মৃত্যু-মিছিলে আতঙ্ক, স্কুল বন্ধ লাভপুরে

এমনটা প্রথম নয়। তবে এমন মৃত্যু-মিছিল তাঁরা আগে কখনও দেখেননি।ভোট হোক, আর বালি ঘাটের আধিপত্য নিয়ে বোমা-গুলির লড়াই— অতীতে বারেবারেই রক্ত ঝরেছে লাভপুরে। কিন্তু, শুক্রবার ভরদুপুরে লাভপুরে একধাক্কায় আট জনের মৃত্যু ডাকাবুকো অনেকের মনেও ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

লাভপুর শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৭ ০২:১৯
Share:

ঘটনাস্থল: লাভপুরের দরবারপুরের এই জায়গাতেই শুক্রবার দুপুরে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে আট জনের। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

এমনটা প্রথম নয়। তবে এমন মৃত্যু-মিছিল তাঁরা আগে কখনও দেখেননি।

Advertisement

ভোট হোক, আর বালি ঘাটের আধিপত্য নিয়ে বোমা-গুলির লড়াই— অতীতে বারেবারেই রক্ত ঝরেছে লাভপুরে। কিন্তু, শুক্রবার ভরদুপুরে লাভপুরে একধাক্কায় আট জনের মৃত্যু ডাকাবুকো অনেকের মনেও ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও শ্যাওড়াগোড় মেড়ে দাঁড়িয়ে অবৈধ এক বালির ঘাটের সঙ্গে যুক্ত তৃণমূলেরই এক কর্মী জানান, প্রচুর পরিমাণে বারুদ নিয়ে কাজ করা হচ্ছিল বলেই বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল। পুলিশেরও অনুমান, সকলে কাছাকাছি গোল হয়ে বসে বোমা বাঁধছিলেন। কারও এক জনের অসতর্কতায় কোনও ভাবে একটি বোমা ফেটে যায়। মুহূর্তে ফাটে বাকি বোমাগুলিও।

এ দিনের গোলমালের জেরে স্থানীয় দ্বারকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা বাতিল করা হয়। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জওহরলাল দাস জানান, এলাকা অশান্ত থাকায় বহু ছাত্রছাত্রী স্কুলে আসেনি। এ দিন বিভিন্ন ক্লাসের প্রথম মূল্যায়নের পরীক্ষাও ছিল। ছাত্রছাত্রী কম দেখে সেই পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। আজ, শনিবারও স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

জখমদের চিকিৎসা চলছে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে।ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

লাগোয়া ময়ূরাক্ষী নদীর বালিঘাটের দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূলেরই দু’টি গোষ্ঠী দরবারপুরের শোয়েব আলি এবং মীরবাঁধের আহাদুর শেখের বিরোধ চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। এ দিন তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়। সকাল থেকেই দু’পক্ষের বোমাবাজি শুরু হয়। তারই জেরে দরবারপুর গ্রামের মীনারুল শেখের বাড়ির পিছনে বোমা বাঁধা হচ্ছিল। সে সময়েই আচমকা বিস্ফোরণ হয় বলে পুলিশের অনুমান। টেলিফোনে আহাদুর শেখ দাবি করেন, ‘‘দরবারপুরের লোকেরা আমাদের গ্রাম আক্রমণের জন্য সকাল থেকে বোমাবাজি করছিল। তারপর বোমা বাঁধতে গিয়ে ওই কাণ্ড।’’ যদিও তিনি মানছেন, ‘‘দরবারপুরের এক যুবক কয়েক দিন আগে সেখান থেকে বালি পাচার করছিল। তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়াতেই আক্রোশে ওরা আমাদের গ্রাম আক্রমণ করে।’’ বিরোধী শিবিরের শোয়েব আলিও নিজেকে তৃণমূল কর্মী বলে দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মীরবাঁধের লোকেরা এ দিন গ্রামে চড়াও হয়। ওদের বোমাবাজিতেই মৃত্যু-মিছিল!’’

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, মীনারুল শেখের বাড়ির পিছনের দেওয়ালে বিস্ফোরণের ছাপ স্পষ্ট। পড়ে রয়েছে সুতুলির বাণ্ডিল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দেহাংশ। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ঝলছে গিয়েছে গাছের পাতা। বাড়িতে তালা ঝুলছে। গোটা গ্রাম কার্যত পুরুষ শূন্য।

সেই বাম আমল থেকেই লাগোয়া নবগ্রাম, সাওগ্রাম, এগুলিয়া গ্রামে ময়ূরাক্ষীর বালির ঘাটের দখলকে কেন্দ্র করে হতাহতের ঘটনা লেগেই রয়েছে। ২০১০ সালে বালির ঘাটের দখলের সালিশি সভার নামে নবগ্রামের বাড়িতে ঢেকে সিপিএম সমর্থক তিন ভাইকে খুনের অভিযোগ ওঠে লাভপুরের বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। যদিও কখনই সেই অভিযোগ মানেননি মনিরুল। মাসখানেক আগেই বালির ঘাটের দখল ঘিরে দ্বারকা পঞ্চায়েত এলাকারই সাওগ্রামে মনিরুলেরই ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তৃণমূলের ব্লক কমিটির সদস্য লখরিদ শেখকে বোমা মেরে খুন করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।

তৃণমূলের লাভপুর ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তীর দাবি, ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, ‘‘তৃণমূলের দ্বন্দ্বের কোনও ব্যাপারই নেই। সিপিএমের আক্রমণেই ওই ঘটনা।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পল্টু কোঁড়ার পাল্টা দাবি, ‘‘ওই গ্রামে তো দলের সংগঠনই নেই!’’

পুলিশ স্বতোপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করেছে। কাউকে আটক কিংবা গ্রেফতার করা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন