কন্যাশ্রীদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় প্রকল্প

কন্যাশ্রী প্রকল্পে থাকা মেয়েরা ১৭৩টি কন্যাশ্রী ক্লাব গড়ে ইতিমধ্যেই নানা রকম সামাজিক কাজকর্মে বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছে। কন্যাশ্রী ফুটবলেও তাঁদের দক্ষতার পরিচয় পেয়েছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৭ ০৯:০০
Share:

নজরে: পুরুলিয়ায় কন্যাশ্রী দিবসের অনুষ্ঠানে। ছবি: সুজিত মাহাতো

এত দিন লক্ষ্য ছিল স্কুল ছাড়িয়ে যেন তাদের বিয়ের পিঁড়েতে বসানো না হয়। এ বার যোগ হচ্ছে, তাদের আত্মবিশ্বাসী করার চেষ্টাও। সে জন্য কন্যাশ্রীদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে খুঁজে বের করে আনতে প্রশিক্ষণ দিতে উদ্যোগী হল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। শুক্রবার কন্যাশ্রী দিবসের মঞ্চ থেকে মেয়েদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে প্রকল্পের কথা ঘোষণা করল প্রশাসন। জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘এরাও যে অনেক কিছু করতে পারে, সেই আত্মবিশ্বাসের বীজ তাদের মধ্যে বুনতে চাই। তাই কন্যাশ্রীদের স্বাবলম্বী করার কাজ শুরু হল।’’

Advertisement

কন্যাশ্রী প্রকল্পে থাকা মেয়েরা ১৭৩টি কন্যাশ্রী ক্লাব গড়ে ইতিমধ্যেই নানা রকম সামাজিক কাজকর্মে বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছে। কন্যাশ্রী ফুটবলেও তাঁদের দক্ষতার পরিচয় পেয়েছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। এ বার সেই মেয়েদের আরও আত্মবিশ্বাসী ভূমিকায় দেখতে চাইছে প্রশাসন। এ দিন আত্মপ্রকাশ করল কন্যাশ্রীদের নিজস্ব ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘‘আমরা ও তাঁরা’। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) উত্তমকুমার অধিকারী জানান, কন্যাশ্রীরা তাদের ভাবনা, তাদের অভিজ্ঞতা নিজেরাই লিখছে এই পত্রিকায়। নাবালিকা বিয়ে রোখা থেকে স্কুলছুট কোনও মেয়েকে ফের স্কুলে ভর্তি করা, কিংবা বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যায় অন্বেষা ক্লিনিকের সহায়তা কী ভাবে মিলতে পারে, সেই অভিজ্ঞতা ও তথ্যের উল্লেখ থাকছে এই পত্রিকায়।

মেয়েদের পাশে দাঁড়াতে এ দিন ‘উত্তরণ’ নামে একটি অ্যাপ চালু করল প্রশাসন। গুগল প্লে স্টোর থেকে মোবাইলে এই অ্যাপ ডাউনলোড করা যাচ্ছে। ওই অ্যাপ থেকে পকসো আইন কী, নিরাপত্তার কোনও সমস্যা হলে কোথায় গেলে আইনি সহায়তা পাবে, বয়ঃসন্ধিকালীন কোনও সমস্যায় কোথায় গেলে সহায়তা মিলবে সে সব খবর মিলবে। এ ছাড়া কোনও পাঠক্রমে পড়তে চাইলে, কোথা থেকে তথ্য মিলতে পারে, তাও জানা যাবে ওই অ্যাপ থেকে। এ ছাড়া কন্যাশ্রীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে প্রশাসনের কোথায় গেলে কী ধরনের সাহায্য মিলবে, জানা যাবে এই সমস্ত তথ্যও।

Advertisement

এ দিনই প্রকাশিত হয়েছে কন্যাশ্রী ক্লাবের বছরভর নানা কাজের ক্যালেন্ডার ও ক্লাবের নির্দেশিকা।

ইতিমধ্যেই ইউনিসেফের সহায়তায় পুঞ্চার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা একটি রেডিও স্টেশন গড়ে তুলেছে। এই রেডিও স্টেশনে রেডিও-জকির কাজ করবে কন্যাশ্রীর মেয়েরা। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, ‘‘কন্যাশ্রী বেতার সভা নামে এই এফএম রেডিও স্টেশন থেকে রেডিও-জকির কাজ মেয়েদের কাছে অন্য দিগন্ত খুলে দিতে পারে। প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর থেকে মেয়েদের স্বাবলম্বী করতে যে সব প্রশিক্ষণ রয়েছে, সেখানে পরবর্তীকালে কন্যাশ্রীদের যুক্ত করা হবে। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে সফল মেয়েদের প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে। যোগ্যতা সম্পন্ন মেয়েদের তথ্য-প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’’

প্রশাসন সূত্রে খবর, খেলাধুলার ক্ষেত্রেও মেয়েদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনাও রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা থেকে প্রতিভাবান মেয়েদের খুঁজে উন্নতি করার সুযোগ দেওয়া হবে। কাশীপুরে মহিলা ফুটবল অ্যাকাডেমি গড়ে উঠছে। সেখানে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তিরন্দাজি, ভারত্তোলন-সহ অন্যান্য খেলায় প্রতিভাবানদের সামনের সারিতে তুলে আনাই লক্ষ্য। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, ‘‘১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সি মেয়েরাই কন্যাশ্রীর আওতায় রয়েছে। তার পরেও যাতে তারা যাতে স্বাবলম্বী হতে পারে, সে জন্য প্রশাসনের সাহায্যের হাত বাড়ানো থাকছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন