দ্বন্দ্ব মিটিয়ে এ বার মিছিলে পাশাপাশি

 দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দুই নেতা এক হচ্ছেন— ইঙ্গিতটা মিলেছিল এক সপ্তাহ আগেই। এ বার প্রকাশ্যে দলের মিছিলে পাশাপাশি হাঁটলেন। তাঁরা রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি আর নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নিতুড়িয়া শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:১৯
Share:

কাছাকাছি: পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি ও শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদব। নিজস্ব চিত্র

দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দুই নেতা এক হচ্ছেন— ইঙ্গিতটা মিলেছিল এক সপ্তাহ আগেই। এ বার প্রকাশ্যে দলের মিছিলে পাশাপাশি হাঁটলেন। তাঁরা রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি আর নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদব। রবিবার মিছিল শেষে শান্তিভূষণবাবু বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে কখনও কোনও দ্বন্দ্ব ছিল না। আমরা একই দলের সৈনিক। সময়ের অভাবে হয়তো এক সঙ্গে দলীয় কর্মসূচিতে থাকতে পারিনি।’’ পূর্ণচন্দ্রবাবুও বলছেন, ‘‘আমাদের কোনও দ্বন্দ্ব নেই। ওটা বিরোধীদের অপপ্রচার।’’

Advertisement

অবশ্য দুই নেতার মধ্যে বিবাদের জেরে দলে যে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছিল, সেটা মনে করাচ্ছেন তৃণমূলের নিচুতলার অনেক কর্মীই। বিধানসভা ভোটের পরে দু’জনের বিবাদ তুঙ্গে ওঠে। ভোটে শান্তিভূষণবাবু অন্তর্ঘাত করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন পূর্ণচন্দ্রবাবুর অনুগামীরা। নিতুড়িয়া ব্লকের বেশ কিছু এলাকায় দলের প্রভাব থাকলেও শান্তিভূষণবাবুর অন্তর্ঘাতেই প্রত্যাশিত ফল হয়নি বলে অভিযোগ ছিল বিধায়ক শিবিরের। তার জেরে দু’জনের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে। মুখ দেখাদেখি এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে নিতুড়িয়ায় পূর্ণাঙ্গ ব্লক কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি জেলা নেতৃত্ব। কে সভাপতি হবেন— তা নিয়ে দড়ি টানাটানিতে বিষয়টি এখনও ঝুলে রয়েছে।

দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দুই নেতাকে একসঙ্গে কাজ করার জন্য অনেক বার নির্দেশ দিয়েছিল জেলা নেতৃত্ব। কিন্তু ফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত পুরুলিয়ার পর্যবেক্ষক তথা যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া হওয়ায় দুই নেতা এক হয়েছেন বলে অনেকে মনে করছেন। পুরুলিয়ায় দলের নেতা কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসে অভিষেক দুই নেতাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দু’জনের ঝামেলায় যদি পঞ্চায়েতে ফল খারাপ হয় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই হুঁশিয়ারিতেই কাজ হয়েছে বলে ধারণা তৃণমূল কর্মীদের একাংশের।

Advertisement

দল সূত্রের খবর, অভিষেকের বৈঠকের পরেই দুই শিবির নরম হয়। তৈরি হয় সমঝোতার পরিস্থিতি। গত সপ্তাহে সড়বড়ি গ্রামে পূর্ণচন্দ্রবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন শান্তিভূষণবাবু। দু’জনের মধ্যে ঘণ্টা দেড়েক কথাবার্তা হয়েছে। তার পরেই সড়বড়ির কমিউনিটি হলে দলের একটি কর্মসূচিতে একই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল দুই নেতাকে।

তবে সড়বড়ির ওই সভা ছিল কমিউনিটি হলের ভিতরে। সেখানে শুধু দলের নেতা কর্মীরাই ছিলেন। রবিবার দুই নেতার সখ্য এল প্রকাশ্যে। পাশাপাশি মিছিলে হেঁটে তাঁরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নেওয়ার বার্তা দিলেন বলেই মনে করছেন দলের কর্মীদের একাংশ।

এ দিন দুপুরে বিধায়কের উদ্যোগেই কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে মিছিল হয়েছে। বিধায়কের খাসতালুক সড়বড়ি মোড় থেকে হাঁটা শুরু হয়। শেষ হয় শান্তিভূষণবাবুর এলাকা পারবেলিয়াতে। মিছিলে সামিল হয়েছিলেন দু’জনের অনুগামী নেতারাও। একই সঙ্গে হাঁটতে দেখা গিয়েছে এলাকার শ্রমিক নেতা, বিধায়ক অনুগামী হরেরাম সিংহ এবং জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ, শান্তিভূষণবাবুর সমর্থক সরিতা তুরিকে। দুই নেতাই নিজেদের অনুগামীদের মিছিলে সামিল করানোয় এ দিন মিছিলে ভাল ভিড় হয়েছিল। পুলিশের মতে, সংখ্যাটা হাজার পাঁচেক।

হাজার পাঁচেক লোকের মিছিল করে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এলাকায় বিরোধীদের, বিশেষত বিজেপি-কে বার্তা দিতে চেয়েছেন বলে দাবি পূর্ণচন্দ্রবাবুর। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপির কেন্দ্র সরকার জনবিরোধী নীতি নিয়ে দেশের সর্বনাশ করছে। সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে। আমরা দলের কর্মী সমর্থকদের বলেছি, গোটা রঘুনাথরপুর এলাকাকেই বিরোধী শূন্য করতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন