পাঁচ চিকিৎসকের কেউ নেই, ক্ষোভ

স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসে চিকিৎসককে না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন রোগী ও পরিজনেরা। শুক্রবার বাঘমুণ্ডি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘটনা। গোটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক জন চিকিৎসকও কেন নেই সেই প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঘমুণ্ডি শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:২০
Share:

ফাঁকা: বাঘমুণ্ডির পাথরডি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসে চিকিৎসককে না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন রোগী ও পরিজনেরা। শুক্রবার বাঘমুণ্ডি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘটনা। গোটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক জন চিকিৎসকও কেন নেই সেই প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। কিন্তু উত্তর দিতে পারেননি। উপস্থিত স্বাস্থ্যকর্মীরা। অভিযোগ, গোটা ঘটনাটি জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের ফোনে জানানো হলে তাঁরা আমল দেননি।

Advertisement

এ দিন ঝাড়খণ্ডের চড়া গ্রাম থেকে সাত সকালে অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে বাঘমুণ্ডি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছিলেন বিশাখা পরামাণিক। বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে ঠায় বসে থেকেও চিকিৎসকের দেখা পাননি তাঁরা। আগে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে গিয়েছিলেন বাঘমুণ্ডির যোগেশ্বর কালিন্দী। ওষুধ খেয়েও জ্বর সারেনি। এ দিন ফের এসেছিলেন। তাঁরও অবস্থা হয়েছে একই।

স্থানীয় বাসিন্দা জগদীশ কুমারের দাবি, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঁচ জন চিকিৎসক থাকলেও কখনও একজন, কখনও বড়জোর দু’জনের দেখা মেলে। অভিযোগ, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে নিয়ে ওই চিকিৎসকেরা পালা করে থাকেন। সমস্যায় পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। যে ছ’জন নার্স রয়েছেন, তাঁরাও নিয়মিত থাকেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

বহির্বিভাগের বাইরে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে এ দিন ক্ষোভে ফেটে প়ড়েন চিকিৎসার জন্য আসা মানুষজন। গোটা বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন তাঁদের একাংশ। বিক্ষোভের খবর পেয়ে বিডিও (বাঘমুণ্ডি) অভিষেক বিশ্বাস ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, ‘‘এটা ঘটনা যে এ দিন সকাল থেকেই গোটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক জন চিকিৎসকও নেই। একজন সদরে মিটিং-এ গিয়েছেন। অন্যদের কী হয়েছে জানি না।’’ জেলাশাসককে বিষয়টি জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিডিও।

পরে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে এক জন চিকিৎসক বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ বাঘমুণ্ডি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন।

বাঘমুণ্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘জঙ্গলমহলের ব্লক সদরের স্বাস্থ্যকেন্দ্র এটা। এলাকার মানুষের কাছে আর কোনও বিকল্প নেই। গা ছাড়া মনোভাব এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে যে এক জন চিকিৎসকও সেখানে থাকছেন না। প্রশাসনের এই ঘটনায় ক়ড়া হওয়া দরকার।’’

সম্প্রতি পুরুলিয়া ২ ব্লকের হুটমুড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক থাকেন না বলে অভিযোগ তুলে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া সড়ক অবরোধ করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তারপরে স্বাস্থ্য দফতর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসকদের না থাকার অভিযোগ নিয়ে নড়েচড়ে বসে। তড়িঘড়ি বৈঠক করে নির্দেশও দেওয়া হয়, কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেন এমনটা না ঘটে। সেই নির্দেশের পরেও অবস্থার যে বিশেষ হেরফের হয়নি, এ দিনের ঘটনায় সেটাই ধরা পড়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘বাঘমুণ্ডির ঘটনাটা শুনেছি। প্রত্যন্ত ব্লক বলে পাঁচ জন চিকিৎসক ওখানে রয়েছেন। এ দিন বহির্বিভাগ চালু থাকার সময়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক জনও উপস্থিত ছিলেন না। এক জন মিটিং-এ ছিলেন। বাকিরা কেন যাননি সেটা তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন