সেই মেলেড়ায় অন্য ছবি

সিপিএম এজেন্টের নাকি পেট খারাপ, বুথমুখোই হলেন না

পাঁচ বছর আগে পরিবর্তনের ঝড়েও কানঘেঁষে তিনি জিতেছিলেন সামান্য ব্যবধানে। রাইপুরের বিদায়ী সিপিএম বিধায়ক উপেন কিস্কুর সেই জয়ে বড় অবদান ছিল যে পঞ্চায়েত এলাকার, সেই মেলেড়ায় এ বার ছবি অনেকটাই আলাদা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাইপুর শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৬ ০০:১৮
Share:

পাঁচ বছর আগে পরিবর্তনের ঝড়েও কানঘেঁষে তিনি জিতেছিলেন সামান্য ব্যবধানে। রাইপুরের বিদায়ী সিপিএম বিধায়ক উপেন কিস্কুর সেই জয়ে বড় অবদান ছিল যে পঞ্চায়েত এলাকার, সেই মেলেড়ায় এ বার ছবি অনেকটাই আলাদা। এলাকার ১৯টি বুথের মধ্যে ১৭টিতে পারলেও দু’টিতে এজেন্ট দিতেই পারল না সিপিএম। অভিযোগ, বিরোধীদের কোণঠাসা করে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াল তৃণমূল।

Advertisement

গত বিধানসভা ভোটে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের রাইপুর কেন্দ্রে উপেন কিস্কু মাত্র ১৮২ ভোটে জিতেছিলেন। তার এই জয়ের পিছনে অবদান ছিল মেলেড়া পঞ্চায়েত থেকে পাওয়া ১৭৮৪ ভোটের লিড। ওই পঞ্চায়েতের লিড যে তাঁকে জিতিয়েছে, সে কথা মেনেওছিলেন উপেনবাবু। সেই মেলেড়ায় এখন আর সিপিএমের দাপট নেই। পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল এই পঞ্চায়েত দখল করার পর থেকেই কার্যত বিরোধীশূন্য এই তল্লাট।

এ বার জঙ্গলমহলে ভোটপ্রচারে সিপিএম নেতাদের ঘোষণা ছিল, ভোটের দিন বুথ আগলে পড়ে থাকবেন দলের কর্মীরা। প্রচারে নেমে সিপিএমের জেলা থেকে রাজ্য সম্পাদক সকলেরই ছিল এক সুর। পাশের জেলা পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের বান্দোয়ান কিংবা বাঘমুন্ডিতে যেখানে শাসকদলের সঙ্গে সমানে টক্কর দিয়েছে জোট-শিবির, সেখানে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের তিন বিধানসভা কেন্দ্রে উল্টো চিত্রই দেখা গেল সোমবার। অধিকাংশ বুথে সিপিএমের এজেন্ট থাকলেও এলাকায় দাপট ছিল শাসকদলের নেতাকর্মীদের। অনেক বুথে তৃণমূলের পাশাপাশি সিপিএমের এজেন্ট দেখা গেলেও বিজেপি-র এজেন্ট সে ভাবে দেখা যায়নি।

Advertisement

এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ মেলেড়া পঞ্চায়েতের বড়কলা প্রাথমিক স্কুলের ২০৬ নম্বর বুথে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় বাহিনীর আট জন জওয়ান রয়েছেন। বুথের মধ্যে শাসকদলের এজেন্ট থাকলেও বিরোধী কোন দলেরই এজেন্ট নেই। প্রিসাইডিং অফিসার সত্যজ্যোতি বেরা বলেলেন, ‘‘মক পোলের সময় সিপিএম প্রার্থীর এজেন্ট কৃষ্ণ বেরা ছিলেন। তবে ভোট গ্রহণের সময় আর বুথে আসেননি তিনি। কী কারণে আসেননি, তা জানি না।’’ ওই সময়ের মধ্যেই বুথের ৭৬২ জন ভোটারের মধ্যে ৩৬৩ জনের ভোট দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের এজেন্ট সন্তোষ আচার্য ব্যঙ্গের সুরে বললেন, “মনে হয় ওর পেট খারাপ হয়েছে। তাই আর বুথমুখো হয়নি কৃষ্ণ।’’ সিপিএমের এজেন্ট হওয়ার পরেও কেন বুথে যাননি, সে প্রশ্নে কৃষ্ণের জবাব, “শরীরটা খারাপ লাগছিল বলেই যাইনি।’’

একই ছবি পাশের গ্রাম ধর্মপুরের বুথেও। এজেন্ট ছিলেন শুধু তৃণমূলের তন্ময় চৌধুরী। ওই বুথেও এজেন্ট দিতে পারেনি সিপিএম। শিরষা হাইস্কুলের ২১৬ নম্বর বুথে গিয়ে দেখা গেল, এলাকার সিপিএম নেত্রী তথা গত পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদের প্রার্থী অলকা পাত্র এজেন্ট হয়েছেন। মাথা নিচু করে রয়েছেন। বললেন, “ভোট ভালই হচ্ছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতি অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর দিকেই আঙুল তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, “কেন্দ্রীয় বাহিনী টহলদারি ঠিকঠাক করলে মেলেড়া ও ঢেকো-সহ কয়েকটি এলাকায় ভোট একতরফা করতে পারত না তৃণমূল। মেলেড়া পঞ্চায়েত এলাকার দু’টি বুথে আমাদের এজেন্ট বসাতে বাধা দিয়েছে তৃণমূল। বড়কলা বুথে এজেন্ট বসেও পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন