বাহুবলীর ঠিকানা এখন পুরুলিয়ার গোশালা। ছবি: সঙ্গীত নাগ
আগে বাজারের বিভিন্ন দোকান থেকে তোলা নিয়ে চলে যেত। এখন মেজাজ বেশ তিরিক্ষি হয়েছে। এলাকার কিছু বাসিন্দা জানাচ্ছেন, গত বছর পুলিশের লোককেই গুঁতিয়ে দিয়ে সাহস আরও বেড়ে গিয়েছে ‘বাহুবলী’র। অতিষ্ঠ আনাড়াবাসী প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু ষাঁড়কে বাগে আনতে প্রশাসনও বিশেষ কিছু করে উঠতে পারেনি।
ষাঁড়। বাহুবলী একটি প্রকাণ্ড, পূর্ণবয়স্ক ষাঁড়। নামটা দিয়েছেন এলাকার কিছু বাসিন্দাই। আদর করে নয়, রীতিমতো ভয়ে। বড়পর্দায় খ্যাপা হাতিকে বাগে এনেছিলেন নায়ক বাহুবলী। আনাড়ার ষাঁড়ের মতিগতি অনেকটা সেই হাতিরই মতো। আর শক্তি যেন হাতির চেয়েও বেশি— খোদ বাহুবলীর সঙ্গেই তার তুলনা চলে। শিঙের গুঁতো যাঁরা খেয়েছেন, তাঁরা অন্তত তেমনটাই দাবি করছেন।
বাহুবলীর উপদ্রবে পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের রেলশহর আনাড়া এখন তটস্থ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সকাল হতেই সে হাজির হয় বাজারে। একটার পরে একটা দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কলাটা-মূলোটা না পাওয়া পর্যন্ত নড়ার নামই থাকে না। না দিয়ে থাকবেন, এমন বুকের পাটাও নেই অধিকাংশ দোকানদারের। ঘণ্টা খানেক ধরে এ ভাবে ‘তোলাবাজি’ চলে। তার পরে হেলতে দুলতে রওনা দেয় শহরের কোনও মহল্লার দিকে।
এতদূর পর্যন্ত ঠিকই চলছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, গত বছর থেকে বাহুবলী রীতিমতো মারকুটে হয়ে উঠেছে। আনাড়া পুলিশ ফাঁড়ির গাড়ির চালক জিতেন বাউড়িকে বিনা কারনেই ধাওয়া করে গুঁতিয়ে জখম করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার পরে জখম করেছে স্থানীয় বাসিন্দা বাবলু চক্রবর্তী, অসিঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায়, লম্বোদর বাউড়ি-সহ অন্তত জনা দশেককে। অসিঞ্চনবাবুর তো কোমরের হাড়টাই গিয়েছে ভেঙে। তিনি এখন ভর্তি রয়েছেন বাঁকুড়া মেডিক্যালে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, ভাঙচুরের স্বভাবটাও দিন দিন চাগাড় দিয়ে উঠছে বাহুবলীর। প্রায়ই চড়াও হচ্ছে দোকানের সামনে থাকা মোটরবাইক, সাইকেল। বেশ কয়েকটি মোটরবাইকের ডিকি ভেঙেছে সে। ভাঙচুর করেছে কয়েকটি সাইকেল। সম্প্রতি শিং বাগিয়ে তেড়ে গিয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দা সলিল মজুমদারের পণ্যবাহী গাড়ির দিকে। সামনেটা দিয়েছে তুবড়ে।
কী করনীয়, সেটাই এখন বুঝতে পারছেন না এলাকার বাসিন্দারা। আনাড়া বাজারের মিষ্টি-ব্যবসায়ী নিরঞ্জন বেতাল, আনাজ ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ মোদক, ধরণী দে-রা জানাচ্ছেন, আগে খাবারটা খেয়ে চলে যেত বাহুবলী। এখন খরিদ্দারের দিকে তেড়ে যাচ্ছে।
আনাড়া বাজার, বাসস্ট্যান্ড, রেল কলোনি এলাকায় প্রায়ই দেখা মেলে তার। ওই এলাকায় তিনটি স্কুল রয়েছে। শহরের বাসিন্দা, পেশায় রেলকর্মী রাজা বসু, সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘অহেতুক গোঁতাগুতি করছে। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে অভিভাবকেরা ভয়ে ভয়ে থাকেন।’’
রেলকর্মী সংগঠন এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে চিন্তায়— উৎসবের মধ্যে ঢুকে পড়ে সবকিছু পণ্ড না করে বসে বাহুবলী। আনাড়ায় রেলকর্মী সংগঠন মেনস কংগ্রেসের উদ্যোগে এক সপ্তাহের রাজীব গাঁধী উৎসব হয়। আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকে সেটা শুরু হচ্ছে। উৎসবের অন্যতম কর্মকর্তা তথা মেনস কংগ্রেসের নেতা সুব্রত দে জানান, মেলায় যদি ষাঁড়টি ঢুকে উপদ্রব শুরু করে, তাহলে বড়সড় বিপত্তি ঘটতে পারে। একটা বিহিত করার অনুরোধ নিয়ে তাঁরা তাই মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন।
মহকুমাশাসক(রঘুনাথপুর)আকাঙ্খা ভাস্কর বলেন, ‘‘ষাঁড়ের উপদ্রবের কথা আনাড়ার লোকজন জানিয়েছেন। বিডিওকে বলেছি ষাঁড়টিকে ধরে পুরুলিয়া শহরের গোশালায় পাঠিয়ে দিতে।’’
ষাঁড়ের গলায় লাগাম পরাবে কে?
সোমবার বিডিও (পাড়া) অনিরুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বন দফতর ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আশা করছি দিন দুয়েকের মধ্যে ষাঁড়টিকে ধরে ফেলা যাবে।’’