প্রতীকী ছবি।
সমীক্ষা করে উপভোক্তাদের তালিকা বানানো হয়ে পড়ে রয়েছে। নির্মল হওয়ার লক্ষে মাস পাঁচেক আগে কোমর বেঁধেছিল বাঁকুড়া পুরসভা। কাজ এগিয়েছে এটুকুই! একই অবস্থা জেলার আরেক পুরসভা বিষ্ণুপুরেরও। তবে, গোড়াতেই অন্য পথে হেঁটে শহরকে নির্মল করার লক্ষে অনেকটাই এগিয়ে সোনামুখী পুরসভা।
গত মে-তে নির্মল বাংলা প্রকল্পে জেলার তিন পুরসভায় বাড়ি বাড়ি শৌচালয় গড়তে উদ্যোগী হয় রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। বাঁকুড়া পুরসভায় প্রায় সাড়ে আট হাজার, বিষ্ণুপুরে প্রায় পাঁচ হাজার ও সোনামুখীতে প্রায় দু’হাজার পরিবারকে উপভোক্তা হিসেবে নির্বাচন করা হয়। বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরে এখনও একটিও শৌচালয় গড়ার কাজ শুরু হয়নি ওই প্রকল্পে। সোনামুখীতে তিনশোটি শৌচালয় গড়ার কাজ চলছে।
কেন এই পরিস্থিতি?
বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “শৌচালয় গড়ার জন্য দু’বার টেন্ডার ডাকা হয়েছে। কোনও ঠিকা সংস্থা সাড়া দেয়নি।’’ তাঁর আরও দাবি, উপভোক্তাদেরও টাকা জমা দেওয়া ও আবেদন করায় আগ্রহ কম।
কাজ শুরু না হওয়ার জন্য মহাপ্রসাদবাবুর এই দাবি মানতে নারাজ বিরোধীরা। বাঁকুড়া পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের কাউন্সিলর স্বরূপ সেন বলেন, “প্রথম থেকেই বলে আসছি, উপভোক্তাদেরই শৌচালয় বানিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হোক। কিন্তু পুরসভা সেই পথে হাঁটতে নারাজ। উপভোক্তাদের আগ্রহের মোটেও অভাব নেই।”
বাঁকুড়া পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর নীলাদ্রি শেখর দানা বলেন, “পুরসভার গাফিলতির জন্যই কাজ এগোচ্ছে না। শৌচালয় নিয়ে এখন অনেক সচেতনতা তৈরি হয়েছে। যে সব ওয়ার্ডের উপভোক্তারা সাড়া দিচ্ছেন না বলে পুরপ্রধান বলছেন, সেখানকার কাউন্সিলরদের ভূমিকাই খতিয়ে দেখা উচিত।’’
মহাপ্রসাদবাবুর মতো বিষ্ণুপুর পুরসভার পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়ও দাবি করছেন, টেন্ডারে ঠিকা সংস্থাগুলি সাড়া না দেওয়াতেই কাজ শুরু করা যায়নি। কিন্তু, সরকারি কাজে ঠিকদারদের অনীহা কেন? জেলার এক ঠিকাদারের মতে, অল্প টাকার কাজ হওয়ায় লাভের অঙ্কটা কম থাকে। তাই অনেকে আগ্রহ দেখান না। এই প্রকল্পে প্রায় ১১ হাজার টাকা একটি শৌচালয় গড়তে মোট বরাদ্দ থাকে। সেই টাকায় উপভোক্তার মনোমতো নির্মাণ অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না বলে ওই ঠিকাদারের দাবি। তিনি বলেন, ‘‘অল্প লাভের জন্য অনেক ঝুটঝামেলা হয়। তাই কেউ এগিয়ে আসছেন না।’’ এই পরিস্থিতিতে মহাপ্রসাদবাবু এবং শ্যামবাবু দাবি করেছেন, শৌচালয় নির্মাণে অভিজ্ঞতা রয়েছে— এমন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দিয়ে কাজ করানোর তোড়জোড় শুরু করেছেন।
অন্যদিকে, সোনামুখী পুরসভার ছবিটা একেবারে অন্য রকমের। কী ভাবে? সোনামুখীর পুরপ্রধান সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “কম টাকায় ঠিকা সংস্থা কাজ করতে রাজি হবে না বলে প্রথম থেকেই অনুমান করেছিলাম। তাই সময় খরচ না করে পুরসভার চার জন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়ে কমিটি তৈরি করে ফেরেছিলাম। ওই কমিটিই উপভোক্তাদের দিয়েই শৌচালয় বানানোর কাজ শুরু করেছে।” তিনি জানান, উপভোক্তাদের কাজ কেমন এগোচ্ছে তা পুরসভা খতিয়ে দেখে ধাপে ধাপে প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে। বেশ কিছু উপভোক্তার বাড়িতে সেপটিক ট্যাঙ্ক বসানোর জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। সে জন্য তাঁরা প্রকল্প থেকে বাদ পড়তে বসেছিলেন। পুরসভা নিজে উদ্যোগী হয়ে শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে মহিষঘোট কার্তিক তলায় কমন সেপটিক ট্যাঙ্ক গড়ে ৩৭টি পরিবারের বর্জ্য সরাসরি সেখানে ফেলার ব্যবস্থা করেছে। সুরজিৎবাবু বলেন, “চলতি মাসের মধ্যেই প্রথম দফার তিনশোটি শৌচালয় গড়ার কাজ শেষ করে দ্বিতীয় দফার কাজ শুরু করে দেওয়া হবে।”
সোনামুখী পারলেও বাঁকুড়া বা বিষ্ণুপুর পুরসভা নির্মল বাংলা প্রকল্পে পিছিয়ে পড়ায় প্রশ্ন উঠছে জেলায়। অনেকেই এ নিয়ে দুই পুরসভার সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলেও অভিযোগ তুলছেন। এই ব্যাপারে সুরজিৎবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “অন্য পুরসভার কথা বলতে পারব না। তবে আগামী বছরের মধ্যেই সোনামুখী শহরকে সম্পূর্ণ নির্মল করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।”