প্রশ্নে অযোধ্যা পাহাড়ের পরিকাঠামো

হিলটপে নেই জল, ক্ষুব্ধ পর্যটক

পাহাড়তলির লোক জনের কাছে হিলটপে পৌঁছনোর রাস্তার সুলুক সন্ধান জেনে পাকদণ্ডী পথ বেয়ে উঠছিলেন তাঁরা। চূড়ায় পৌঁছে অযোধ্যা পাহাড়ের সৌর্ন্দয দেখে অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। সারারাতের পথশ্রমে ক্লান্ত দলটির সদস্যেরা সেখানেই পৌঁছেই পড়লেন সমস্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৪৩
Share:

পিকনিক করতে এসে জলের লাইন দিতে হল পর্যটকদের। —নিজস্ব চিত্র।

পাহাড়তলির লোক জনের কাছে হিলটপে পৌঁছনোর রাস্তার সুলুক সন্ধান জেনে পাকদণ্ডী পথ বেয়ে উঠছিলেন তাঁরা। চূড়ায় পৌঁছে অযোধ্যা পাহাড়ের সৌর্ন্দয দেখে অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। সারারাতের পথশ্রমে ক্লান্ত দলটির সদস্যেরা সেখানেই পৌঁছেই পড়লেন সমস্যায়। তাঁদের সঙ্গে থাকা জলের মজুত তখন ফুরিয়েছে। কিন্তু, হিলটপে কোথাও পানীয় জলের কোনও সংস্থানই নেই সেখানে।

Advertisement

আদতে স্নানের জল তো দূরের কথা, রান্নার জল বা পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থায় নেই অযোধ্যা পাহাড়ের চূড়ায়। ফলে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়ছেন পাহাড়ে পিকনিক করতে আসা মানুষ জন। বড়দিনের আগে থেকেই পাহাড়ে ঢল নামতে শুরু করেছে পিকনিক পার্টির। পাহাড়ের উপরে হিলটপ থেকে পুরুলিয়া পাম্পড স্টোরেজ প্রকল্পের আপার ড্যামের দিকে যাওয়ার পথে কাশবন নামে পরিচিত এলাকাকেই পিকনিকের জন্য বেছে নিচ্ছেন পাহাড়ে আসা লোক জন। রবিবার বছরের প্রথম দিনে বা শুক্রবার নতুন বছরের প্রথম দিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাহাড়ে পিকনিকে আসা নানা দলের সদস্যেদেরই জলের জন্য ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে।

কলকাতার সন্তোষপুর থেকে পাহাড়ে পিকনিকে আসা গণেশ প্রসাদের কথায়, ‘‘এত সুন্দর জায়গা, কিন্তু জল কোথায়! জলেরই তো কোনও সংস্থানই নেই।’’ একই রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে বাঁকুড়ার সিমলাপাল থেকে আসা ঝন্টু মাহাতো, নদিয়ার তেহট্ট থেকে আসা রাজু ঘোষ, দমদমের অরিন্দম ভৌমিকদেরও। তাঁরা জানান, এত সুন্দর জায়গা পিকনিকের জন্য আদর্শ। কিন্তু, জলের বড় অভাব। কাছের একটি গ্রামে একটিই নলকূপ রয়েছে। সেখান থেকেই দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে তাঁদের জল নিতে হয়েছে। পুরুলিয়ার বরাবাজারের বাসিন্দা শিবানী নামাতা, মল্লিকা নামাতারাও এক জ্যারিকেন জলের জন্য দাঁড়িয়ে পড়তে হয়েছে পিকনিকের মাঠ থেকে দূরের গ্রাম বাঁধঘুটুর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের টিউব অয়েলের লাইনে। তাঁদের কথায়, ‘‘গোটা এলাকায় জলের সংস্থান বলতে এই গ্রামের এই নলকূপটিই। এ ছাড়া পানীয় জলের আর কোনও সংস্থান নেই।’’ এই পরিস্থিতিতে সব থেকে সমস্যায় পড়েছেন মহিলারাই।

Advertisement

বছরের প্রথম রবিবারই পরিবারের সঙ্গে কলকাতার বেলেঘাটা থেকে এসেছিলেন সজল দে। তাঁর কথায়, ‘‘বড়ই দুর্বল পরিকাঠামো। রাজ্যের পযর্টন মানচিত্রের এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। পিকনিকের জন্য তো লোক আসবেই। কিন্তু, জলের সংস্থান নেই। স্থানীয় কিছু লোক রয়েছেন, তাঁরাই জল এনে দিচ্ছেন।’’

এ দিকে, বহু দলই পিকনিকের জন্য বেছে নিচ্ছে পাহাড়ের পাম্পড স্টোরেজ প্রকল্পের লোয়ার ড্যামের নীচে বাঘমুণ্ডির লহরিয়া শিবমন্দির এলাকাও। কারণ কাছেই লহরিয়া জলাধার। কিন্তু, এখানে এতটাই ভিড় যে মহিলাদের স্নানের সমস্যা। পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে এখানেও। লহরিয়া শিবমন্দিরের কাছাকাছি এলাকায় পানীয় জলের সংস্থান থাকলেও প্রতি দিন যে পরিমানে ভিড় হচ্ছে, তার নিরিখে জলের সংস্থান কম। দমদমের বাসিন্দা সুমন মালির কথায়, ‘‘এখানে শৌচাগারের সমস্যাই মূল সমস্যা।’’ একই বক্তব্য আরও অনেকেরই।

কী বলছে এলাকার ট্যুরিস্ট কমিটি? কমিটির সভাপতি আশুতোষ মাহাতোর দাবি, ওই এলাকায় গোটা দশেক শৌচাগার চালু রয়েছে। পানীয় জলের জন্য কুয়োও রয়েছে। কিন্তু, এই সময়ে প্রচন্ড ভিড় হচ্ছে। তাই শৌচাগার ও কুয়োর সংখ্যাগুলি আরও বাড়া দরকার বলে তিনিও মনে করছেন। যদিও পিকনিকে আসা লোক জনের অভিজ্ঞতা বলছে, বেশির ভাগ শৌচাগারেই জল নেই। বালতিতে করে জল নিয়ে যেতে হচ্ছে। বাঘমুণ্ডি পঞ্চায়েতের প্রধান দীপ্তি কুইরীর কথায়, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বার ভিড় কয়েক গুণ বেড়েছে। তাই এ বার সমস্যা বেড়ে গিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘‘এই সমস্যা নিয়ে পঞ্চায়েতে আলোচনা করে বিডিও-কে জানাব।’’

পরিকাঠামো নিয়ে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী দাবি করেন, পাহাড়ের নীচে লহরিয়া শিব মন্দির এলাকার পিকনিক স্পটে বেশ কিছু পানীয় জলের ব্যবস্থা ও শৌচালয় রয়েছে। হিলটপে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বাংলোর পাশেও ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এ বারে পরিকাঠামোর তুলনায় ভিড় বেশি হওয়ায় সমস্যা হয়েছে। দুর্গাবেড়াতে বেশ কিছু শৌচালয় এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হবে বলেই তাঁর আশ্বাস।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement