একশো দিনে গতি বাড়ানো নিয়ে সংশয়

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০০টি কর্মদিবসের পঞ্চাশটিই হতো পুকুর সংস্কার থেকে। পুরুলিয়ার মতো রুক্ষ না হলেও বীরভূমেও জলকষ্ট রয়েছে। বিশেষ করে খয়রাশোল, রাজনগর, মহম্মদবাজার ও দুবরাজপুরের একটা বড় অংশ শুষ্ক। কয়েক বছরে পুকুর সংস্কার করেই কর্মদিবসে ভারসাম্য বজায় থাকত। পরিস্থিতির আঁচ পেতে একটি পরিসংখ্যানই যথেষ্ট।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৭ ০০:১০
Share:

এ যেন শাঁখের করাত।

Advertisement

এক দিকে, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে ব্যক্তিগত কিংবা শরিকি মালিকানার জমিতে কাজ না করানোর নির্দেশিকা। অন্য দিকে, একশো দিনের কাজে দ্রুত কর্মদিবস বাড়ানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ। কাজের গতি বাড়াতে সেই বিকল্প পথের সন্ধান করছে বীরভূম জেলা প্রশাসন। কিন্তু সেটা কী, এখনও হাতড়াচ্ছে প্রশাসন।

গত বছরের নভেম্বরে ওই নির্দেশিকা আসার পরই গতি কমে গিয়েছে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে। কারণ, ১০০ দিনের কাজের একটা বড় অংশের কর্মদিবস তৈরি হয় পুকুর সংস্কার থেকে। যার ৯০ শতাংশের বেশি ব্যক্তি মালিকানার অথবা শরিকি। সরকারি জমিতে জলাশয় মাত্র ৭-৮ শতাংশ। এক ধাক্কায় এ কাজ বন্ধ হওয়ায় কী ভাবে কর্মদিবস বাড়ানো যায়, তা নিয়ে চিন্তায় প্রশাসন। রক্তচাপ বাড়িয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কর্মদিবস বাড়ানোর নির্দেশও। জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলছেন, ‘‘ব্যক্তিগত বা শরিকি মালিকানার জমিতে কাজ না করানোয় গতি কমে গিয়েছিল। এ বার বিকল্প পথে কী ভাবে কাজের গতি বাড়ানো যায় সেটা দেখছি।’’

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০০টি কর্মদিবসের পঞ্চাশটিই হতো পুকুর সংস্কার থেকে। পুরুলিয়ার মতো রুক্ষ না হলেও বীরভূমেও জলকষ্ট রয়েছে। বিশেষ করে খয়রাশোল, রাজনগর, মহম্মদবাজার ও দুবরাজপুরের একটা বড় অংশ শুষ্ক। কয়েক বছরে পুকুর সংস্কার করেই কর্মদিবসে ভারসাম্য বজায় থাকত। পরিস্থিতির আঁচ পেতে একটি পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। নির্দেশিকা আসার আগেই জেলার ১৬৭টি পঞ্চায়েত এলাকায় মোট হাপা, পুকুর, বিল মিলিয়ে ৩৬০০০ জলাশয় পূর্ণ সংস্কার হয়েছে। বাকি ২০টি কর্মদিবস সৃষ্টি হতো রাস্তা তৈরি, বৃক্ষরোপণ থেকে আরও ২০টি এবং আরও নানা ভাবে বাকি ১০টি কর্মদিবস সৃষ্টি হয়ে এসেছে। কিন্তু নতুন ফরমানে পুকুর সংস্কার বন্ধ। সরকারি পুকুরের সংখ্যা তো নগন্য। যদিও ব্যক্তিগত বা শরিকি মালিকানায় থাকা জমিতে নতুন পুকুর খনন করতে বাধা নেই।

জেলা প্রশাসন দুটি বিষয়ে জোর দিতে চাইছে। এক, জেলার ময়ূরাক্ষী ক্যানাল সেচ এলাকায় থাকা বিভিন্ন সেচখাল সংস্কার। এবং বৃক্ষরোপণ। ঠিক হয়েছে, এই অর্থেবর্ষে মোট ১২২ কিলোমিটার খাল সংস্কার করা হবে। অন্য দিকে, ১২২ কিমি রাস্তার দুটি পাশে গাছ লাগানো হবে। গাছ বাঁচাতে বৃক্ষ পাট্টা দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। এ পর্যন্ত গড়ে ২৩ দিন কাজ হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে ডিসেম্বরের মধ্য সংখ্যাটা ৫২-য় পৌঁছে দেওয়া প্রশাসনের লক্ষ্য। কিন্তু তাতেও পুকুর সংস্কারের মতো কর্মদিবস সৃষ্টি করা সম্ভব হবে কি না, সংশয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ।

আরও একটি প্রশ্ন উঠছে। কাজ না করেই এই প্রকল্পে টাকা উঠে যাওয়া, জব কার্ড ভাড়া দেওয়ার মতো নানা অভিযোগ আছেই। তা ছাড়া সেচখাল সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ কী এই প্রকল্পে সফল ভাবে করা যাবে? অন্য দিকে, গাছ লাগালেও গাছ বাঁচানো খুব কঠিন। প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, ‘‘এখন ‘মোবাইল ভুবন’ অ্যাপস-এ জিওট্যাগের মাধ্যমে নজরদারি চালানো বাধ্যতামূলক। বীরভূম সেটা কার্যকর করেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement