ঘরের কাছেই কলেজ পেলেন মাম্পিরা

রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বছর খানেকের মধ্যেই ইচ্ছেপূরণ হল মানবাজার ২ ব্লকের বাসিন্দাদের। মানবাজার-বান্দোয়ান রাস্তায় শুশুনিয়া গ্রামে শুক্রবার নতুন দোতলা কলেজ ভবনে শুরু হল পঠন-পাঠন। পুরুলিয়া জেলার প্রথম সরকারি ডিগ্রি কলেজ পেয়ে তাই উচ্ছ্বসিত এলাকার শিক্ষানুরাগীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মানবাজার শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৫ ০১:১০
Share:

কলেজের প্রথম দিন। ছবি: সমীর দত্ত।

রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বছর খানেকের মধ্যেই ইচ্ছেপূরণ হল মানবাজার ২ ব্লকের বাসিন্দাদের। মানবাজার-বান্দোয়ান রাস্তায় শুশুনিয়া গ্রামে শুক্রবার নতুন দোতলা কলেজ ভবনে শুরু হল পঠন-পাঠন। পুরুলিয়া জেলার প্রথম সরকারি ডিগ্রি কলেজ পেয়ে তাই উচ্ছ্বসিত এলাকার শিক্ষানুরাগীরা।

Advertisement

এই কলেজে ২৮০ জনের আসন। তার মধ্যে এখনই ভর্তি হয়ে গিয়েছেন ১৭৫ জন। অনুমোদিত শিক্ষকের সংখ্যা ২৩। এখনই টিচার-ইনচার্জ-সহ ১০ জন শিক্ষক যোগ দিয়েছেন। দু’জন শিক্ষা কর্মী ও নৈশরক্ষীও যোগ দিয়েছেন। সবাইকে নিয়ে এ দিন থেকে শুরু হল এই কলেজের পথচলা। কলেজের প্রথম ছাত্রছাত্রী হিসেবে তাই স্বর্ণলতা টুডু, মাম্পি মান্ডি, শিবনাথ রজকরা বেজায় খুশি। তাঁরা বলেন, ‘‘আমাদের মানবাজার ২ ব্লকে কলেজ ছিল না। তা নিয়ে আমাদের দুঃখ ছিল। ভেবেছিলাম, দাদা-দিদিদের মতো ১৭ কিলোমিটার দূরের মানবাজারের কলেজে পড়তে যেতে হবে। কিন্তু সরকার আমাদের ইচ্ছে পূরণ করে দেওয়ায় কাছেই এই কলেজ পেয়ে গেলাম।’’

জেলার মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী পুরুলিয়া জেলায় একটি সরকারি ডিগ্রি কলেজ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। আমাদের জেলায় ওই ব্লকে কোনও কলেজ ছিল না। তাই তাঁর কাছে আমরা ওই ব্লকে কলেজ তৈরির প্রস্তাব দিই। জমিও দান করেন কয়েকজন। টাকাও সময়মতো মঞ্জুর হওয়ায় দ্রুতই কলেজটি চালু করা গেল।’’ এ দিন একটি বড় হলঘরে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষা কর্মী পড়ুয়াদের নিয়ে এ দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে পরিচয় পর্ব সারেন। কলেজের টিচার-ইনচার্জ অভিজিৎ সরকার বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশ ছিল ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে কলেজে ক্লাস শুরু করতে হবে। সেই কথা মাথায় রেখে শুক্রবার পরিচয়পর্ব এবং পঠনপাঠনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়েছে। সোমবার থেকে পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।’’

Advertisement

রাজ্যের বিভিন্ন কলেজেই নানা কারণে বিশৃঙ্খলার ঘটনা বারবার সামনে আসছে। তাতে কলেজগুলিতে পড়াশোনার পরিবেশ যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে, তেমনই সুনামও নষ্ট হচ্ছে। সেই প্রসঙ্গ টেনে অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘অন্য কলেজগুলির থেকে এই সরকারি কলেজে কিছুটা তফাৎ রয়েছে। এই কলেজে সরকারি আধিকারিকদের নজরদারি থাকায় পড়াশোনা ব্যাহত হবে না।’’ তিনি সরাসরি পড়ুয়াদের সতর্ক করে বলেন, ‘‘কলেজে পরিচ্ছন্নতা নষ্ট হওয়ার দায় কারও উপর বর্তালে তাঁকে নজিরমূলক শাস্তি পেতে হবে।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের দানের জমিতে গড়ে ওঠা কলেজটি এক বছর আগেও স্রেফ ফাঁকা মাঠ ছিল। পাঁচ একর জায়গার উপর গড়ে ওঠা কলেজটিতে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ করে রাজ্য সরকার। প্রস্তাবিত তিনতলা কলেজের নির্মাণের কাজ এখনও কিছু বাকি। দোতলা পর্যন্ত উঠেছে। নীচের তলায় ক্লাস শুরু হল। অভিজিৎবাবু জানান, বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সাঁওতালিতে অনার্স চালু হয়েছে। কলা ও বিজ্ঞান বিভাগে পাসকোর্সও রয়েছে। ল্যাবরেটরি রয়েছে পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়নের।

কলেজে ফুটবল খেলার মাঠ ছাড়াও ব্যাডমিন্টনের দু’টি কোর্ট ও বাস্কেট বলের জন্য একটি কোর্ট তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। নির্মাণের টাকাও বরাদ্দ হয়েছে।

কলেজে শিক্ষক অনুদেব মণ্ডল, গোরাচাঁদ চক্রবর্তী, রাজেশ সেন বলেন, ‘‘বাজার ও লোকালয় থেকে একটু দূরে হলেও কলেজটি একেবারে পাহাড়ের কোলে। তাই নৈসর্গিক দৃশ্য খুব সুন্দর।’’ অভিজিৎবাবু ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এই কলেজের সূচনা থেকে একটা আলাদা ফাইল তৈরি করিয়ে রেখে যেতে চাইছি। কলেজ পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের প্রোজেক্ট হবে। ওই প্রোজেক্টগুলি এলাকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের কথা মাথায় রেখে যাতে হয়, তা দেখা হবে।’’

পড়ুয়াদের একাংশ বান্দোয়ান-মানবাজার রুটে গাড়ির সংখ্যা বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন। রঘুনাথপুরের পলাশ ঘোষ, পুঞ্চার প্রলয় বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘এই রুটে ছোট গাড়ি চলে না। এলাকায় রেল লাইন নেই। কয়েকটি বেসরকারি বাসের উপর ভরসা করে যাতায়াত করতে হয়।’’ অভিজিৎবাবু জানান, সমস্যার কথা তিনি জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন