ময়লা তুললেও ফেলবে কোথায় জানেন না কর্মী।— নিজস্ব চিত্র।
মন্দির নগরী বলে খ্যাত বিষ্ণুপুরের পথঘাট আবর্জনায় ভরে যাওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে নানা মহলে। কেন এই পরিস্থিতি তা নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষারোপ শুরু করেছেন প্রশাসনের আধিকারিক ও পুরকর্তৃপক্ষ। শাসকদলের অন্দরেও এ নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, বিষ্ণুপুর পুরসভার ময়লা ফেলতে স্থায়ী ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য প্রশাসন ইতিমধ্যেই একটি জমি খুঁজে দিয়েছে। বিষ্ণুপুর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক বিপ্লব দাস বলেন, ‘‘দ্বারিকা গোঁসাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বনমালিপুর মৌজার ১০ একর খাস জমি পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্বারকেশ্বর নদের ধারে জমিটি রয়েছে। দুর্গাপুজোর আগেই ১২ অক্টোবর জমি পুরসভাকে হস্তান্তর করে দেওয়া হয়েছে।’’
তাহলে সেখানে ময়লা না ফেলে শহরের বিভিন্ন এলাকায় কেন ফেলা হচ্ছে? মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য জমি দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তারপরেও পুরসভা সেখানে পরিকাঠামো তৈরি করতে গড়িমসি করছে।’’
বিষ্ণুপুর পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ‘‘পুজোর আগে জমি পাওয়া গিয়েছে। পাঁচিল তৈরি করা এবং সেখানে গাড়ি যাওয়ার রাস্তা তৈরি হয়নি। সে সব তৈরির জন্য প্রচুর টাকার টাকার প্রয়োজন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানিয়েছি। টাকা মঞ্জুর হলেই ওই জমিতে ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে।’’ তিনি জানান, বর্তমানে সাময়িক ভাবে বিষ্ণুপুর বাইপাসে পুরসভার জমিতে ময়লা ফেলা হচ্ছে। ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি হয়ে গেলে সেখানে কঠিন বর্জ্য পদার্থ থেকে সার তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য আনুমানিক ১২- ১৪ কোটির একটি প্রকল্প ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য চিহ্নিত জমি। নিজস্ব চিত্র
কিন্তু, যেখানে পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর প্রভৃতি পুরসভা কঠিন বর্জ্য পদার্থ থেকে সার তৈরি করা-সহ বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেখানে বিষ্ণুপুর কেন ওই প্রকল্পের আওতায় আসেনি? এ জন্য শাসকদলের পুরসভার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি স্বপন ঘোষের অভিযোগ, ‘‘নিজেদেরই সরকার। অথচ সেখানে থেকে শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখার টাকা অন্য পুরসভা নিয়ে যেতে পারলেও বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান তা পারেন না। এখানকার পুরসভা সদ্য তৈরি ঢালাই রাস্তা নতুন করে পিচের করে, হাইমাস্ট আলো বসিয়ে হরির লুঠে ব্যস্ত। আবর্জনার গন্ধে মানুষ অতিষ্ঠ হলেও তাই তাঁদের নজর নেই।’’
বিষ্ণুপুরের উপপুরপ্রধানের স্বীকারোক্তি, ‘‘দীর্ঘদিন পুরসভায় থেকেও আমরা একটা স্থায়ী ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করতে পারিনি, এটা আমাদেরই ব্যর্থতা।’’ বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষার ভট্টাচার্যও এ নিয়ে পুরসভার উপরে ক্ষুব্ধ।
তিনি দাবি করেন, ‘‘শহরের যত্রতত্র আবর্জনা এমন জমে রয়েছে যে মেয়ের কাছেও কথা শুনতে হয়েছে। সাফাই সমস্যার সমাধান খুঁজতে বারবার জেলাশাসক ও পুরপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এটা পুরসভার দায়িত্ব হলেও আমিই এগিয়ে এসেছি। এ বার কলকাতায় গিয়ে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলব। দেখা যাক কী হয়।’’
কয়েক দশক ধরে টানা বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধানের দায়িত্বে থাকা শ্যাম মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘আমাদের সাফাই কর্মীরা ময়লা ফেলতে গিয়ে মার খাচ্ছেন। আর কেউ কেউ ময়লা নিয়ে নোংরা রাজনীতি করতে ব্যস্ত। মহকুমাশাসক গড়িমসির ভ্রান্ত অভিযোগ করছেন। ১০ একর জমি পাঁচিল দেওয়া কম টাকার ব্যাপার না কী?’’
যেখানে ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির কথা, সেই বনমালিপুর মৌজা লাগোয়া বাসিন্দারা আবার প্রশ্ন তুলেছেন, শহরের ময়লা গ্রামাঞ্চলে কেন ফেলা হবে? দ্বারিকা গোঁসাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জয় নন্দী বলেন, ‘‘ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য প্রশাসনকে ওই জমি চিহ্নিত করতে দেখে এপ্রিল-মে মাসেই গ্রামবাসী আপত্তি তোলেন। তাঁরা আপত্তি জানিয়ে পঞ্চায়েতে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন।’’
জটের পরে জট। তাহলে বিষ্ণুপুরের সাফাই-সমস্যার কী হবে? তবে কি রোজ সকালে পুরসভার সাফাই দফতরে রুটিন ফোন আসতেই থাকবে— ‘‘হ্যালো! বিষ্ণুপুর পুরসভার সাফাই বিভাগ? রাস্তায় নোংরা জমে রয়েছে। নোংরায় নালা বুজে গিয়ে রাস্তায় জল বইছে। আর পারা যাচ্ছে না। কিছু একটা করুন।’’
(শেষ)