আপাতত: ছররা স্টেশন লাগোয়া এই জমিতে মাঝে মধ্যে ফেলা হয় পুরসভার জঞ্জাল। ছবি: সুজিত মাহাতো
আবর্জনার গেরো কাটছে না পুরুলিয়া পুরসভার।
গত নভেম্বরে জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরুলিয়া এবং রঘুনাথপুরের সাফাই নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। নির্দেশ দিয়েছিলেন এই ব্যাপারে পদক্ষেপ করার। তার পরে জমির সংক্রান্ত জট ছাড়ানোর কাজ কিছুটা হয়েছে রঘুনাথপুরে। ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য বাছা হয়েছে নতুন জমি। কী অবস্থা পুরুলিয়ার?
শহরের আবর্জনা তুলে ফেলা হবে কোথায়, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও নেই পুরুলিয়া পুরসভার কাছে। এক এক বার সমাধানের আশা দেখা দিয়েছে। আবার ডুবে গিয়েছে বিশ বাঁও জলে। বর্তমানে পুরসভা হন্যে হয়ে জমির খোঁজ করে চলেছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের চৌহদ্দি ছোট থাকাকালীন আবর্জনা নিয়ে গিয়ে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া জাতীয় সড়কের পাশে ফেলা হত। কিছু ফেলা হত পুরুলিয়া-জামশেদপুর জাতীয় সড়কের পাশে দুলমি এলাকায়। পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কের পাশে গোশালা লেভেল ক্রসিংয়ের অদূরেও শহরের জঞ্জালের কিছুটা নিয়ে গিয়ে ফেলে আসা হত।
আড়ে-বহরে বাড়ছে শহর। বাড়ছে আবর্জনার পরিমাণ। যেখানে আবর্জনা ফেলা হত, সেখানে গজিয়ে উঠেছে ঘরদোর। এলাকার মানুষজন আবর্জনা ফেলায় আপত্তি তুলছেন। মুশকিলে পড়েছে পুরসভা। পুরপ্রধান সামিমদাদ খান বলেন, ‘‘যেখানে আবর্জনা ফেলা হত, সেগুলি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। সমস্য়ার সূত্রপাত সেখান থেকেই।’’ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিল পুরসভা। আবর্জনা ফেলার জন্য বছর দুয়েক আগে জেলা প্রশাসন শহরের বাইরে ছড়রায় পুরসভাকে প্রায় এক একর জমি দেয়। কিন্তু সেই জমিতে কোনও সীমানা পাঁচিল না থাকায় আবর্জনা ফেলা শুরু করতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ আপত্তি তোলেন। তাঁদের অভিযোগ, আবর্জনা যত্রতত্র উড়ে বেড়াচ্ছে। এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
এরই মধ্যে ছড়রার জমিতে পাঁচিল দেওয়ার জন্য টাকা বরাদ্দ করে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। কাজের দায়িত্ব পায় মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইরেক্টরেট (এমইডি)। এমইডির পুরুলিয়ার দায়িত্বে থাকা সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার সুবীর নাগ জানান, প্রায় ১ কোটি ১১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়ে কাজ শেষ করে ফেলা হয়েছে। শুধু রংটা করা বাকি। এমন সময়ে আবার গেরো। নির্দেশ আসে, ওই জমিতে আবর্জনা ফেলা যাবে না।
কেন? জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে জমি দেওয়া হয়েছিল তার অদূরেই রয়েছে ছড়রার পরিত্যক্ত এয়ারস্ট্রিপ। সেটি সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। ঢোকার মুখেই জঞ্জাল ফেলে রাখাটা দৃষ্টিকটূ বলে পুরসভাকে বলা হয়েছে আবর্জনার বন্দোবস্ত অন্যত্র করতে। মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে জেলা প্রশাসন এই সমস্যার কথা জানিয়েছিল। পুরপ্রধান সামিমদাদ খান বলেন, ‘‘আমরা বিকল্প জমির জন্য আবেদনও করেছি। কিন্তু এখনও পাওয়া যায়নি।’’
এই পরিস্থিতিতে শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়মিত আবর্জনা সাফাই হচ্ছে না বলে অভিযোগ। সাহেববাঁধ রোড, ডিগুডিপাড়া, নীলকুঠিডাঙা, বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া এলাকা—বিভিন্ন জায়গায় আবর্জনা জমে থাকছে বলে মেনে নিচ্ছেন শাসকদলেরই কাউন্সিলর রবিশঙ্কর দাস, বিভাস দাসেরা। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘জমি দেখা হচ্ছে। শীঘ্রই সমাধান হয়ে যাবে।’’