সাউন্ডবক্সে মৃদুস্বরে বাজছে নহবত। লাল বেনারসী, টোপর, ধান-দুর্ব সহ বিয়ের আসরে সাজানো মঙ্গলিক আচারের নানা জিনিসপত্র। পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে শুভদৃষ্টি, হস্তবন্ধন, মালাবদল, সিঁদুরদান সবই হল রীতি মেনে। বিবাহবাসর পুরুলিয়া জেলা সংশোধনাগার। বুধবার সেখানে মানবাজার থানা এলাকার একই গ্রামের দুই তরুণ-তরুণীর বিয়ে হল।
সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তরুণী গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মানবাজার থানায় অভিযোগ করেন, ওই যুবক বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে সহবাস করেছিলেন। কিন্তু পরে ওই তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় তাঁর প্রেমিক যুবকটি বেঁকে বসেন। তিনি বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় তরুণী প্রেমিকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে মানবাজার থানা যুবকটিকে গ্রেফতার করে। আদালতের নির্দেশে তিনি পুরুলিয়া সংশোধনাগার রয়েছেন। অভিযুক্তের আইনজীবী শুভাশিস সরকার জানিয়েছেন, “অভিযুক্ত যুবক তাঁর প্রেমিকাকে পরে বিয়ে করতে রাজি হন। আদালতে তা জানানো হয়।” তরুণীর আইনজীবী তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “আমরা তরুণীকে তাঁর প্রেমিক বিয়ে করতে সম্মত হয়েছেন বলে জানাই। তিনিও বিয়ে করতে রাজি হন। আদালতের কাছে দু’পক্ষের এই সম্মতির বিষয়টি জানানো হয়। পুরুলিয়া জেলা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক রমাপ্রসাদ ঘোষ দু’পক্ষের সম্মতির কথা জেনে এই বিয়ের নির্দেশ দিয়েছেন।”
পুরোহিত বিরিঞ্চি আচার্য মাঙ্গলিক রীতি মেনে দু’জনের বিয়ের অনুষ্ঠান সারলেন। দু’পক্ষের বাড়ির লোকজন ছাড়াও বিয়ের আসরে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত দায়রা বিচারক রমাপ্রসাদ চক্রবর্তী, সংশোধনাগারের সুপার সুদীপ বসু, জেলার পবিত্র ঢালি প্রমুখ। ছিল মিষ্টিমুখও। বাদ যাননি সংশোধনাগারের সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরাও। তাঁদেরই একজন বলেন, “আমিও একই কারণে বন্দি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই ওই যুবককে পরামর্শ দিই, ভুল বোঝাবুঝি ছেড়ে ওই তরুণীকে বিয়ে করতে। তাতে ও ভাল থাকবে। ও রাজি হওয়ায় ভাল লাগছে।”
তরুণীর বাবা বলেন, “আগেই রাজি হতে পারত। তাহলে থানা-পুলিশ করতে হত না। তবে শেষ পর্যন্ত শান্তিতে বিয়ে হওয়ায় আমরা খুশি।” অভিযুক্তের বাবাও জানিয়েছেন, ওই তরুণীকে তিনি পুত্রবধূর মর্যাদা দিয়ে রাখবেন। বিয়ের শেষে নব দম্পতিও হেসে বলেন, “আর কোনও ভুল বোঝাবুঝি নেই।”