বেছে: বাজির দোকানে খুদে। রামপুরহাটে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
অনুমোদিত বাজি পোড়ানোর সময় বেঁধে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। অন্য দিকে নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে বাজি পোড়ানো হলে কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি এসেছে রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সব মিলিয়ে বাজি পোড়ানো কিছু প্রশ্ন আছে সাধারণ নাগরিকের মনে। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ নিয়ে জনসচেতনতা প্রচারে উদ্যোগী হল বীরভূম জেলা পুলিশ।
জেলা পুলিশ সুপার কুণাল আগরওয়াল বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই আদালতের নির্দেশ নিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচার শুরু করেছি। নির্দেশ যাতে পালিত হয়, সেটাও দেখা হবে।’’ তবে আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কতটা কঠোর হবে পুলিশ, তা স্পষ্ট করেননি জেলা পুলিশ সুপার।
জেলা পুলিশের কর্তারা জানিয়েছেন, এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। পোস্টারও সাঁটানো হবে। এ ছাড়া থানার মাধ্যমে প্রতিটি পুজো উদ্যোক্তা, গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও নির্বাচিত সদস্য এবং পুরসভার কাউন্সিলরদের অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে তাঁরা আদালতের নির্দেশ পালনের বিষয়টি নজরে রাখার পাশাপাশি এলাকায় বাজি পোড়ানো সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা নেন। সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশের কাছ থেকে বার্তা পেয়ে আমরা শহরের সমস্ত পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরাও আশ্বাস দিয়েছেন।’’ ঘটনা হল, নির্দিষ্ট শব্দসীমার ঊর্ধ্বে শব্দবাজি আগেই নিষিদ্ধ করেছিল আদালত। দূষণ রুখতে গত ২৩ অক্টোবর আতসবাজিতে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি না করলেও বাজির ব্যবহারে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বেঁধে দেওয়া হয়েছে বাজি পোড়ানোর সময়সীমা। আদালতের নির্দেশ, কালীপুজো ও দিওয়ালিতে রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্তই অনুমোদিত বাজি পোড়ানো যাবে। পরে অবশ্য তামিলনাড়ু সরকারের আবেদনের ভিত্তিতে শীর্ষ আদালত রায় কিছুটা সংশোধন করে। আদালত বলে, কোনও রাজ্য বিবেচনা করে বাজি পোড়ানোর সময় বদল করতে পারে। তবে মোট সময়সীমা কখনই দু’ঘণ্টার বেশি হবে না। কালীপুজো ও দিওয়ালি রাতে হওয়ায় এ রাজ্যে সময় পরিবর্তিত হয়নি।
বাজি বিক্রেতারা বলছেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করার সাহস তাঁদের নেই। তবে যে কোনও কারণেই এ বার বাজার বেশ খারাপ। দুবরাজপুরের এক বাজি বিক্রেতার কথায়, ‘‘এই সময়টায় আতসবাজির প্রচুর বিক্রি হয়। তবে এ বার কালী পুজোয় কেনাকাটায় ভাটা চলছে।’’ সিউড়ি ও রামপুরহাটের দুই বাজি বিক্রেতারও বক্তব্য, বাজির বাজার বেশ খারাপ। আদালতের নির্দেশ মানলে মাত্র দু’ঘণ্টা বাজি ফাটানো যাবে। ওই সময়টুকুর মধ্যে কে কত বাজি ফাটাবেন। ফলে বিক্রি এ বার কমই হবে। বিক্রেতাদের একাংশ আবার আশাবাদী। তাঁদের মতে, যাঁরা বাজি কেনার ঠিকই কিনবেন।
জেলার মানুষ বলছেন, স্বাস্থ্যরক্ষার স্বার্থেই দূষণ কমাতে আদালতের কথা মেনে চলা উচিত। তবে বাস্তবটা ভিন্ন। কারণ, উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আবেগ। ঘড়ির কাঁটায় সেটা বাঁধা কঠিন। সিউড়ি শহরের এক প্রবীণ বাসিন্দা মজা করে বললেন, ‘‘বিকেল ৫টায় সন্ধ্যা নামছে এখন। বাচ্চারা চায় সেই সময় থেকেই তুবড়ি, তারাবাতি রংমশাল, ফুলঝুরি, চরকি নিয়ে বাড়ির ছাদে, উঠোনে বা সামনের রাস্তায় নেমে পড়তে। ছোটদের রাত ৮টা পর্যন্ত ঘরে আটকে রাখাই তো কঠিন!’’
জেলার কিছু থানার ওসি বলে দিচ্ছেন, ‘‘ডিজে কাগজে কলমে বন্ধ। কিন্তু পুরোপুরি কি বন্ধ করা গিয়েছে? বাজির ক্ষেত্রেও নিয়ম মানাতে মধ্যবর্তী পথ নিতে হবে।’’ এক দিকে আবেগ, মানুষের চাহিদা। অন্য দিকে আদালতের নির্দেশ। ভারসাম্য রেখে পুলিশ-প্রশাসন কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়, সেটাই দেখার।