একশো দিনের প্রকল্প

পুজোয় কাজে ডেকে বিতর্কে পঞ্চায়েত

একশো দিনের কাজ নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়ল হুড়ার জবড়রা গ্রাম পঞ্চায়েত। ওই পঞ্চায়েত এলাকার দুমদুমি গ্রামের শ্রমিকদের দাবি, মহানবমীর দিন কাজ করার জন্য তাঁদের ডাকা হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫১
Share:

কাজ না পেয়ে হতাশ শ্রমিকেরা।—নিজস্ব চিত্র

একশো দিনের কাজ নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়ল হুড়ার জবড়রা গ্রাম পঞ্চায়েত। ওই পঞ্চায়েত এলাকার দুমদুমি গ্রামের শ্রমিকদের দাবি, মহানবমীর দিন কাজ করার জন্য তাঁদের ডাকা হয়েছিল। কিন্তু নির্দেশ মোতাবেক কাজের জায়গায় তাঁরা হাজির হলেও পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে কেউ সেখানে হাজির ছিলেন না বলে অভিযোগ। ফলে পুজোর দিন সকাল থেকে পুরো একটা বেলা কাজের জায়গায় হাজির থেকে তাঁরা বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হন।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুমদুমি গ্রামের ১১১ জন শ্রমিক ২৭ সেপ্টেম্বর কাজ চেয়ে পঞ্চায়েতে আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ৪ অক্টোবর তাঁদের কাজের কথা জানানো হয়। অক্টোবরের ১০ থেকে ১৬ তারিখ পাশের গ্রাম আলোকডিতে একটি পুকুর সংস্কারের কাজ দেওয়া হয় ওই শ্রমিকদের। দুর্গাপুজোর নবমীর দিন থেকে কাজ শুরু হওয়ায় উৎসবের মরসুমের কথা মাথায় রেখে সেই দিনক্ষণ কিছুটা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছিল বলে ওই শ্রমিকদের একাংশের দাবি। তাঁদের পক্ষে থেকে প্রবোধ মাহাতো, সুভাষ মাহাতোরা বলেন, ‘‘আমরা এক প্রকার নিশ্চিতই ছিলাম প্রশাসন কাজ শুরুর তারিখ পিছিয়ে দেবে। কিন্তু আমাদের কিছুই জানানো হয়নি।’’ তাঁদের দাবি, পঞ্চায়েতে খোঁজ নিতে গেলে তাঁদের জানানো হয়, আবেদনের প্রেক্ষিতে কাজ পিছনোর কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বাধ্য হয়ে ১০ অক্টোবর, দুর্গাপুজোর মহানবমীতে তাঁরা কাজে যোগ দিতে যান।

ওই শ্রমিকদের অভিযোগ, কাজের জায়গায় গিয়ে পঞ্চায়েতের কাউকে সেখানে দেখতে পাননি তাঁরা। বিভিন্ন জায়গায় খবর পাঠানোর পরে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে এক জন আসেন। তিনি কী কাজ করতে হবে তা বলে চলে যান। তাঁদের দাবি, কাজ তদারক করার জন্য কোনও সুপারভাইজার বা উপস্থিত শ্রমিকদের হাজিরা এবং কাজের খতিয়ান নেওয়ার জন্য কোনও প্রতিনিধি সেখানে ছিলেন না। চঞ্চলা পাতর, প্রতিমা মাহাতো, সোমবারি সিং সর্দার, বাজার মাহাতো, প্রবোধ মাহাতোরা বলেন, ‘‘এক বার এই ভাবে হাজিরা ছাড়া কাজ করে মজুরি পেতে পঞ্চায়েত আর ব্লকে ছুটে হয়রান হতে হয়েছিল। তারপর থেকে নিয়ম মেনে কোনও প্রতিনিধি থাকলে তবেই আমরা কাজ করব বলেঠিক করেছিলাম।’’

Advertisement

তাঁরা জানান, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও পঞ্চায়েত থেকে কোনও প্রতিনিধি না আসায় তাঁরা ফিরে যান। চঞ্চলাদেবী, প্রতিমাদেবী, প্রবোধবাবুরা বলেন, ‘‘সবার বাড়তেই তো পরিবার পরিজন রয়েছে। সবাই এই ক’টা দিন আনন্দ করতে চায়। পঞ্চায়েতের লোকজন উৎসবে ছুটি কাটাল, আর আমাদের আনন্দও মাটি হল, মজুরিও পেলাম না।’’

জবড়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শ্রাবণী মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘নিয়ম মাফিক আবেদন করার ১৫ দিনের মধ্যে শ্রমিকদের কাজ দিতে হয়। কিন্তু ওঁরা এমন একটা সময়ে আবেদন করেছিলেন, যে মাঝে পুজো পড়ে যায়। অফিস খুলবে একেবারে লক্ষ্মী পুজোর পরে। তখন কাজ দিতে হলে সেই সময়সীমা পেরিয়ে যেত।’’ তাঁর পাল্টা দাবি, শ্রমিকেরা আগে আবেদন করলে এই সমস্যা তৈরি হত না। হুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুভাষ মাহাতো বলেন, ‘‘এই ধরণের কোনও ঘটনার কথা আমার জানা নেই। অফিস খুললে খোঁজ নেব।’’ তবে সুভাষবাবুর মতে, শ্রমিকদের পুজোর দিনগুলিতে কাজ না দিলেই ভাল হতো।

বিডিও (হুড়া) অমিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘অফিস যে দিন ছুটি হয় সে দিন দুপুরে শ্রমিকেরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। আমি পঞ্চায়েতকে বিষয়টি দেখতে বলেছিলাম। কাজ যাতে পিছিয়ে দেওয়া যায় তাও দেখতে বলা হয়েছিল। কোথাও সমন্বয়ের অভাব ঘটেছে।’’ তিনি জানান, কেন এমন হল তা পঞ্চায়েতের কাছে জানতে চাওয়া হবে। পাশাপাশি, ওই শ্রমিকদের কাজও দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন অমিতবাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement