—প্রতীকী ছবি।
ভাটপুকুরের ছাত্রী হেনস্থা বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয় বলেই দাবি করছেন বিষ্ণুপুরের বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, গার্লস স্কুল ও কোচিং সেন্টারের আশপাশে প্রায়শই কিছু ছেলেপুলে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। কিন্তু, ঝামেলার আশঙ্কায় তাঁরা থানা-পুলিশ পর্যন্ত যেতে চান না। কেউ কেউ প্রতিবাদ করেন। তবে, অনেকেই অনেকে মুখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছেন। ভাটপুকুরের ঘটনায় লাঞ্ছিত ছাত্রীর মা সুবিচারের দাবিতে অনড় থাকাতেই শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত ধরা পড়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন। তাঁর এই ব্যতিক্রমী মনোভাবকে অন্য অভিভাবকেরা যেমন কুর্নিস করছেন, তেমনই রোমিওদের দাপট বন্ধে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে তৎপরতাও দাবি করেছেন তাঁরা।
সোমবার বিষ্ণুপুর শহরের ভাটপুকুর এলাকায় টিউশন যাওয়ার পথে এক স্কুল ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে বছর পঞ্চাশের লালু শেখের বিরুদ্ধে। সে পুরসভার যেমন ঠিকাদার, তেমনই শাসকদলের এক নেতার ঘনিষ্ঠ বলেও অভিযোগ। তার সাঙ্গপাঙ্গেরা প্রথমে থানায় অভিযোগ জানাতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ তোলেন ওই ছাত্রীর মা। এমনকি পুলিশও এফআইআর নিতে গড়িমসি করে বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত এসডিও এবং এসডিপিও-র কাছে ছাত্রীটির মা অভিযোগ করেন। তারপরেই পুলিশ মামলা করে। বৃহস্পতিবার গ্রেফতারও হয় অভিযুক্ত।
তাতে স্বস্তি পেয়েছেন অনেক অভিভাবকই। তবে, তাঁদের অভিযোগ, শুধু এক জনকে ধরলেই হবে না। শহরের বিভিন্ন পথঘাটে যারা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে, তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা কড়া শাস্তি দিতে হবে। যাতে, তারা মেয়েদের দিকে তাকাতে ভয় পায়।
অনেক অভিভাবক জানাচ্ছেন, পরিমলদেবী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, শিবদাস সেন্ট্রাল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, কৃত্তিবাস মুখার্জ্জী হাইস্কুলের দরজার বাইরে, সকাল ও বিকেলে কিছু ছেলেপুলে দাঁড়িয়ে থাকে। তারা মেয়েদের উদ্দেশ্যে কটূক্তি ছুঁড়ে দেয়। আবার অনেক সময় স্কুল ছুটির পরে মেয়েদের পিছুও নেয়।
ছাত্রীদের অনেকের বক্তব্য, ‘‘ফাঁকা জায়গায় সহপাঠীরা না থাকলে অনেক সময় ভয় লাগে। বলা যায় না, কখন কী বিপদ ঘটে।’’ এ ছাড়াও গোপালগঞ্জ, মাধবগঞ্জ, কৃষ্ণগঞ্জ, বোলতলা, গোপালপুর, তুর্কি, বিএড কলেজের গলি— প্রভৃতি এলাকাতেও মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ ওঠে।
অভিভাবকদের বক্তব্য, ‘‘স্কুল, টিউশন থেকে নানা কাজে মেয়েদের বাড়ির বাইরে বেরোতে হচ্ছে। সব সময় তাদের পাহারা দিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই মেয়েরা বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত আতঙ্কে থাকতে হয়।’’ পরিমল দেবী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মৌটুসী চন্দ বলেন, ‘‘মাঝে মধ্যেই ছাত্রীরা এসে জানায়, কিছু ছেলে রাস্তায় তাদের বিরক্ত করছে। আমি সে জন্য তাদের ছুটির পরে দল বেঁধে যেতে বলি।’’
এসডিও (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল বলেন, ‘‘মেয়েদের সঙ্গে আর যাতে কেউ দুর্ব্যবহার করার সাহস না পায়, সে জন্য পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরাও নজর রাখছি। স্কুলগুলির সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে।’’
কী ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ?
এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) সুকোমলকান্তি দাস বলেন, ‘‘রোমিওদের রুখতে আমরা আরও কড়া হচ্ছি। সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মীরা স্কুল শুরু, টিফিন এবং ছুটির সময় শহরের বিভিন্ন এলাকায় নজর রাখবেন। কেউ বেচাল হলেই, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’