গত বছর নভেম্বরে খয়রাশোলে অশান্তি ছড়ানোর ‘দায়ে’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা উজ্জ্বল হক কাদেরীকে গ্রেফতার করতে বলেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। সেই নেতা গ্রেফতার হলেন শুক্রবার সকালে। তবে অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে নয়, খয়রাশোলের তৃণমূল ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষ খুনের ঘটনায়। জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ জানিয়েছেন, দীপক ঘোষ খুনের ঘটনায় উজ্জ্বল হক কাদেরিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কাঁকরতলায় আরও একটি ঘটনাতেও তিনি অভিযুক্ত।
সরকারি আইনজীবী মণিলাল দে জানান, নিজেদের হেফাজতে চেয়ে ধৃতকে শুক্রবার দুবরাজপুর আদালতে তুলেছিল পুলিশ। আদালত ৪ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছে। উজ্জ্বলবাবু দাবি করেছেন, ‘‘আমি নির্দোষ। দল চেয়েছিল কাঁকরতলায় একটি ঘটনায় আমি আত্মসমর্পণ করি। সেটা করতেই এসেছিলাম। পরে জানলাম, খুনের মামলায় আমাকে গ্রেফতার করা হল।’’
গত বছর ২১ অক্টোবর একটি ফুটবল প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করে মোটরবাইকে ফেরার পথে খয়রাশোল-ঘেঁষা হিংলো নদীর কাছে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কতীদের হামলার মুখে পড়েন খয়রাশোলের তৎকালীন ব্লক তৃণমূল সভাপতি দীপক ঘোষ। মুখঢাকা দু্ষ্কৃতীরা কাছ থেকে দীপকবাবুকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন মারা যান বছর পঁয়তাল্লিশের ওই দাপুটে নেতা। ঘটনার পরেই তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল তাঁর দলের ওই নেতার খুনে বিজেপির ঘাড়ে দোষ চাপান। কিন্তু পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ খয়রাশোলে দলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের’ কথাই সামনে আসে। পরিবার ও নিহত নেতার অনুগামীদের বক্তব্য ছিল— ঘটনার পিছনে হাত রয়েছে দলেরই বিপক্ষ গোষ্ঠীর। সেই তালিকায় প্রথম নাম থাকার কথা ছিল দীপকবাবুর বিরোধী শিবিরের নেতা বলে পরিচিত ব্লক কার্যকরী সভাপতি উজ্জ্বল হক কাদেরির।
তৃণমূল সূত্রের খবর, পাছে দলের বদনাম হয়, তাই দলের তরফে অভিযুক্তের তালিকায় থেকে উজ্জ্বল হক কাদেরির নাম বাদ দেওয়ার ‘নির্দেশ’ ছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, নিহত নেতার স্ত্রী মিঠুদেবী পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে তাঁর স্বামীকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুন করানোর ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে যে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করেছিলেন, তাঁদের ১৪ জনই এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী হিসাবে পরিচিত। পুলিশ ৫ জনকে ধরে। তাঁদের ১ জনই বিরোধী শিবিরের ছিলেন।
তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর, প্রায় তিন মাস কেটে গেলেও পুলিশ ঘটনার কিনারা করতে পারছে না, বিরোধী শিবিরের কাউকে কেন ধরা হচ্ছে না— তা নিয়ে ক্ষোভ জমছিল খয়রাশোলের দীপক ঘনিষ্ঠদের মধ্যে। চাপ তৈরি হচ্ছিল নেতাদের উপরেও। তৃণমূলের নেতাদের একাংশ বলছেন, ‘‘সব তাল বজায় রাখতে এবং সম্ভবত লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই ওই নেতাকে গ্রেফতারের সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব।’’
খয়রাশোলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অনেকের দাবি ছিল, ব্লক সভাপতির মৃত্যুর পরে এমনিতেই কার হাতে দলের রাশ থাকবে তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল। দীপকপন্থীদের অভিযোগ ছিল এই আবহে গোষ্ঠীকোন্দল আরও বাড়িয়ে দিতে পিছন থেকে কলকাঠি নাড়তে শুরু করেন উজ্জ্বলবাবু। গত নভেম্বরেই অনুব্রত উজ্জ্বলবাবুকে গ্রেফতারের হুমকি দিলেও, তাঁকে পুলিশ ধরেনি।
হঠাৎ এত দিন পরে কেন?
এ নিয়ে বারবার চেষ্টা করা হলেও অনুব্রতের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। খয়রাশোলের দায়িত্বে থাকা নেতা তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘আমি খবর পেলাম। তবে কেন খুনের ঘটনায় ধরা হয়েছে, সেটা খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।’’