দিনভর হেঁটে তবেই মেলে ভাতা

সরকারি প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। অথচ ব্যাঙ্ক নেই পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার বহু পঞ্চায়েত এলাকায়। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজনের সমস্যার খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ শেষ কিস্তি।মানবাজার ২ ব্লকের বড়কদম গ্রামের বৃদ্ধা খাঁদি মাহাতোকে তাঁর বার্ধক্য ভাতার টাকা তুলতে কৃষ্ণপুর, তিপুরডি গ্রাম পার হয়ে যেতে হয় নেকড়া গ্রামের ব্যাঙ্ক-মিত্রের কাছে। এই রাস্তায় বাস বা ট্রেকার চলে না। হাঁটা ছাড়া গতি নেই।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:১৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

মাথার উপরে ঝলসানো সূর্য। পায়ের নীচে গনগনে পাথুরে পথ। ধুঁকতে ধুঁকতে ব্যাঙ্কে বার্ধক্য ভাতার টাকা আনতে হেঁটে যাচ্ছেন ওঁরা। কখনও সূর্যের প্রখর তেজ, কখনও অঝোর বৃষ্টি কিংবা কনকনে ঠান্ডার মধ্যে এ ভাবেই মাইলের পরে মাইল পথ হেঁটে বছরভর ব্যাঙ্কে যেতে হয় পুরুলিয়া জেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজনকে। কারণ এই জেলার ১৭০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৭৮টিতেই ব্যাঙ্ক নেই।

Advertisement

মানবাজার ২ ব্লকের বড়কদম গ্রামের বৃদ্ধা খাঁদি মাহাতোকে তাঁর বার্ধক্য ভাতার টাকা তুলতে কৃষ্ণপুর, তিপুরডি গ্রাম পার হয়ে যেতে হয় নেকড়া গ্রামের ব্যাঙ্ক-মিত্রের কাছে। এই রাস্তায় বাস বা ট্রেকার চলে না। হাঁটা ছাড়া গতি নেই। খাঁদিদেবীর কথায়, ‘‘স্বামীকে নিয়ে আমাদের দু’জনের সংসার। আমি কাজ না করলে খাবার জোটে না। যে দিন ভাতা তুলতে যাই সকালে বেরিয়ে ঘরে ফিরতে বিকেল গড়িয়ে যায়। রাস্তাঘাট ফাঁকা। পথে কেউ কেড়ে নিলে কিছুই করতে পারব না।’’

একই রকম ভোগান্তির শিকার ছিলেন বাঘমুণ্ডির অযোধ্যা পঞ্চায়েতের বয়স্কেরাও। তবে তাঁদের দুর্ভোগ ঘুচেছে জেলাশাসকের নজরে পড়ায়। সরকারি প্রকল্পের পরিষেবা মানুষ কেমন পাচ্ছেন তা দেখতে গত জুনে অযোধ্যা পাহাড়ে গিয়েছিলেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। জিলিংটাংড় গ্রামের এক বৃদ্ধা জেলাশাসককে জানিয়েছিলেন, পাহাড়ের নীচে ১৮-২০ কিলোমিটার দূরে মাঠা গ্রামে তাঁদের ব্যাঙ্ক। সেখানে ভাতার টাকা তুলতে অনেকখানি পথ হেঁটে যেতে হয়। যেতে-আসতে সারাটা দিন কেটে যায়। এমনও দিন গিয়েছে, অতটা পথ হেঁটে গিয়ে শুনতে হয়েছে, টাকা আসেনি। পাহাড়ের রাঙা, তেলিয়াভাসা-সহ একাধিক গ্রামে মানুষজনের কাছ থেকে একই সমস্যার কথা শুনতে হয় জেলাশাসককে। কারণ, অযোধ্যা পাহাড়ে কোনও ব্যাঙ্ক নেই।

Advertisement

এর পরেই জেলার লিড ব্যাঙ্কের সঙ্গে বৈঠক করে জেলাশাসক জানান, পাহাড়ে কর্মরত ব্যাঙ্কমিত্রেরা এ বার গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস থেকেই ভাতার টাকা দেবেন। বিডিও (বাঘমুণ্ডি) উৎপল দাস মুহুরী জানান, প্রতিমাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অযোধ্যা পঞ্চায়েত অফিস থেকে সপ্তাহে তিন দিন ভাতা প্রাপকদের টাকা দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয়নি জেলার অন্যত্র খাঁদি মাহাতোদের। তাঁদের কী হবে? জেলাশাসক জানান, পাইলট প্রকল্প হিসেবে অযোধ্যা পঞ্চায়েত থেকে অগস্টে শুরু হয়েছে এ ভাবে ভাতা দেওয়া। ব্যাঙ্ক-মিত্রেরা ভাতার টাকা তুলে নিয়ে গিয়ে পঞ্চায়েতে বসেন। তার আগে আশাকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী বা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী অথবা অন্য কোনও মাধ্যমে ভাতা প্রাপকদের কাছে সেই খবর পৌঁছে দেওয়া হয়।

জেলাশাসক বলেন, ‘‘যে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ব্যাঙ্কের দূরত্ব কমবেশি পনেরো কিলোমিটার, সেখানে পঞ্চায়েত অফিস থেকে এ ভাবেই ভাতা দেওয়ার কাজ করা হবে। অযোধ্যায় এই পদ্ধতি কতটা কার্যকর হচ্ছে, তা দেখার পরেই অন্য এলাকায় কাজ শুরু হবে বলে ঠিক করা হয়েছে।’’

লিড ব্যাঙ্কের পুরুলিয়ার ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার সৌরভ সাহা বলেন, ‘‘অযোধ্যা পঞ্চায়েত এলাকা একটি মডেল। জেলার বাকি এলাকাও আমাদের ভাবনার মধ্যে রয়েছে।’’

কবে সেই সুবিধা মেলে, অপেক্ষায় সুরজমণিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন