শৌচকর্মে আজও ভরসা পুকুর-নর্দমা

দেশকে ‘নির্মল’ করতে হবে। তার জন্য প্রচার চলছে জোরকদমে। সরকারি ভর্তুকিতে জায়গায় জায়গায় বসছে শৌচাগার। অথচ আজকের দিনেও শৌচকর্মের জন্য ওঁদের ছুটতে হচ্ছে বিভিন্ন পুকুর পাড়ে বা নর্দমার ধারে। না, এই ঘটনা প্রান্তিক কোনও গ্রামের নয়। খোদ জেলার সদর শহর সিউড়িতেই বছরের পরে বছর এমনই অভিজ্ঞতা বাসিন্দাদের।

Advertisement

অরুণ মুখোপাধ্যায়

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৫ ০১:৩৬
Share:

অসম্পূর্ণ ঘর। তৈরি হয়নি শৌচালয়ও। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

দেশকে ‘নির্মল’ করতে হবে। তার জন্য প্রচার চলছে জোরকদমে। সরকারি ভর্তুকিতে জায়গায় জায়গায় বসছে শৌচাগার। অথচ আজকের দিনেও শৌচকর্মের জন্য ওঁদের ছুটতে হচ্ছে বিভিন্ন পুকুর পাড়ে বা নর্দমার ধারে। না, এই ঘটনা প্রান্তিক কোনও গ্রামের নয়। খোদ জেলার সদর শহর সিউড়িতেই বছরের পরে বছর এমনই অভিজ্ঞতা বাসিন্দাদের।

Advertisement

বিভিন্ন ওয়ার্ডের কয়েকশো বাসিন্দার এই দুর্দশার নেপথ্যে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট অংশের বরাবরের উদাসীনতাকেই দুষছেন সিউড়িবাসী। এ নিয়ে অবশ্য জেলা প্রশাসনের শীর্ষ অংশের মধ্যে কোনও হেলদোলই দেখা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করতেই জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী স্পষ্টই বলে দেন, “পুর এলাকার শৌচাগার সমস্যা নিয়ে এখনই কোনও পরিকল্পনা নেই। তবে, বিশেষ করে যে সমস্যার কথা বলছেন, তা সমাধানের দায়িত্ব সিউড়ি পুরসভার।”

ঘটনা হল, ২০১৬ সালের মার্চের মধ্যে বীরভূমের ১৬৭টি পঞ্চায়েতের প্রতিটি বাড়িতে সুলভ ও ব্যবহারযোগ্য শৌচাগার নির্মাণ করার লক্ষ্যে নেমেছে জেলা প্রশাসন। তা নিয়ে পুতুল নাটকের মাধ্যমে শৌচাগারের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গত কয়েক মাস ধরে চেষ্টাও চালানো হয়েছে। তাতে অনেকটা ফল মিলেছে বলে দাবি প্রকল্পের আধিকারিকদের। কিন্তু, বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, গ্রাম ছাড়াও এ নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে শহরাঞ্চলেও। জেলার শহরাঞ্চলের বহু অংশে বাসিন্দারা এখনও বাইরেই শৌচকর্ম সারেন। কখনও আর্থিক অনটনের কারণে, কখনও এ বিষয়ে সচেতনতার অভাবে। তাই এ বার শহরাঞ্চলেও শৌচারগার নির্মাণের ব্যাপারে নজর দেওয়ার দাবি তুলছেন বাসিন্দারা।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, সিউড়ির ১৮টি ওয়ার্ডে ৭৫টি নথিভুক্ত বস্তি রয়েছে। ওই বস্তিগুলির প্রতিটি পরিবারে তিন থেকে ছ’ জন বাসিন্দা রয়েছেন। প্রতিটি বস্তিতে প্রায় ২০টি পরিবার বসবাস করে। কেন্দ্রীয় সরকারের বস্তি উন্নয়নের এক লাখি বাড়ি প্রকল্পে প্রাপকদের বাড়ি ছাড়াও শৌচাগার থাকার কথা। বাড়ি তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই সিউড়ি পুরসভাকে ৫ কোটি টাকা পাঠিয়েও দিয়েছে। পুরসভার দাবি, তা দিয়ে এখনও পর্যন্ত ১৬৫টি বাড়ি নির্মাণ হয়েছে। যদিও অভিযোগ উঠছে যে, ওই তালিকায় থাকা বেশির ভাগ বাড়িই অসম্পূর্ণ। এমনকী, সেই সব বাড়িতে কোনও শৌচাগারও তৈরি করা হয়নি।

এ দিকে, শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দিনমজুর কদম কাহার, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শেখ শফিক, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শেখ কামালরা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ‘নির্মল ভারত অভিযানে’র বিজ্ঞাপনের রকমারি ফ্লেক্স দেখে কেবলই দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। তাঁরা আক্ষেপের সুরে বলছেন, ‘‘বাড়িতে শৌচাগার না থাকার কী লজ্জা, তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাই। সম্ভ্রান্ত প্রতিবেশীদের কটূক্তি সহ্য করতে হয়। বেশির ভাগ বস্তিবাসীকেই শৌচকর্মের জন্যও এলাকার বিভিন্ন পুকুরের পাড় ব্যবহার করতে হয়। তাতে এলাকা দুর্গন্ধে ভরে ওঠে।’’ সরকার বাড়িতে শৌচাগার গড়ে দিলে লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি মিলবে বলেই তাঁদের আশা।

সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর আশ্বাস, ‘‘২০১৬ সালের মধ্যে পুরসভার প্রতিটি বস্তিতেই এক লাখি বাড়ি নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। শৌচাগারও নির্মাণ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন