পাড়ার মিলন পাঠাগার

টেন্ডার নিয়ে জট, ভিজছে বই

পাঠাগারের নতুন ভবনের জন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছে বছর তিনেক আগে। কিন্তু সেই টাকা কী ভাবে খরচ করা হবে, তা নিয়ে জটিলতায় ভবন নির্মাণ এখন বিশবাঁও জলে। ফলে বেহাল হয়ে পড়া ভবনেই চলছে পাঠাগার। ছাদ থেকে চুঁইয়ে পড়া জলে ক্ষতি হচ্ছে বইয়ের! পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের উদয়পুর-জয়নগর পঞ্চায়েতের মিলন পাঠাগারের এমন অবস্থা দেখে তৈরি হয়েছে ক্ষোভও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৬ ০০:৪১
Share:

পাঠাগারের নতুন ভবনের জন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছে বছর তিনেক আগে। কিন্তু সেই টাকা কী ভাবে খরচ করা হবে, তা নিয়ে জটিলতায় ভবন নির্মাণ এখন বিশবাঁও জলে। ফলে বেহাল হয়ে পড়া ভবনেই চলছে পাঠাগার। ছাদ থেকে চুঁইয়ে পড়া জলে ক্ষতি হচ্ছে বইয়ের! পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের উদয়পুর-জয়নগর পঞ্চায়েতের মিলন পাঠাগারের এমন অবস্থা দেখে তৈরি হয়েছে ক্ষোভও।

Advertisement

পাড়া ব্লকের অন্যতম বড় এই গ্রন্থাগারের নতুন ভবন তৈরির জন্য ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১৫ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করে জনশিক্ষা দফতর। ২০১৪ সালের শুরুতে ভবন তৈরির জন্য টেন্ডার ডাকে গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতি। নিয়ম মতো ন্যূনতম তিনটি সংস্থা বা ব্যক্তি টেন্ডার জমা না করায় সেই টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল হয়। এরপরে পাঠাগারের পরিচালন সমিতির রদবদলের জেরে নতুন ভাবে টেন্ডার ডাকার কাজ পিছিয়ে যায়। পরিচালন সমিতির নতুন সম্পাদক সুবলচন্দ্র দাস যখন ফের টেন্ডার ডাকার কাজ শুরু করেছিলেন তখন পাল্টে যায় নিয়ম। কেমন? রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, পুরানো পদ্ধতি বদলে ই-টেন্ডার ডাকতে হবে। ব্লক প্রশাসন সেই পদ্ধতির কথা ওই পাঠাগারকে জানিয়ে দেয়। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে তারা ই-টেন্ডার করতে পারবে না বলে জানায়। সেই থেকে শুরু প্রশাসনিক জটিলতার।

পাঠাগারের সম্পাদক সুবলচন্দ্র দাস জানান, এই অবস্থায় পাঠাগারের হয়ে ব্লক প্রশাসনকে ই-টেন্ডার ডাকতে অনুরোধ করা হয়। তখন শর্ত হিসাবে ব্লক প্রশাসন পাঠাগারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থ তাদের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করতে বলে। তাতে রাজি হয়নি পাঠাগার। আর তেমনটা না হলে ই-টেন্ডারে রাজি হয়নি প্রশাসনই।

Advertisement

জট পেকেছে সেখানেই! তৈরি হয়েছে টাকা ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা। পাঠাগার সূত্রের খবর, এই গ্রন্থাগারে কোনও স্থায়ী গ্রন্থাগারিক নেই। যিনি দায়িত্বে রয়েছেন, তিনি আরও দু’টি গ্রন্থাগার সামলান। ফলে অতিরিক্ত সময় বের করে সমাধান সূত্র খোঁজা যাচ্ছে না বলে দাবি পরিচালন সমিতির। তা হলে কি টাকা ফেরত যাওয়াই ভবিতব্য?

গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির মতে এর একটাই সমাধান সূত্র রয়েছে। সেটি হল, স্বয়ং বিডিও যদি উদ্যোগী হন! সুবলবাবুর কথায়, ‘‘পাঠাগার পরিচালনায় ফাইভ ম্যান কমিটি রয়েছে। যার চেয়ারম্যান বিডিও নিজেই। তিনি ই-টেন্ডার ডাকারও অধিকারী। বইয়ের স্বার্থে, পাঠকদের স্বার্থে আমরা পাঠাগারের জন্যে ই-টেন্ডার ডাকার আর্জি জানিয়েছি।’’

কী করবেন?

জবাবে পাড়ার বিডিও সমীরণ বারিক বলেন, ‘‘ব্লক প্রশাসন ওই পাঠাগারের নতুন ভবনের জন্যে ই-টেন্ডার ডাকতেই পারে, কিন্তু তার আগে গ্রন্থাগারের অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থ ব্লক প্রশাসনের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে হবে। না হলে কী করে সম্ভব?” পাল্টা বক্তব্য হাজির করেছেন গ্রন্থাগার সমিতিও। তাঁদের কথায়, ‘‘পুরুলিয়া ২ ব্লকের একটি গ্রন্থাগারে তো এমন করেই ই-টেন্ডার ডাকা হয়েছে। এখানে তেমনটা করা কেন সম্ভব হচ্ছে না!’’

এই তরজাই কি চলবে? মন্তব্য করতে চাননি পুরুলিয়া জেলা গ্রন্থাগারিক মনোরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। তিনি শুধু বলেন,‘‘সমস্যাটা দেখা হচ্ছে।” কোনও যুক্তি-তর্কে যেতে চান না পাঠকেরা। তাঁদের আর্জি, ‘‘যে কোনও উপায় দ্রুত পাঠাগার সংস্কার করা হোক। না হলে নষ্ট হবে হাজারও বই। সে ক্ষতি কে পূরণ করবে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement