয়েই গড়া হয়েছে প্রতিমা। অনুপমবাবুর কথায়, “লোকমুখে থিমের কথা প্রচার হতেই অনেকে দেখার জন্যে আগ্রহী হয়েছেন। বিশেষ করে শিশুরা। আলিবাবার কাহিনি এত দিন ওরা শুনেছে কিংবা টিভিতে দেখেছে। এ বার তারা চোখের সামনে তা দেখার সুযোগ পাবে।”

Advertisement

শুধু নতুনচটি সর্বজনীনই নয়, শিশুদের কথা ভেবে থিম গড়েছেন শহরের বেশ কয়েকটি পুজো কমিটি। কমরার মাঠ সর্বজনীন এ বার শহরের বুকেই গড়ে তুলেছে জনপ্রিয় কার্টুন মটু পাতলুর ফুরফুরি নগর! মটু পাতলু তো বটেই, থাকছে ডক্টর ঝটকা ও তার উড়ন্ত ঘর। পুলিশ অফিসার চিঙ্গাম স্যার ও তাঁর থানা। ফুরফুরি নগরের চা-সিঙাড়ার দোকান থেকে ব্যাঙ্ক সবই। বক্সিং রিং-এর মধ্যে দেখা মিলবে এই কার্টুন সিরিয়ালের অন্যতম চরিত্র বক্সারের। মাফলার বেঁধে বরফের পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে থাকবেন মটু পাতলুর খাস দোস্ত। থাকবেন ঘসিতারামও। আর দুষ্টুমি করার জন্যে অবশ্যই থাকবে ‘জন’। থিম গড়ার কাজ অনেকটাই প্রায় শেষ। বিকেলে মাঠে খেলতে আসা এলাকার কচিকাচারা ইতিমধ্যেই একবার করে ঢুঁ মেরে যাচ্ছে ফুরফুরি নগরে। কেউ গান ধরছে ‘মটু অউর পাতলু কি জোড়ি’। কেউ আবার দুষ্টু জনের সংলাপ আউড়ে বলছে ‘জন বনেগা ডন’। যা দেখে পুজো কমিটির সম্পাদক অভিজিৎ কুণ্ডু ও অন্যতম সদস্য রাজদীপ দাসমোদক প্রত্যয়ী যে, “টিভির মটু পাতলুর জনপ্রিয়তার আঁচ ঠিকরে পড়বে এখানেও।”

ঘটনাচক্রে মহামায়াকুঞ্জ কেন্দুয়াডিহি পশ্চিম পুজো কমিটির থিমও মটু-পাতলু। দুটি থিম মিলে গেলেও মহামায়াকুঞ্জের থিমে কিছু আলাদা বৈশিষ্ট থাকবে বলেই জানাচ্ছেন পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য প্রণব রক্ষিত। প্রণববাবু বলেন, “মটু পাতলু ধারাবাহিকের একটি বিশেষ পর্বকে থিমের মধ্যে ফুটিয়ে তুলছি। ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বিশেষ কেরামতি দেখাবে মটু ও পাতলু।”

শহরের অন্যতম বড় পুজো কমিটি রবীন্দ্রসরণি সর্বজনীনের পুজোর থিম এ বার ডিজনি ল্যান্ড। এই পুজো কমিটির স্থায়ী মন্দির থাকলেও প্রতিবারই থাকে থিমের চমক। বাদ যাচ্ছে না এ বারও। বিখ্যাত কার্টুন চরিত্রগুলির কাট আউট দিয়ে সাজানো হচ্ছে মন্দির। মিকি মাউস, আংকেল ক্রুজ থেকে টম অ্যান্ড জেরি, ডোরেমন সবারই দেখা মিলবে এখানে। পুজো কমিটির সম্পাদক সুদীপ চক্রবর্তী ওরফে মুন্না বলেন, “পুজো দেখতে এসে পরিচিত কার্টুন চরিত্রদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবে শিশুরা। শিশুদের আকর্ষণ বাড়াতে আরও কিছু বৈচিত্র নিয়ে আসারও চিন্তা ভাবনা চলছে।”

পুজোর মুখে থিম নিয়ে কচিকাচাদের উৎসাহ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা টের পাওয়া যাচ্ছে বাঁকুড়ার ডিএভি স্কুলের শিক্ষক বিকাশ মানের কথায়। বিকাশবাবু বলেন, “এখন স্কুলে এসে সব ছাত্রেরা সিলেবাসের গল্পের বদলে কোন পুজোয় মটু পাতলু আর কোন পুজোয় মিকি মাউস দেখা যাবে তা নিয়ে আলোচনা করতেই ব্যস্ত। আমরাও বিষয়টা সমানে উপভোগ করছি।” মগরা হাইস্কুলের বাংলার শিক্ষক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “কবে থেকে আলিবাবার গুহার দরজা খোলা হবে, ফুরফুরি নগরের বরফের পাহাড়ে সত্যিই বরফ রয়েছে কিনা দিনভর তো সে সবই শুনছি! সত্যি বলতে কি সে সব মন্দও লাগছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন