একটি বেসরকারি প্রাইমারি স্কুলের বেশ কয়েকজন শিক্ষককে একসঙ্গে অপসারণের চিঠি ধরিয়ে দেওয়ায় অশান্তি পাকিয়েছে মানবাজারে। শিক্ষকদের একাংশ তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। অন্যদিকে, স্কুল ক়র্তৃপক্ষের দাবি, কিছু শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা ভুল ছিল। তাই তাঁদের অপসারণ করা হয়েছে।
মানবাজার-পুরুলিয়া রাস্তায় ইন্দকুড়ির কাছে ছোটোদের এই স্কুলটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে। গত ৭ মে স্কুল চলাকালীন ক্লাসঘরে একটি পাখা পড়ে যায়। আহত হয় এক পড়ুয়া। এই ঘটনাকে ঘিরে শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির মধ্যে দ্বন্দ্ব বাধে। শিক্ষকদের একাংশ পাখা খুলে যাওয়ার জন্য অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছিলেন। দু’পক্ষের সংঘাতের জেরে স্কুলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। স্কুল পরিচালন সমিতির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে স্কুলে সেই সময় বিক্ষোভ চলে, সাঁটানো হয় পোস্টারও। কর্তৃপক্ষ স্কুলে গরমের ছুটি ঘোষণা করে।
এরই মধ্যে বুধবার শিক্ষকদের স্কুল কর্তৃপক্ষ ডেকে পাঠায়। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষকদের দাবি, ১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে মুখ বন্ধ খামে তাঁদের অপসারণ করা হয়েছে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান। তাঁদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ স্কুলের নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছেন। সেই সঙ্গে ওই পাখা খুলে পড়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্কুল পরিচালন সমিতির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরিতে মদত দেওয়ারও অভিযোগ আনা হয়েছে। এই কারণে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁদের আজ বৃহস্পতিবার থেকে স্কুল আসতে নিষেধ করেছেন।
ওই স্কুলে দিবা ও প্রাতঃবিভাগে মোট ১৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ায় অভিভাবকদের মধ্যে ছেলেদের ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
যদিও ওই শিক্ষকদের দাবি, স্কুল কমিটির স্বেচ্ছাচারিতা, রেজিস্ট্রেশন না থাকা, দীর্ঘকাল স্কুলের অডিট না হওয়া, স্কুলের আয়ব্যয় নিয়ে অস্বচ্ছতা— এ রকম বেশ কিছু অভিযোগ নিয়ে মুখ খোলায় বিরাগভাজন হয়ে স্কুল কমিটি অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁরা স্থানীয় তৃণমূল নেতা মানবেন্দ্র চক্রবর্তীর কাছে যান। তিনি বলেন, ‘‘অপসারণের চিঠি পাওয়া কয়েকজন শিক্ষক আমার কাছে এসেছিলেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ভাবে তাঁদের অপসারিত করতে পারেন না। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ থাকলে আগে তাদের শো-কজ করতে হবে। শিক্ষকরা তার জবাব দেবেন। সেই জবাবে সন্তুষ্ট না হলে তারপর অন্য ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এ ভাবে সরানো যায় না।’’
খবর পেয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক সন্ধ্যারানি টুডুও। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি বা বেসরকারি স্কুল যাই হোক, সবাইকে স্কুল চালাতে গেলে সরকারি নিয়ম মানতে হবে। গুরুতর অপরাধ না করলে একসাথে এতজন শিক্ষক- শিক্ষিকাকে কর্মচ্যুত করা যায় না। স্কুল কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানাব।’’
স্কুল কমিটির সম্পাদক দিলীপ মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘শিক্ষকদের একাংশ স্কুলের নিয়ম শৃঙ্খলা মানছেন না বলে কয়েকজনকে অপসারিত করা হয়েছে। বাকিদের শো-কজের করেছি। কয়েকজন শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতার ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে জবাব চেয়েও পাইনি। পরে উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।’’