ব্রকোলি: চাহিদা নেই। ফাইল চিত্র
বিকল্প চাষ হিসেবে ব্রকোলির চাষে কৃষি দফতর উৎসাহ দিলেও বাজার তৈরি করতে পারছে না। লোকজনকে এই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফসলের গুণাগুণের কথাও প্রচার করতে পারেনি। ফলে কৃষি দফতরের উৎসাহে ব্রকোলি চাষ করে অনেকেই এখন বিপাকে পড়ছেন। কারণ এই সব্জি কী ভাবে খেতে হয়, তা অনেকেরই অজানা।
অথচ কৃষি দফতর লাভের মোহ দেখিয়ে কর্মশালায় চাষিদের ব্রকোলি চাষে উৎসাহ দিয়ে আসছে। তেমনই কৃষি দফতরের বীজ ও অনুসার পেয়ে এ বার নিজের এক বিঘা জমিতে প্রায় ৫০০০ ব্রকোলি ফলিয়েছেন বান্দোয়ানের সায়রা গ্রামের চাষি কার্তিক মাহাতো। কিন্তু এখন মাঠের ফসল দাম কমিয়েও খদ্দের পাচ্ছেন না তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বান্দোয়ান থেকে খাতড়ার বাজারেও ব্রকোলি নিয়ে গিয়েছি। কিন্তু সব্জি বিক্রেতারা খুব একটা কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সাধারণ মানুষ কৌতূহল মেটাতে কী ভাবে খায়, স্বাদ কেমন, হাজার একটা প্রশ্ন করছেন। কিন্তু বাড়ির লোকজন খাবে কি না, এই সংশয়ে শেষ পর্যন্ত কিনছেন না।’’
তাঁর মতে, ব্রকোলি সম্পর্কে এখনও লোকজনের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। সরকারের এ দিকটায় নজর দেওয়া দরকার। তা নাহলে বিকল্প চাষে উৎসাহ হারাবেন চাষিরা।
কার্তিকবাবু অবশ্য থেমে নেই। তিনি নিজের ব্রকোলি নিয়ে বান্দোয়ান বাজারে বসছেন। লোকজনের প্রশ্ন-বাণ সামলাতে ছাপানো অক্ষরে এই সব্জির গুণাবলী দোকানের সামনে টাঙিয়ে দিয়েছেন। কী ভাবে খাওয়া যায়, লিখে দিয়েছেন তাও। কিন্তু তাতে যে বিক্রিবাটা বেড়েছে তেমনটা না। তাঁর কথায়, ‘‘গত ক’দিনে অল্পকিছু বান্দোয়ানে বিক্রি হয়েছে। মনে হচ্ছে দু’মাসের পরিশ্রম, মাঠে মারা যাবে।’’
ব্রকোলি নিয়ে যে সচেতনতার অভাব রয়েছে তা স্পষ্ট তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তথা কৃষি বিভাগের বান্দোয়ান ব্লকের ‘আত্মা’ প্রকল্পের চেয়ারম্যান রঘুনাথ মাঝির কথায়। তিনি বলেন, ‘‘ব্রকোলি এখনও পর্যন্ত খাওয়া হয়ে ওঠেনি। একবার খেয়ে দেখতে হবে।’’ বান্দোয়ান বাজারের বাসিন্দা সঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘ব্রকোলির নাম শুনেছি। তবে বাড়িতে নিয়ে গেলে অনেক ব্যাখ্যা দিতে, তাই কেনা হয়নি।’’
কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা অবশ্য ব্রোকোলির গুণে পঞ্চমুখ। তাঁরা জানাচ্ছেন, ব্রোকোলি কাঁচা অথবা রান্না করেও খাওয়া যায়। এই সব্জি ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবারে পরিপূর্ণ। তাঁদের মতে, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ব্রোকোলি রাখা দরকার। ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় অকালে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে ব্রোকোলি। হাড় মজবুত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ব্লাড প্রেসারও নিয়ন্ত্রিত করে। চোখ এবং চামড়ার স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।
তাহলে এই কথাগুলোই প্রচার করছেন না কেন? বান্দোয়ানের সহকারী কৃষি অধিকর্তা তনুময় মণ্ডল স্বীকার করছেন, ‘‘এই সব্জির গুণের কথা সবাই জানেন না ঠিকই। এ বছর পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করতে কার্তিকবাবুকে বীজ ও অনুসারের জোগান দিয়েছিলাম। তবে দফতরের পক্ষ থেকে ব্রোকোলির গুণের কথা আরও প্রচার করতে হবে।’’