একমনে: চলছে প্রতিমা তৈরি। মহম্মদবাজারে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
শ্রাবণের ভরা ময়ূরাক্ষীতে নৌকা করে মনসাপুজো দেখতে পরিজনদের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি চলেছিলেন। কোনও ভাবে জলে পড়ে গিয়ে স্রোতের টানে ভাসতে ভাসতে প্রাণরক্ষা হয় দেবীদুর্গার কৃপায়। সেই থেকে লোহাবাজারের সূত্রধর পরিবারে শুরু হয় পুজো। যাকে নিয়ে এই পারিবারিক ইতিহাস— তিনি প্রতাপ সূত্রধর। আনুমানিক ২০০ বছর আগে মহম্মদবাজারের লোহাবাজারের নাম করা কাঠের শিল্পী। কাঠের কাজের সঙ্গে সঙ্গে পুজো পার্বণে মাটির প্রতিমাও করতেন সূত্রধর পরিবার। প্রথমে নিজের তৈরি এক চালার ছোট প্রতিমা করে পুজোর সূত্রপাত করেন তিনি। সেই ট্রাডিশন আজও চলেছে।
প্রতাপ সূত্রধরের পরে গদাধর সূত্রধরের সময় পুজোর জাঁক বাড়ে। সূত্রধরদের তৈরি প্রতিমার কদর বাড়তে থাকে। গদাধরবাবুর পাঁচ ছেলে নবকুমার, অশোককুমার, নিতাই, গৌড় ও মণিকাঞ্চনের হাতেই এখন পুজোর ভার। বাড়ি তো নয় আস্ত কুমারটুলি যেন! এ বছর প্রায় ৬০টি দুর্গা প্রতিমার বরাত পেয়ে ব্যস্ততার সীমা নেই সূত্রধরদের। মন্দির, বারান্দা, কারখানায় চলছে প্রতিমা তৈরি। ফি বারের মতো এ বারেও সিউড়ি, মহম্মদবাজার ছাড়া ঝাড়খণ্ডের বহু এলাকা থেকে প্রতিমা তৈরির বরাত পেয়েছেন ওঁরা। হাত লাগিয়েছেন সবাই। বাবা-কাকাদের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের পলাশ, কুন্দন, সৌভিকরাও বাকি নেই। রং-তুলি নিয়ে ব্যস্ত পরিবারের মেয়ে বিশ্বরূপাও। বায়না করা মূর্তিদের সঙ্গে পারিবারিক ঠাকুরও সাজছে। মহালয়ার পর থেকেই একটা দুটো করে ঠাকুর মণ্ডপে যেতে শুরু করলে বাড়ি ফাঁকা হয়ে যায়। কিন্তু বাড়ির পুজো সেই দুঃখ ভুলিয়ে দেয় সূত্রধর পরিবারের। নিজেদের পুজোর আনন্দে কেটে যায় পুজোর দিনগুলো।
বাড়ির বৌ কণিকা সূত্রধর করেন পুজোর জোগাড়। মাধবী, শ্যামলী সূত্রধররা হেঁসেল সামলান। আত্মীয় পরিজনে জমজমাট ক’টা দিন কাটে আনন্দে। একাদশীর সন্ধায় প্রথা মতো দেবী যান নিরঞ্জনের পথে। যদিও এ বার বিসর্জন দ্বাদশীতে। এলাকার চারটি প্রতিমা মাঠে এসে দাঁড়ালে তাকে ঘিরে ছোট্ট একবেলার মেলা আর রাতভোর পঞ্চরস, কবিগানের আসর। পুজোর আনন্দটুকু সম্বল করে আবার লেগে পড়েন প্রতিমা তৈরিতে।